ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রবাসীরা গত অর্থবছরে পাঠিয়েছেন ১ হাজার ৮২০ কোটি টাকা বিদেশ ফেরতদের কর্মসংস্থান নিশ্চিতে ঋণ দেয়ার পরিকল্পনা

করোনার মধ্যেও রেমিটেন্সে রেকর্ড

প্রকাশিত: ২২:৪১, ৩ জুলাই ২০২০

করোনার মধ্যেও রেমিটেন্সে রেকর্ড

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনার পাশাপাশি বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অর্থনৈতিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ কারণে তারা অভিবাসী শ্রমিকদের ছাঁটাই করছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে দেশেও ফিরেছেন বহু প্রবাসী। মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারে এমন সঙ্কটের মাঝেও প্রবাসীদের পাঠানো আয়ে নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। সদ্য সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১ হাজার ৮২০ কোটি বা ১৮.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড। এক অর্থবছরে এত বিপুল পরিমাণ রেমিটেন্স এর আগে কখনই আসেনি। সর্বশেষ জুন মাসেও রেমিটেন্স আসে ১৮২ কোটি ডলার। একক মাস হিসেবে গত অর্থবছরে এটিও রেকর্ড। এর ফলে বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৬ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার। আগামী দিনগুলোতে রেমিটেন্সের ধারা অব্যাহত রাখতে ও মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার সঙ্কুচিত হওয়ার আশঙ্কায় বিকল্প দেশও খুঁজতে শুরু করেছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এদিকে বিদেশ ফেরত প্রবাসী কর্মীদের নিয়ে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করছে সরকার। স্থায়ীভাবে ফিরে আসা বিদেশ ফেরত প্রবাসী কর্মীদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সুদে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেবে সরকার। জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্বের ১৭৪টি দেশে এক কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ কর্মরত। এর বড় একটি অংশ মধ্যপ্রাচ্যে আছেন। প্রায় ৭৫ শতাংশই মধ্যপ্রাচ্যের ৬টি দেশে থাকেন। প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ রেমিটেন্স আসে এসব অঞ্চল থেকে। বাংলাদেশ থেকে গড়ে ৫০-৬০ হাজারের মতো মানুষ প্রতি মাসে বিদেশে কাজ করতে যান, এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশটি যান সৌদি আরবে। দেশটিতে জানুয়ারি মাসে গেছেন ৫২ হাজার মানুষ, ফেব্রুয়ারি মাসে গেছেন ৪৪ হাজার, আর মার্চে ফ্লাইট বন্ধের আগ পর্যন্ত ৩৮ হাজার গেছেন। এই মুহূর্তে সৌদি আরবে ২২ লাখের মতো বাংলাদেশী অভিবাসী শ্রমিক কাজ করছেন। করোনা পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়া এবং চলমান অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণে আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে সৌদি আরব থেকে ১০ লাখ বাংলাদেশী অভিবাসীকে দেশে ফিরে আসতে হতে পারে। বৈশ্বিক মহামারী আকার ধারণ করা করোনাভাইরাসের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিপুল সংখ্যক অভিবাসী কর্মী বছর শেষে দেশে ফিরে আসবেন বলে ধারণা করছে জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম। সংস্থাটি বলছে, করোনা ইস্যুতে মন্দার কারণে চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের ফলে শুধু রেমিটেন্স গ্রহণকারী পরিবারগুলোই নয়, প্রভাবিত হবে তাদের কমিউনিটিও। ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচীর প্রধান শরিফুল হাসান জানান, গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মার্চে ফ্লাইট চলাচল বন্ধের আগ পর্যন্ত সৌদি আরব থেকে ৪১ হাজারের মতো শ্রমিক ফিরে এসেছেন। পরে চার্টার্ড বিমানে করে দেশে ফিরেছেন ১৩ হাজারের বেশি শ্রমিক, তারও একটি বড় অংশ সৌদি আরব থেকে এসেছে। এর বাইরে তিন মাসে সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল এমন শ্রমিকের সংখ্যাও ৫০ হাজারের বেশি। জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, করোনার এ সময় কোন শ্রমিক বিদেশে যেতে পারবে না বরং ফেরত আসবে। তেলের মূল্যপতন ও করোনার কারণে বিদেশে যেসব প্রবাসী আছেন, তাদেরও মাথাপিছু আয় কমবে। করোনার ভয়াল থাবায় বিশ্বের শ্রমবাজারে যখন মহাসঙ্কট চলছে ঠিক তখনও রেমিটেন্স পাঠিয়ে যাচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। সদ্য সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১ হাজার ৮২০ কোটি বা ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড। এক অর্থবছরে এত বিপুল পরিমাণ রেমিটেন্স এর আগে কখনই আসেনি। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের পুরো সময়ে (জুলাই-জুন) এক হাজার ৬৪২ কোটি (১৬.৪২ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। স্থানীয় বাজারে ডলারের শক্তিশালী অবস্থান ও হুন্ডি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের কারণে রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের বাজেটে রেমিটেন্সে ২ শতাংশ নগদ সহায়তা দেয়ার ঘোষণা রয়েছে। ফলে আগামীতে রেমিটেন্স আরও বাড়বে বলে আশা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তারা আরও বলছেন, বর্তমানে বাণিজ্য ঘাটতি ও ব্যাংক খাতের তারল্য সঙ্কট নিরসনে প্রবাসী আয় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারীকালে পরিবার-পরিজনের প্রয়োজনে সর্বশেষ জমানো টাকাও অনেকে পাঠাচ্ছেন। অনেকে আবার দেশে ফিরে আসার চিন্তাভাবনা করছে; তাই যা কিছু আছে সব আগেই দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এ সব কারণেই রেমিটেন্স বাড়ছে।
×