ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ধরা পড়ে চুনোপুঁটি

থামছে না ইয়াবার আগ্রাসন

প্রকাশিত: ২০:১৪, ৪ জুলাই ২০২০

থামছে না ইয়াবার আগ্রাসন

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ করোনা পরিস্থিতিকে পুঁজি করে এক শ্রেণীর মাদক কারবারি প্রতিদিন ইয়াবার চালান ঢুকাচ্ছে দেশে। সীমান্তে হঠাৎ করে ইয়াবার আগ্রাসন বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সচেতন মহল। উখিয়া টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা ও ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে চলছে ইয়াবার রমরমা বাণিজ্য। জানা গেছে, গত তিন দিনে টেকনাফ, উখিয়া ও ঘুমধুমে র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে ছয় লক্ষাধিক ইয়াবা উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে দুই লাখ পিস ঘুমধুম ও পার্শ্বস্ত এলাকা থাইংখালী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী আটক করেছে মহিলা, রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকার ১৪ কারবারিকে। উল্লেখ্য, সীমান্তে হঠাৎ করে ইয়াবা বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় খোদ ভাবিয়ে তুলেছে প্রশাসনকেও। পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ধৃত চুনোপুঁটি ছাড়াও এসব চালানের পেছনে গডফাদার কারা-খুঁজে বের করা হবে। স্থানীয়রা বলেন, মাদক কারবারি কারা? মিয়ানমার থেকে কারা ইয়াবার চালান আনছে? কোন রকমের ব্যবসা না থাকা সত্ত্বেও কারা বিপুল টাকা ব্যয়ে বিলাসী জীবন যাপন করছে?। নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়েছে কারা? তাদের আয়ের উৎস কি? সবই উখিয়া টেকনাফ ও ঘুমধুম পুলিশের কমবেশি জানা রয়েছে। তবুও ধরা পড়ছেনা নব্য গডফাদাররা। অভিযোগ উঠেছে, কিছু মাদক কারবারির সঙ্গে কতিপয় অসৎ পুলিশের গোপন আঁতাত রয়েছে। বড়মাপের ওই কারবারিরা পুলিশকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে বীরদর্পে চলাফেরা করে এলাকায়। টেকনাফে র‌্যাব সদস্যরা হ্নীলার দক্ষিণ জাদিমোরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫০ হাজার পিস ইয়াবাসহ ৩ জনকে আটক করেছে। র‌্যাব ১৫ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ শেখ সাদী জানান, বুধবার (১ জুলাই) মধ্যরাতে র‌্যাব সদস্যরা হ্নীলা জাদিমোরা ফোর স্টার ব্রিক ফিল্ডের পূর্বদিকে এবং ওমরখালের উত্তর পাশে মাদক কেনা-বেচার সংবাদ পেয়ে অভিযানে যায়। চোরাকারবারিরা পালিয়ে যাওয়ার সময় ধাওয়া করে ৫০ হাজার পিস ইয়াবাসহ জাদিমোরার আলী আহমদের পুত্র ফরিদ আলম, দমদমিয়া নেচার পার্ক ২৭ নং ক্যাম্পের সি-ব্লকের রোহিঙ্গা মোঃ আলমের পুত্র জুবায়ের এবং দক্ষিণ লেগুরবিলের আকবর হোসেনের পুত্র মোঃ জাফর আলমকে আটক করেছে। এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় সীমান্ত এলাকার বেশিরভাগ চিহ্নিত মাদক কারবারি আটক, বন্দুকযুদ্ধে নিহত ও আত্মসমর্পণ করার পর ইয়াবার আগ্রাসন কিছুটা রোধ হয়েছিল। তবে করোনাভাইরাসে প্রশাসনের লোকজন ব্যস্ত রয়েছে দেখে মাদক কারবারিরা বসে নেই। আবারও ওপার থেকে আনছে ইয়াবার চালান। মিয়ানমার-রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক গঠিত একাধিক সিন্ডিকেটের কারণে ইয়াবার চালান প্রবেশ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। মিয়ানমারে থাকতে যেসব রোহিঙ্গা ইয়াবা কারবারে জড়িত ছিল, ওইসব গডফাদার বর্তমানে বিভিন্ন শিবিরে অবস্থান করছে। তারাই ওপারে রাখাইন ও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিয়ে আসছে ইয়াবার চালান। ইয়াবা বেচে নগদ টাকা কামাই করছে তারা। এদের সঙ্গে সিন্ডিকেট করেছে ঘুমধুম, কুলালপাড়া, বালুখালী ও রহমতের বিলের কিছু মাদক কারবারি। বিশেষ করে মিয়ানমার অভ্যন্তরে জিরো লাইনে অবস্থিত কোনারপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পই ইয়াবা প্রবেশের মূল উৎস। কেননা মংডুর উত্তরে ইয়াবা তৈরির একটি কারখানাও নেই। মিয়ানমারে সর্বমোট ৩৭টি ইয়াবা তৈরির কারখানা রয়েছে মংডু, রাচিদং, বুচিদং ও সিটওয়ে শহরে। যেহেতু তারা এখনও মিয়ানমারে, সেহেতু রাখাইন রাজ্যের মংডু থেকে ইয়াবার চালান সীমান্তে আনতে সহজ হচ্ছে। র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশ ইতোমধ্যে ইয়াবার অসংখ্য চালান জব্দ করেছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে শতাধিক ইয়াবা কারবারি। আটক ও আত্মসমর্পণ করে জেলে রয়েছে ৩ শতাধিক ইয়াবা ডন। তারপরও শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কারণে ঠেকানো যাচ্ছে না তাদের রমরমা ইয়াবা বাণিজ্য। কিছু কিছু জনপ্রতিনিধি (ইয়াবা কারবারি) ক্ষমতার দাপটে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছ। হাতের কাছে পেয়েও নানা কারণে তাদের গ্রেফতার করছে না পুলিশ। পুলিশ বলছে, মালসহ না পাওয়া গেলে তাদের আটক করা যাচ্ছেনা। কিছুদিন আগে উখিয়ার রহমতের বিলের ইয়াবা সিন্ডিকেট প্রধান কলিমুল্লাহ ওরফে লাদেন বন্দুকযুদ্ধে মারা যাবার পর ওই সিন্ডিকেটের হাল ধরেছে মহিলা মেম্বারের পুত্র সোহেল।
×