ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কোটাযুগ শেষ বিসিএসে

প্রকাশিত: ২১:৪৯, ২ জুলাই ২০২০

কোটাযুগ শেষ বিসিএসে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড সরকারী কর্মকর্তা নিয়োগে আর কোন বিসিএসের ফল প্রকাশে কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে না। মঙ্গলবার প্রকাশিত ৩৮তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলে সর্বশেষ এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি দেয়ার সময় বলা হয়েছিল, ফল দেয়ার সময় সরকারের সর্বশেষ কোটা নীতি ব্যবহার করা হবে। তার মানে সর্বশেষ কোটা নীতিতে যা আছে আমরা তা অনুসরণ করব। সরকার যেহেতু কোটা প্রথা বিলুপ্ত করেছে এখন থেকে পরবর্তী আর কোন বিসিএসে কোটা পদ্ধতি থাকছে না। জানা যায়, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারী চাকরিতে কোটা বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়ার প্রস্তাবে ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। পরদিনই নবম গ্রেড ( প্রথম শ্রেণী) এবং দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের (দ্বিতীয় শ্রেণী) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু ওই পরিপত্র জারির আগেই ৩৮ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছিল। ফলে সেই সময়ের সরকারী বিধান মেনে কোটা পদ্ধতি ওই বিসিএসে বহাল রাখতে হয়। আগের কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করে মঙ্গলবার ৩৮তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করেছে কমিশন। ২০১৭ সালের ২০ জুন এই বিসিএসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। ৩৮তম বিসিএস থেকেই বিসিএসে কোটা পদ্ধতি শেষ হলো কি-এমন প্রশ্নে চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক বলেন, হ্যাঁ, তাই। তিনি বলেন, ৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি দেয়ার সময় বলা হয়েছিল, ফল দেয়ার সময় সরকারের সর্বশেষ কোটা নীতি ব্যবহার করা হবে। তার মানে সর্বশেষ কোটা নীতিতে যা আছে আমরা তা অনুসরণ করব। সব ধরনের কোটা বাতিল করা হলেও প্রতিবন্ধী কোটা বহাল থাকবে বলে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত জানানোর সময় তখনকার মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানিয়েছিলেন। এ বিষয়ে পিএসসির চেয়ারম্যান বলেন, এর উত্তর আমি দিতে পারব না। সরকার যে কোটা নীতি করেছে সেটা অনুসরণ করব। ৪০তম বিসিএসে সরকারের সর্বশেষ কোটা নীতি অনুসরণ করা হবে। কোটা নিয়ে সরকার যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবে আমরা সেটা অনুসরণ করব। কমিশনের সদস্যরা জানিয়েছেন, ৩৮তম বিসিএসের ফল কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করে দেয়া হয়েছে। এরপর আর কোন বিসিএসে কোটা থাকবে না। কারণ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরিতে সরকার সব ধরনের কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করেছে। কোটা নিয়ে সরকার যদি নতুন করে কোন সিদ্ধান্ত না দেয় তবে বিসিএস পরীক্ষায় কোটা গের অবসান হয়ে গেছে। সরকারী চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত ছিল। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পাঁচ শতাংশ, প্রতিবন্ধী এক শতাংশ। তবে কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে সবশেষে বেশ কয়েকটি পরীক্ষায় শূন্যপদগুলোতে মেধাবীরা স্থান পান। সেই হিসেবে কোটায় চাকরি পাওয়ার সংখ্যা কমে যায়। তবে কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’র ব্যানারে শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ ২০১৮ সালের শুরুর দিকে আন্দোলন গড়ে তোলে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল সংসদে বলেন, সরকারী চাকরিতে কোটা পদ্ধতিই আর রাখা হবে না। তবে পরে সংসদে তিনি বলেন, কোটা পদ্ধতি থাকবে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ রাখতে হাইকোর্টের রায় আছে। নতুন করে আন্দোলন দানা বাঁধার প্রেক্ষাপটে সরকারী চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা করতে ওই সময়কার মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে ২০১৮ সালের ২ জুন একটি কমিটি করে সরকার। সরকারী চাকরিতে অষ্টম থেকে তার ওপরে অর্থাৎ প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন কোটা থাকবে না বলে গত ২০ জানুয়ারি সিদ্ধান্ত দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
×