ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

গ্রাম পুলিশকে জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ

প্রকাশিত: ২২:০১, ৩ জুলাই ২০২০

গ্রাম পুলিশকে জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কাঁচের মতো স্পষ্ট যে, গ্রাম পুলিশ ও মহল্লাদাররা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নিয়োগ পেয়ে প্রজাতন্ত্রের ৭০ প্রকার কাজে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকেন। সাধারণ মানুষের সবচেয়ে নিকটতম আত্মীয়ের মতো প্রজাতন্ত্রের কর্মে তারা নিয়োজিত। ঝড়-বৃষ্টি, বিপদ-আপদ উপেক্ষা করে তারা বাংলার সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্য থাকেন। দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার কাকে বলে এরা জানেন না। দেশের প্রায় ৪৭ হাজার গ্রাম পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের চাকরি জাতীয়করণের পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ বিষয়টি উঠে এসেছে। একই সঙ্গে গ্রাম পুলিশকে সরকারী চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর পদমর্যাদা দিতে এবং সে অনুযায়ী জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করে তা প্রদান করতে নির্দেশও দেয়া হয়েছে। বিচারপতি মোঃ আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের স্বাক্ষরের পর সুপ্রীমকোর্টের ওয়েবসাইটে এ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে গত বছরের ১৫ ও ১৭ ডিসেম্বর এ রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। রিট আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব ও এ্যাডভোকেট নূর আলম সিদ্দিক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী ও সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান। ১৮ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে ওই গ্রাম পুলিশদের ২০১১ সালের ২ জুন থেকে সুবিধা দিতে বলা হয়েছে। রায়ে ২০১১ সালের ২ জুনের পর স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) কর্মচারী চাকরি বিধিমালা-২০১১ বহির্ভূতভাবে গ্রাম পুলিশ পদে যে কোন নিয়োগ অবৈধ ও বাতিল হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ধামরাইয়ের কুশুরা ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম পুলিশ কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বরত লাল মিয়া, মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার রমজানপুর ইউনিয়ন পরিষদে মহল্লাদার হিসেবে দায়িত্বরত মোঃ সাইদুর দেওয়ানসহ দেশের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে দফাদার ও মহল্লাদার হিসেবে দায়িত্বরত ৩৫৫ জন গ্রাম পুলিশের করা এক রিট আবেদনে জারি করা রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে এ রায় প্রদান করে আাদালত। রিটকারী আইনজীবী হুমায়ুন কবির পল্লব জানান, সারাদেশে প্রায় ৪৭ হাজার গ্রাম পুলিশ রয়েছে। এদের মধ্যে একজন দফাদার পান সাত হাজার টাকা এবং একজন মহল্লাদার পান সাড়ে ৬ হাজার টাকা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাদের চাকরি চতুর্থ শ্রেণীভুক্ত করতে ২০০৮ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব পাঠায়। সর্বশেষ ২০০৯ সালে তাদের স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন-২০০৯ ভুক্ত করা হয়। এ আইনের অধীনে ২০১৫ সালে এ বাহিনীর গঠন, প্রশিক্ষণ, শৃঙ্খলা ও চাকরির শর্তাবলী সংক্রান্ত বিধিমালা করা হয়। কিন্তু এ বিধিমালায় তাদের চাকরি কোন শ্রেণীভুক্ত হবে তা নির্ধারণ করা হয়নি। এ নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে দফায় দফায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হলেও কোন সাড়া মেলেনি। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্টদের ২০১৭ সালের ১৪ নবেম্বর লিগ্যাল নোটিস পাঠানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায় রিট আবেদন করা হয়। হাইকোর্ট ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর রুল জারি করে। এই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করা হয়। আদালত রায়ে গ্রাম পুলিশের মধ্যে মহল্লাদারদের জাতীয় বেতন স্কেলের ২০তম গ্রেড এবং দফাদারদের ১৯তম গ্রেডে বেতন দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়েছে , এটা কাঁচের মতো স্পষ্ট যে, গ্রাম পুলিশ ও মহল্লাদাররা ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক নিয়োগ পেয়ে প্রজাতন্ত্রের ৭০ প্রকার কাজে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকেন। সাধারণ মানুষের সবচেয়ে নিকটতম আত্মীয়ের মতো প্রজাতন্ত্রের কর্মে তারা নিয়োজিত। ঝড়-বৃষ্টি, বিপদ-আপদ উপেক্ষা করে তারা বাংলার সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্য থাকেন। দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার কাকে বলে এরা জানেন না। রায়ে আরও বলা হয় ,সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩১ মোতাবেক আইনানুযায়ী কোন ব্যক্তিকে তার ন্যায্য অধিকার থেকে তথা ন্যায্য প্রাপ্যতা থেকে তথা ন্যায্য প্রত্যাশা থেকে তথা আইনসম্মত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না। বর্তমান মোকদ্দমায় দরখাস্তকারীরাসহ সব মহল্লাদার ও দফাদারগণের ন্যায্য অধিকার বিধিমালা ২০১১ অনুযায়ী বেতন-ভাতাদি পায়। কিন্তু প্রতিপক্ষগণ স্পষ্টত: দরখাস্তকারীগণসহ সকল মহল্লাদার ও দফাদারগণকে ন্যায্য অধিকার থেকে বেআইনীভাবে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত করে আসছে। রায়ের আদেশের অংশে বলা হয়েছে, ২০১১ সালের ২ জুন হতে মহল্লাদারগণকে জাতীয় বেতন স্কেল ২০০৯ (বর্তমানে জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫) এর ২০তম গ্রেডে বেতন ভাতাদি প্রদান করতে এবং দফাদারগণকে জাতীয় বেতন স্কেল ২০০৯ (জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫) এর ১৯ তম গ্রেডে বেতন ভাতাদি প্রদান করতে প্রতিপক্ষগণকে নির্দেশ প্রদান করা হলো। আদেশে আরও বলা হয়, ২০১১ সালের ২ জুন তারিখের পর হতে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) কর্মচারী চাকরি বিধিমালা ২০১১ বহির্ভূতভাবে মহল্লাদার ও দফাদার এর যে কোন নিয়োগ অবৈধ ও বেআইনী মর্মে গণ্য হবে। ওই তারিখের পর হতে বিধিমালা ২০১১ বহির্ভূত যে কোন নিয়োগ আপনা আপনি বাতিল। এর আগে ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর ঢাকার ধামরাইয়ের টুপিরবাড়ীর হাটকুশারা এলাকার বাসিন্দা লাল মিয়াসহ কয়েক গ্রাম পুলিশ সদস্যের করা রিটে রুল প্রদান করে আদালত।
×