ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নড়াইলে করোনা পরীক্ষার ল্যাব না থাকায় চরম ভোগান্তি

প্রকাশিত: ২০:১৬, ৪ জুলাই ২০২০

নড়াইলে করোনা পরীক্ষার ল্যাব না থাকায় চরম ভোগান্তি

নিজস্ব সংবাদদাতা, নড়াইল, ৩ জুলাই ॥ কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ছাড়াই চলছে চিকিৎসা। এখানে করোনা শনাক্তের কোন ব্যবস্থা না থাকায় স্যাম্পল কালেকশন করে খুলনা, কুষ্টিয়া অথবা যশোরে পাঠালেও সময়মতো পরীক্ষা না করার ফলে অনেক স্যাম্পল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে করোনাভাইরাস শনাক্ত ও চিকিৎসায় নড়াইলের জনগণ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। এছাড়া শ্বাসকষ্টের রোগীদের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় হাইফ্লো অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ-এর সঙ্গে রক্তের প্লাজমা থেরাপি দেয়ার কোন ব্যবস্থাই নড়াইলের সরকারী-বেসরকারী কোন হাসপাতালে নেই। মৃদু করোনা উপসর্গের রোগীদের প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা সদর হাসপাতালসহ জেলার অন্য দুটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হলেও বাকিদের খুলনা বা ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। ফলে রোগী এবং স্বজনদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। তবে, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা সংক্রান্ত এসব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদন অনুসারে জানা যায়, ১ জুলাই পর্যন্ত নড়াইলে করোনা আক্রান্ত ১৯৮ জনের মধ্যে ৭ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। সরকারী-বেসরকারী মিলিয়ে জেলায় ৩০ চিকিৎসক এবং ৩৮ নার্স কোভিড-১৯ এ আক্রান্তদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। জানা গেছে, নড়াইল সদর হাসপাতালে সংক্রামক ওয়ার্ডে করোনা সাসপেকটেড রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আর ঠিক তার পেছনের কেবিন ভবনের ৪টি বেডে করোনা পজিটিভ রোগীদের চিকিৎসা সেবা চলছে। নড়াইল সদর হাসপাতালের মোট ২০টি বেড, পৌরসভার ডুমুরতলা এলাকায় সরকারী টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারকে কোভিড বিশেষায়িত হাসপাতাল ঘোষণা করে ১০০টিসহ জেলায় সরকারী-বেসরকারী মলিয়ে সর্বমোট ১শ’ ৯০টি বেড প্রস্তুত রয়েছে। তবে, কোভিডে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য কেন্দ্রীয় অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ বা এনআইসিইউর ব্যবস্থা নেই। করোনায় আক্রান্ত সদর উপজেলার কামাল প্রতাপ গ্রামের হুমায়ুন কবীর অভিযোগ করে বলেন, গত মাসের প্রথম সপ্তাহে নয়নের জ্বর ও শ্বাসকষ্ট হলে সদর হাসপাতালে ভর্তি করি। হাসপাতালের সবাই খুবই অমানবিক আচরণ করে। একদিন রাতে শ্বাসকষ্ট হলে কেউ কাছে আসেনি। নার্সদের ডাকলে রাগ করেছে। একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার দেখিয়ে দেয় কিন্তু তাতে কোন অক্সিজেন ছিল না। পরে নয়নকে এখান থেকে নিয়ে ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখানে সে চিকিৎসা নিচ্ছে এবং বর্তমানে ভাল আছে। নড়াইল সদর হাসপাতালে কর্মরত একজন স্বাস্থ্য কর্মী জানান, সাধারণত দূর থেকেই হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়। তাদের প্রয়োজনীয় ওষুধ ও খাবার রেখে আসা হয়। এছাড়া অক্সিজেন সিলিন্ডার দেয়া আছে। রোগীরা প্রয়োজনমতো তা ব্যবহার করেন। এ্যান্টিবায়োটিক, ফেক্সোসহ প্রচলিত ওষুধ দিয়েই করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা করা হয়। উন্নত সুবিধা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলেই রোগীকে বড় হাসপাতালগুলোতে পাঠানো হয়। বিশ্বে আলোচিত রেমডিসিভির ওষুধের ব্যবহার করা হয় না। সাধারণত করোনা আক্রান্ত রোগীদের সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ডাক্তার এবং নার্সরাই চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। মানবাধিকার কর্মী ও জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী হাফিজুর রহমান বলেন, সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মোর্তজা গত ১২ এপ্রিল এক ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর নিকট নড়াইল সদর হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপনের অনুরোধ করেন। প্রধানমন্ত্রী গত ২ জুন সারাদেশের জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা চালুর নির্দেশ দেন। অথচ এখন পর্যন্ত অবহেলিত নড়াইলে কোন কিছুই দৃশ্যমান হয়নি। নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মোর্তজার হাতে গড়া নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন করোনাকালে মেডিক্যাল ক্যাম্পের মাধ্যমে জেলার গ্রামাঞ্চলের রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানসহ বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করেছে। ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম অনিকের মা গত ২৬ জুন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তরিকুল ইসলাম অনিক এক ফেসবুক বার্তায় জানান, ‘আমার মায়ের দুইবার স্যাম্পল কালেক্ট করা হয়। যদিও প্রথমবার যে স্যাম্পল কালেক্ট করে যশোর ল্যাবে পাঠিয়েছিলেন, চারদিন পর জানতে পারি তা নষ্ট হবার কারণে পরীক্ষা করা যায়নি। যশোর ল্যাবের চরম দায়িত্বহীনতার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। ২৫ তারিখ দ্বিতীয়বার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। মায়ের মৃত্যুর পর ২৬ তারিখ রাতে জানানো হয় আমার মা করোনা পজিটিভ ছিলেন।’ নড়াইল সদর হাসপাতালের আরএমও ডাঃ মশিউর রহমান বাবু বলেন, আমাদের সাধ্যমতো রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। এখানে কর্তব্যরত সকল ডাক্তারসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা রোস্টার অনুযায়ী রোগী দেখেন এবং বিধি মোতাবেক কোয়ারেন্টাইনে থাকেন। আমাদের হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে। তবে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ বা এনআইসিইউ নাই। নড়াইলের সিভিল সার্জন ডাঃ আবদুল মোমেন বলেন, করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারীতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলায় মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
×