ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বৃষ্টির রেকর্ডে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা পরিষদও ভাসছে

প্রকাশিত: ১৭:৩২, ২ জুলাই ২০২০

বৃষ্টির রেকর্ডে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা পরিষদও ভাসছে

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ টানা মুষলধারে বৃষ্টি চলছে উত্তরাঞ্চলের নীলফামারীতে। বিশেষ করে এ জেলার তিস্তা বিধৌত ডিমলা উপজেলা শহরে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।প্রবল বৃষ্টিতে ডিমলা উপজেলা পরিষদ ভাসছে। ভাসছে পথঘাট ও বিস্তৃর্ণ এলাকা । পুকুরের পানি উপচে পড়েছে। গতকাল বুধবার রাত হতে শুরু হয় মেঘভাঙা বৃষ্টি । আজ বৃহস্পতিবার সেই বৃষ্টি দুপুর আড়াই টা পর্যন্ত অব্যাহত ভাবে চলছিল। বৃষ্টি থামবার কোন লক্ষন দেখা যাচ্ছেনা। গত ৫ বছরে এবার ডিমলা এলাকায় বৃষ্টিপাতে রেকর্ড গড়েছে। ডিমলা আবহাওয়া অফিস তথ্যে জানা গেছে, ডিমলায় এ বৃষ্টিপাত বিগত বছরের চেয়ে সর্বোচ্চ হিসেবে রেকর্ড করা হয়। ডিমলা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক জামাল উদ্দিন জানান গত ২৪ ঘন্টায় আজ বৃহস্পতিবার ডিমলা উপজেলা শহরে বৃষ্টিপাত করা হয় ২০২ মিলিমিটার (গতকাল বুধবার সকাল ৬টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬ পর্যন্ত)। আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন , আজকের ২রা জুলাইয়ের বৃষ্টি ছিল বিগত সময়ের চেয়ে রেকর্ড পরিমান। ডিমলা আবহাওয়া অফিস চালু হয় ২০১৫ সালের পহেলা জানুয়ারী। সে হিসাবে দেখা যায় ২০১৫ সালের ২ জুলাই বৃষ্টিপাত ছিল ৩৭ মিলিমিটার, ২০১৬ সালে ৭ মিলিমিটার, ২০১৭ সালে ১৬ মিলিমিটার, ২০১৮ সালে ৮৩ মিলিমিটার, ২০১৯ সালে ১ মিলিমিটার। একই সুত্র মতে চলতি বছরের জুন মাস জুড়ে ডিমলায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৬৬৩ মিলিমিটার। যা বিগত সময়ের চেয়ে অনেক বেশী ছিল বৃষ্টিপাত। ২০১৯ সালে ২৫৬.৬ মিলিমিটার ও ২০১৮ সালে ৫৬৫.১ মিলিমিটার। এদিকে বৃষ্টিতে রাস্তঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের আনাগোনা খুবই কম। সকালের দিকে অফিসগামী মানুষের চলাফেরা বেশি থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে আনাগোনা কমতে থাকে। হাটবাজার গুলো বন্ধ হয়ে আছে। পেশার তাগিদে বা জরুরি কাজে যারা বের হয়েছেন, জলাবদ্ধতার কারণে রিকশা বা ইজিবাইক না পেয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে তাদের।বৃষ্টিতে উপজেলার ১০ ইউনিয়নের ফসলি জমি সহ নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। ঝুনাগাছ চাপানীর বাবু জানান এলাকার সকল পুকুরের পানি উপচে পড়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন ময়দান ও পাটোয়ারীপাড়ার বাড়িঘরে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে। নাউতারা এলাকার রাস্তাঘাটের উপর দিয়ে পানি বয়ে যাচ্ছে।ডিমলা সদর ইউনিয়নের অবস্থা বেশী নাজুক। মানুষজন হাটাচলা করতে পারছেনা। চাষকৃত মাছ পুকুরের পানি উপচে বেরিয়ে যাচ্ছে। তবে অনেকে মাছ ধতে সময় পার করছে। খালিশাচাপানীর বাইশপুকুর এলাকাটির প্রধান সড়কটিও তলিয়ে গেছে। উপজেলা বাসীর সচেতন মহল বলছেন, বর্তমানে এলঅকায় প্রচুর বাসাবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে অপরিকল্পিত ভাবে। পানি নিস্কাশনের কোন ব্যবস্থাই নেই। ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই, ময়লা-আবর্জনা, খাল-ভরাট, অবৈধ দখল ও বাঁধ দিয়ে মাছ চাষসহ নানা কারণে সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে এলাকার সকলেই। ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়শ্রী রানী রায় জানান, এলাকায় প্রচন্ড বৃষ্টিপাতের কারনে পথঘাট হাটবাজার, উপজেলা পরিষদের সম্মুখভাগ তলিয়ে গেছে। এদিকে অবিরাম বর্ষন চললেও তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার( ৫২.৬০) ১৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরন কেন্দ্রের পরিমাপ কর্মকর্তা সহকারী প্রকৌশলী আমিনুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায় গত ২৪ ঘন্টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ১১১ মিলিমিটার। গত বছরে(২০১৯) ২ জুলাই ডালিয়া পয়েন্টে বৃষ্টিপাত ছিল ৪ মিলিমিটার। সুত্রমতে ২০১৮ সালে এই দিনে বৃস্টি হয় ১১৮ মিলিমিটার, ২০১৭ সালে ২ জুলাই বৃষ্টিই ছিলনা। তবে ২০১৬ সালের এই দিনে বৃষ্টিপাতহয় ১১ মিলিমিটার। অপর দিকে জেলা কৃষি বিভাগ সুত্র জানায় গত ২৪ ঘন্টায় জেলা শহরে ৭ মিলিমিটার, ডোমার উপজেলায় ৬৩ মিলিমিটার ও জলঢাকা উপজেলায় ৩১ মিলিমিটার বৃস্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলার সৈয়দপুর ও কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল অনেক কম।
×