ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ময়ূর-২ লঞ্চের চলাচল বন্ধ ঘোষণা

প্রকাশিত: ২১:৫১, ২ জুলাই ২০২০

ময়ূর-২ লঞ্চের চলাচল বন্ধ ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকার শ্যামবাজার এলাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চডুবির ঘটনায় ময়ূর-২ লঞ্চের চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে বিআইডব্লিউটিএ। চাঁদপুর থেকে ছেড়ে আসা ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় ছেড়ে আসা মর্নিং বার্ড লঞ্চটি ডুবে যায়। এতে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়। জীবিত উদ্ধার করা হয় দুজনকে। বুধবার পর্যন্ত আর কারো নিখোঁজ থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। লঞ্চডুবির ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় প্রত্যক্ষদর্শী ১৫ জনের জবানবন্দী রেকর্ড করেছে নৌ পুলিশ। মামলার আসামিদের স্থায়ী-অস্থায়ী ঠিকানায় ধারাবাহিক অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে বুধবার সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ কেউ গ্রেফতার হয়নি। নতুন করে কোন লাশ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেনি। তবে ফায়ার সার্ভিসের একটি টহল দল এখনও সেখানে কাজ করছে। এ ঘটনায় ময়ূর-২ লঞ্চের মালিকসহ সারেং ও তার সহযোগীসহ সাত জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৫/৬ জনকে আসামি করে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করে নৌ পুলিশ। কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ শাহ জামান জনকণ্ঠকে বলেন, বুধবার বিকেল পর্যন্ত ওই ঘটনায় কাউকেই গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে চেষ্টা চলছে। নৌ পুলিশের সদরঘাট থানার ওসি রেজাউল করিম ভুঁইয়া জনকণ্ঠকে বলেন, ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে দুই লঞ্চের মালিক, সারেং ও তাদের সহযোগীদের সন্ধান চলছে। মঙ্গলবার রাতে পুলিশ ও র‌্যাব মিলে আসামিদের প্রত্যেকের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে। তাদের কাউকেই আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে অভিযান অব্যাহত আছে। নৌ পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মোল্যা নজরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, মামলাটির তদন্তের ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যেই ১৫ প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দী ১৬১ ধারায় রেকর্ড করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত আছে। আর ভাটির দিকে লাশ ভেসে ওঠে কিনা তা খেয়াল রাখতে নৌ পুলিশের চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জসহ আশপাশের নৌ পুলিশ স্টেশনগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক ও ঢাকা নদী বন্দরের নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা এ কে এম আরিফ উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, ইতোমধ্যেই ময়ূর-২ লঞ্চের চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দুই লঞ্চের কর্তৃপক্ষকেই খোঁজা হচ্ছে। তবে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ নিখোঁজ থাকার বিষয়ে আর কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তারপরও দূরে কোথাও লাশ ভেসে উঠে কিনা সে বিষয়ে তারা সতর্ক আছেন। নৌযান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। দুর্ঘটনায় তদন্ত করছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাত সদস্য, বিআইডব্লিউটিএ’র চার সদস্য এবং ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৭০ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি ৩ দিন ধরে তদন্ত করছে। তদন্তকালে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ ও জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী আরও চার কার্যদিবস তদন্ত হবে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ও তদন্ত কমিটির প্রধান বিআইডব্লিউটিএ’র ট্রাফিক বিভাগের পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম খান জানান, ইতোমধ্যে মর্নিং বার্ডের মালিক, ময়ূর লঞ্চের ম্যানেজার ও শ্রমিক ফেডারেশনের লোকদের সঙ্গে টেলিফোনে তাদের কথা হয়েছে। কমিটি সরেজমিনে ঘটনাস্থলও পরিদর্শন করে। ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন জনকণ্ঠকে বলেন, স্পীডবোট নিয়ে ডুবুরিসহ তাদের একটি টহল দল সেখানে অবস্থান করছে। দূরে লাশ ভেসে ওঠে কিনা সে বিষয়ে সতর্ক রয়েছে তারা। পাশাপাশি ভাটির দিকেও তারা নজর রাখছেন। তবে নতুন করে কারো নিখোঁজ থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। লঞ্চটি পানির নিচেই আছে। সেটিকে বুড়িগঙ্গা নদীর পশ্চিমপাশে কেরানীগঞ্জের দিকে টেনে নিয়ে রাখা হয়েছে। প্রসঙ্গত, নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে দেড় লাখ করে আর লাশ দাফনের জন্য প্রতি পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে।
×