ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সিন্ডিকেটের কবলে ঢাকার দুই সিটির কোরবানির হাট

প্রকাশিত: ২২:৩৫, ৩ জুলাই ২০২০

সিন্ডিকেটের কবলে ঢাকার দুই সিটির কোরবানির হাট

মশিউর রহমান খান ॥ সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনের পশুর হাটের ইজারা। আসন্ন ঈদ-উল-আযহায় পশু কেনাবেচার জন্য দুই সিটিতে স্থায়ী ও অস্থায়ী মোট ২৬ টি পশুর হাটের ইজারা দিতে দরপত্র আহ্বান করে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি বিভাগ। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ১০ টি অস্থায়ী পশুর হাটের জন্য ৩ দফায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। দ্বিতীয় দফায়ও দর কম পাওয়ায় ইজারা চূড়ান্ত করেনি সংস্থাটি। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুটি হাটে মাত্র একজন করে মোট ২ ইজারাদার দরপত্র ড্রপ করেছেন। যা এর আগে দীর্ঘ বছরেও এমনকি এই সরকারের আমলে কারো চোখে পড়েনি। অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৪ টি অস্থায়ী হাটের মধ্যে তিনটি হাটের কোন দরপত্রই দাখিল করেননি কোন ইজারাদার। এছাড়া ২ টি হাটে সরকারী ইজারা মূল্যের চেয়ে প্রায় ২০ লাখ ও ৫০ লাখ টাকা কম ইজারা দর দিয়েছেন ইজারাদাররা। দরপত্র খোলার নির্দিষ্ট তারিখে সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এ অবস্থা দেখে চোখ কপালে ওঠার উপক্রম হয়। এক্ষেত্রে যে একটি সিন্ডিকেট অত্যন্ত কম মূল্যে এসব হাট ইজারা নিতে তৎপর, তা ধারণা করছে সিটি কর্পোরেশন সংশ্লিষ্টরা। তবে ২ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রগণ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে এবার কঠোর অবস্থানে। তাদের ঘোষণা, এ বছর পশুর হাট নিয়ে কোনক্রমেই কোন প্রকার সিন্ডিকেট রাখা হবে না। এছাড়া সরকারী দরের সমান মূল্য না পেলে প্রয়োজনে পশুর হাট কম বসবে। ডিএনসিসির মাত্র একটি করে দরপত্র জমা দেয়া পশুর হাটগুলো হচ্ছে-তেজগাঁও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট খেলার মাঠ ও মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী সড়ক সংলগ্ন (বসিলা) পুলিশ লাইনের খালি জায়গার হাট। এ দুই হাটেরই সরকারী দরের চেয়ে প্রায় ৪ গুণ কম মূল্যে দরপত্র দাখিল করেছে। এছাড়াএ সিন্ডিকেট হাট পেতে আরও কয়েকটি হাটের মূল্য সরকারী দরের অতি কাছাকাছি দেখিয়ে দাখিল করেছে। এদিকে দক্ষিণ সিটির শ্যামপুর খেলার মাঠ, দনিয়া কলেজ ও ধুপখোলা মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গার হাট তিনটিতে কোন দরপত্রই জমা পড়েনি। বাকি ২ টি হাটের মধ্যে মেরাদিয়া বাজারের হাটে সরকারী ইজারা মূল্যের চেয়ে প্রায় ২০ লাখ টাকা, ধুপখোলা মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গার হাটে সরকারী ইজারার দরের চেয়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকা কমে দরপত্র দাখি করেছে। যা সিন্ডিকেটের কাজ বলেই প্রতীয়মান হয়। যদিও করোনার কারণে পশু কম বিক্রি হবে বলেই অনেক ইজারাদার এসব পশুহাটে লোকসান দিতে ইজারাতে অংশ নিচ্ছেন না বলে জানা গেছে। এদিকে সরকারী ইজারা দরের চেয়ে কমপক্ষে ৩ থেকে ৫ গুণ পর্যন্ত কম দরে এসব সিন্ডিকেট সদস্য দরপত্র দাখিল করায় অনেকটা বেকায়দায় পড়েছে ডিএনসিসি। সংস্থাটি ২য় দফায় এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়ায় এ নিয়ে কি সিদ্ধান্ত নেবে তা ভেবে পাচ্ছে না। কোন সময় বলছে, আমরা দরপত্র অনুযায়ী মূল্য না পেলে প্রয়োজনে আবার দরপত্র আহ্বান করব। তাই ৩য় দফা দরপত্র খোলার তারিখ হিসেবে ৮ জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা করছে সংস্থাটি। এছাড়া ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ ঘনবসতিপণর্ন আবাসিক ও জনসমাগম বেশি এমন এলাকায় পশুর হাট বসাতে চায় না বলেও জানা গেছে। মূলত এর পেছনে রাজস্ব আয় না হওয়া অস্বাভাবিক দর কম পাওয়ায় এমন পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। অপর একটি সূত্র জানায়, করোনার কারণ দেখিয়ে বা যে কোন সিন্ডিকেটের কারণে এসব হাটে এই অস্বাভাবিক দরপত্র জমা হওয়ায় সংস্থাটি নির্দিষ্ট কিছু হাটের ইজারা এবার বাতিলও করতে পারে। তবে দর না পেলে নতুন করে হাটের দরপত্র ডাকা হলেও তার বাস্তবায়ন অনেকটা কঠিন বা অসম্ভব হয়ে পড়বে। কারণ হিসেবে দেখা গেছে, দরপত্রে এ সিন্ডিকেটের লোকজনই নতুন করে পূর্বের দরের কাছাকাছি মূল্যে দরপত্র জমা করবে ও কোরবানির হাটের সময় কমে আসায় সিন্ডিকেট ভেঙ্গে তা অন্যভাবে বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়বে সংস্থাটির পক্ষ থেকে। যদিও ডিএনসিসির দাবি, কোরবানির হাট শুরুর আগেই নতুন করে টেন্ডার ডেকে পশুর হাট ইজারা প্রদানের সার্বিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব। ডিএনসিসি সূত্র জানায়, তেজগাঁও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট খেলার মাঠের এ হাটের জন্য মাত্র ১টি টেন্ডার জমা পড়েছে। হাটটিতে সরকারী ইজারামূল্য ধরা হয়েছে ৪৯ লাখ ৫৭ হাজার ২৬৭ টাকা। এখানে দরপত্র দর দিয়েছে মাত্র ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। যা সরকারী দরের চেয়ে প্রায় ৪ গুণ কম। এখানে শক্তিশালী সিন্ডিকেট সক্রিয়। মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী সড়কসংলগ্ন (বসিলা) পুলিশ লাইনের খালি জায়গার হাটের সরকারী ইজারামূল্য ধরা হয়েছে ১ কোটি ৯৯ লাখ ৬৩ হাজার ৬৬৭ টাকা। সেখানে মাত্র একটি টেন্ডার জমা পড়েছে। জমা দেয়া দরপত্রে হাটের মূল্য দিয়েছে ৫৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা। যা সরকারী দরের চেয়ে প্রায় ৪ গুণ কম উঠেছে। এখানে সিন্ডিকেট গড়ে অন্য কাউকে টেন্ডার দাখিল করতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এর বাইরে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ দরপত্র আহ্বান করা মোট ১০ টি হাটের মধ্যে ৫ টি হাটেই সরকারী দরের চেয়ে অস্বাভাবিক দরপতন হয়েছে। ৫ টির মধ্যে ৪ টি হাটের ইজারা সম্পন্ন করেছে সংস্থাটি। আরও একটি হাটের দরপত্র চূড়ান্ত করতে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোঃ মোজাম্মেল হক জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা সরকারী দরের চেয়ে অস্বাভাকি কম দরে ৫ টি পশুর হাটের দরপত্র পেয়েছি। তবে এর মধ্যে ২ টি হাটে মাত্র একটি করে দরপত্র জমা পড়েছে। ফলে এ নিয়ে বেশ বিপাকেই রয়েছি। তবে এখানে একটি দরপত্র জমা হওয়া মানে পেছনে কোন শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করতে পারে। তাই সর্বশেষ দরপত্র খোলার তারিখ অনুযায়ী আমরা ৮ জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা করব। এর পরই সব বলা যাবে। এর পরও হাটের দর অস্বাভাবিক থাকলে পুনরায় টেন্ডার ডাকা হবে। তিনি বলেন, দ্বিতীয় দফায় দরপত্রে ৫টি হাটের কোনটিই সরকারী ইজারামূল্য পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। মোট ৬ টি হাটের বিপরীতে টেন্ডার জমা পড়েছে মোট ১০টি। মূলত রাজস্ব আয় ও জনস্বার্থ উভয়দিক চিন্তা করে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলামের সঙ্গে আলোচনা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, নাগরিকদের স্বার্থকে নষ্ট করবে বা জিম্মি করবে সিন্ডিকেট বা এমন কোন চক্রকেই আমরা জয়ী হতে দেব না। তিনি বলেন,উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের হাট থেকে আমরা গত বছর প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছিলাম। এবার এ হাটের ইজারা মূল্য গত বছরের তুলনায় অনেক কম পড়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি হাটের অস্বাভাবিক দরপতন হয়েছে। ২ টি হাটে মাত্র একটি করে দরপত্র দাখিল করা হয়েছে। যা অস্বাভাবিক বটে।
×