দেশের করোনা মহামারী পরিস্থিতি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সামলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাস্থ্য খাতে সীমিত সম্পদ ও জনবল নিয়েও পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন আন্তরিকতা ও সাহসের সঙ্গে। যে কারণে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কম। প্রধানমন্ত্রীর এই সময়োচিত পদক্ষেপ ও বিচক্ষণতা প্রশংসিতও হয়েছে বহির্বিশ্বে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেন ও ইতালির সরকার রীতিমতো নাস্তানাবুদ ও নাজেহাল হয়েছে করোনা মহামারীর পরিস্থিতি সামলাতে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সবকিছু ছাপিয়ে সব কিছুর উর্ধে যে বিষয়টি দৃশ্যমান তা হলো, অত্যন্ত দক্ষতা ও আস্থার সঙ্গে অর্থনীতি সামলানোসহ খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখার বিষয়টি। করোনা মহামারী থেকে রক্ষা পেতে বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে যখন লকডাউন চলছে, অর্থনীতি প্রায় অচল হয়ে পড়েছে, তখন বাংলাদেশে অন্তত মূল্যস্ফীতি ঘটেনি। খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়েনি। অন্যতম রফতানি খাত পোশাক ও চামড়া শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কৃষি খাত তার উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। অনন্যসাধারণ এই কৃতিত্বের দাবিদার অবশ্যই বাংলার কৃষক। করোনাকালীন দুঃসময়েও মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উদয়াস্ত পরিশ্রম করে বোরোর বাম্পার ফলনের কৃতিত্বের অধিকারী হয়েছেন তারা। সরকার অবশ্য সবরকম ভর্তুকি ও প্রণোদনা নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। দলীয় নেতাকর্মী ও হারভেস্টার দিয়ে প্রকৃতির ভ্রুকুটিকে উপেক্ষা করে যথাসময়ে ধান কেটে গোলাজাত করতে সাহায্য করেছে। ধান-চালের সংগ্রহমূল্য বাড়িয়ে দিয়ে সহায়তা করেছে কৃষককে, যাতে তারা লাভবান হতে পারে। ধানচাল বেচাকেনার মাঠ পর্যায়ের খবর হলো, কৃষক এবার খুশি। সদ্য পাসকৃত জাতীয় বাজেটে কৃষি খাতে যথেষ্ট ভর্তুকি, প্রণোদনা ও সহায়ক কর্মসূচী রাখা হয়েছে, যাতে কৃষকসহ গবাদিপশু, হাঁস-মুরগির খামারি, ফুলফল-সবজি উৎপাদক- প্রায় সবাই উপকৃত হয় কমবেশি। সরকার এবার আউশ-আমনেও রেকর্ড পরিমাণ ধান-চাল উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। রীতিমতো আটঘাট বেঁধে নামা হয়েছে এক্ষেত্রে সফলতা পেতে। প্রধানমন্ত্রী গভীর প্রত্যয়ে বলেছিলেন যে, দেশে কেউ না খেয়ে থাকবে না। বরং নিজেরা খেয়েপরে যদি সম্ভব হয় তবে অন্যদের সহায়তা করব। করোনায় বিপর্যস্ত বিশ্বে এটি অবশ্যই ইতিবাচক।
ইতোপূর্বে করোনাভাইরাসজনিত মহামারীর কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দায় বিশ্ব ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী (ডব্লিউএফপি) বলছে- অন্তত ৩৬টি দেশ, যার মধ্যে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও লাতিন আমেরিকার দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা, যদি না সময়োচিত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। উল্লেখ্য, বর্তমানে বিশ্বে সাড়ে ১৩ কোটি মানুষ তীব্র খাদ্য সঙ্কটে রয়েছে। করোনার কারণে তা বেড়ে দাঁড়াতে পারে সাড়ে ২৬ কোটিতে।
আশার কথা এই যে, বাংলাদেশ এদিক থেকে রয়েছে সন্তোষজনক অবস্থানে। দেশ বর্তমানে খাদ্য বিশেষ করে ধান-চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। খাদ্য মজুদও সন্তোষজনক। তদুপরি বোরোর বাম্পার ফলন। খাদ্য মজুদের লক্ষ্যে সরকার এবার ২১ লাখ টন খাদ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে। গত বছর কেনা হয়েছিল ১৬ লাখ টন। ফলে খাদ্য সঙ্কটের সম্ভাবনা নেই দেশে। করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী সর্বাগ্রে জোর দিয়েছেন খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর।