ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেটের কপি ছিঁড়ে বিএনপি সংসদের অবমাননা করেছে

প্রকাশিত: ২২:৩১, ৩ জুলাই ২০২০

বাজেটের কপি ছিঁড়ে বিএনপি সংসদের অবমাননা করেছে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যরা ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রত্যাখ্যান করার নামে সংসদ ভবনের সামনে মহান সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত বাজেটের কপি ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছেন। এটি মহান সংসদের প্রতি চরম অবমাননা। এটি তাদের শপথ ভঙ্গেরও শামিল। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। বৃহস্পতিবার ওবায়দুল কাদের তার সরকারী বাসভবনে বাজেট পাস পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, জাতির এই ক্রান্তিকালে তারা দায়িত্বশীল আচরণ করেনি। তারা চেয়েছিল, সংসদ যাতে কোন বাজেট পাস না করে। বাজেট ছাড়া একটি রাষ্ট্র তারা দেখতে চেয়েছিলেন। তারা দেশে একটি হতাশাজনক অবস্থা দেখতে চেয়েছিল। আমরা মানুষের মধ্যে আশার আলোর সঞ্চার করতে পেরেছি, যা এই পেনডেমিক পরিস্থিতিতে অত্যন্ত প্রয়োজন। ওবায়দুল কাদের বলেন, বাঙালীর সকল অর্জনের পেছনে রয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ শুধু বাংলাদেশের জন্য রাজনৈতিক স্বাধীনতাই এনে দেয়নি, এই স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার জন্য জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যা যা করা প্রয়োজন ছিল তার সবকিছুই করেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এদেশের জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি অর্জিত হয়েছে। স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়। মোটা দাগে বলতে গেলে, বাঙালী জাতি হিসেবে এ পর্যন্ত যা কিছু পেয়েছে, তার সবকিছুই দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ; দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং দূরদর্শী ও বিচক্ষণ রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশের সব অর্জন শেখ হাসিনার কারণেই। এ দেশের সব মানুষের কল্যাণের কথা, বিশেষভাবে দরিদ্র-অসহায় মানুষদের কথা, প্রিয় নেত্রীর চিন্তা-চেতনায় সবসময় থাকে। পিতার মতো এ দেশের মানুষকে ভালবেসে তিনি তার পুরো জীবন উৎসর্গ করেছেন। সাম্প্রতিককালে সংসদে উচ্চারিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি উক্তি তুলে ধরে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো এখানে বেঁচে থাকার জন্য আসিনি। আমি তো জীবনটা বাংলার মানুষের জন্য বিলিয়ে দিতে এসেছি, এটাতে তো ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজের দর্শন-চিন্তা-কর্মপ্রচেষ্টা দিয়ে সমুজ্জ্বল হয়ে আছেন বাঙালীর হৃদয়ে। ওবায়দুল কাদের বলেন, গত ২৯ জুন মহান জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট সর্বসম্মতভাবে অনুমোদিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৯ জুন মহান জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনার সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে এই বাজেটের প্রেক্ষাপট, বৈশ্বিক পরিস্থিতিসহ দেশীয় বাস্তবতা, করোনা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এদেশের মানুষের জন্য তার সরকারের নানামুখী উদ্যোগ ও সহায়তা এবং বাংলাদেশকে একটি সুখী সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে তার গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। বাংলাদেশ তথা বিশ্ব মানবতার এই ক্রান্তিলগ্নে শেখ হাসিনার এই ভাষণ বাঙালী জাতির ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই পেনডেমিকের সময়ই আমাদের বাজেট প্রণয়ন করতে হয়েছে। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের আর্থিক বছরের গণনা আমাদের চেয়ে ভিন্ন হওয়ায় (যেমন জানুয়ারি টু ডিসেম্বর, এপ্রিল টু মার্চ, অক্টোবর টু সেপ্টেম্বর) তাদের এই সময়ে বাজেট করতে হয়নি। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশ এবং দক্ষিণ গোলার্ধের কিছু দেশে আমাদের মতো জুলাই থেকে জুন আর্থিক বছর ধরা হয়। গত ১১ জুন ২০২০ মহান জাতীয় সংসদে শেখ হাসিনার সরকারের পক্ষে তার অর্থমন্ত্রী ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ এই সময়ে যেসব দেশ বাজেট প্রণয়ন করেছে, তাদের অধিকাংশই করোনা পরিস্থিতির কারণে তাদের বাজেট উল্লেখযোগ্যভাবে সংকোচন করেছে। কোন কোন দেশ বাজেট দিতে ব্যর্থ হয়ে বিশেষ আইনের সহায়তায় বাজেট প্রণয়ন স্থগিত করেছে। এই সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার দুই একটি দেশসহ (যেমন পাকিস্তান) পৃথিবীর অনেক দেশে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, ১৯৭২ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে যখন কিছুই ছিল না, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন সাহসী বাজেট দিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১১ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির ধারাবাহিক অগ্রগতির সুফল এই বাজেট। জাতির পিতার দূরদর্শী সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ (মধ্যম আয়ের দেশ) ও রূপকল্প-২০৪১ (উন্নত দেশের মর্যাদা) অর্জনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার সরকার গত ১১ বছরে দেশে ব্যাপক পরিসরে শিল্পায়ন, বিনিয়োগ, উন্নয়ন কর্মকা- ও নানামুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে অব্যাহতভাবে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, উচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সবক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা করে বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধন করেছেন। তিনি বলেন, কোভিড-১৯-এর প্রভাবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে যে সাময়িক প্রয়োজন উদ্ভূত হয়েছে তা মেটানো এবং অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে যে ক্ষয়ক্ষতি সৃষ্টি হবে তা পুনরুদ্ধারের কৌশল বিবেচনায় নিয়ে এই বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে। এটি আওয়ামী লীগ সরকারের ১৭তম এবং বর্তমান মেয়াদের দ্বিতীয় বাজেট। এ বাজেটে অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এবং করোনাভাইরাস মোকাবেলায় জীবন ও জীবিকা রক্ষার উপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। তাছাড়া, বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য, কৃষি, কর্মসৃজন ও সামাজিক নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এছাড়া আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যসমূহ অর্জনের প্রয়াস আরো জোরদার করা হবে। আমাদের সরকার দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-৪১) অনুমোদন করেছে। এ পরিকল্পনার মাধ্যমে ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, মানুষে মানুষে বৈষম্য দূরীকরণ ও শ্রমজীবী মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে বিধান করেছিলেন, তারই ধারাবাহিকতায় আগামী অর্থবছর হতে শেখ হাসিনার সরকার ৫ বছর মেয়াদি ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। যার মূল প্রতিপাদ্য হবে দারিদ্র্য ও আয় বৈষম্য কমিয়ে এনে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করা। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা ভাইরাসের অর্থনৈতিক প্রভাব কার্যকরভাবে মোকাবেলা, জরুরী স্বাস্থ্যসেবা খাতের ব্যবস্থাপনা, কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখা এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে এ পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকার ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এই প্রণোদনা প্যাকেজ দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ, যা জিডিপির ৩.৭ শতাংশ। বিগত ১২ বছরে ধারাবাহিকভাবে দারিদ্র্য বিমোচনের হার ছিল গড়ে ১.৪ শতাংশ। অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে সুবিশাল আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করে তা বাস্তবায়নের কারণে কোভিড ১৯ মহামারীর ফলে অর্থনৈতিক কার্যক্রম থমকে যাওয়ার প্রভাবে দেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল, শেখ হাসিনার সরকার তা অনেকটাই রোধ করতে পারবে বলে আশা করি। তিনি বলেন, দেশের অতি দরিদ্র পরিবারসমূহকে সরাসরি নগদ অনুদান, বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, রফতানিমুখী শিল্পের শ্রমিক-কর্মচারীদের চাকরি সুরক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো ইত্যাদি সময়োপযোগী পদক্ষেপের দ্বারা আমরা দারিদ্র্য হারের বৃদ্ধিকে রোধ করতে সক্ষম হবো। আগামী অর্থবছরে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকা- শুরু করার মাধ্যমে আমরা দারিদ্র্য বিমোচনের হার পূর্বের ধারায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
×