ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বেহাল দশা ॥ পরিণতি কেউ জানে না

বিএনপির ৫৯২ সদস্যের নির্বাহী কমিটির মাত্র দুজন সক্রিয়

প্রকাশিত: ২১:৪৯, ২ জুলাই ২০২০

বিএনপির ৫৯২ সদস্যের নির্বাহী কমিটির মাত্র দুজন সক্রিয়

শরীফুল ইসলাম ॥ বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা ৫৯২। কিন্তু বর্তমানে এই বিশাল কমিটির মাত্র দু’জন নেতা কেন্দ্রীয়ভাবে দলীয় কর্মকান্ডে সক্রিয়। বাকি ৫৯০ নেতাই নিষ্ক্রিয়। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ায় বিএনপির সর্বস্তরে এখন বেহাল দশা বিরাজ করছে। দলটির ভবিষ্যত পরিণতি কি হবে সাধারণ নেতাকর্মীরা কিছুই জানেনা। সূত্রমতে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও বিএনপির ২ প্রভাবশালী নেতা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে সক্রিয় থাকলেও তাদের মধ্যে সমন্বয় নেই। এর মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বসে সংবাদ সম্মেলন করার পাশাপাশি রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় মাঝেমধ্যে দলীয় বিভিন্ন ইউনিট কমিটি আয়োজিত অসহায় মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে অংশ নেন। এর বাইরে আরও ক’জন কেন্দ্রীয় নেতা ঢাকার বাইরে নিজ নিজ এলাকায় দলীয় কর্মকান্ডে সক্রিয় রয়েছেন। লন্ডন প্রবাসী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে খুব একটা পাত্তা দেন না রুহুল কবির রিজভী। তারেক রহমানের নির্দেশে প্রায়ই তিনি অন্য কাউকে কিছু না জানিয়েই দলীয় বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কথা প্রচার করেন। আবার কখনও কখনও তারেক রহমানকে বুঝিয়ে রাজি করিয়ে অন্য কারও সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই দলের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে ফেলেন। এ নিয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করলেও তারেক রহমান নাখোশ হতে পারেন ভেবে কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন না। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার উত্তরার বাসা থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনসহ অনলাইনে বিভিন্ন দলীয় কর্মকান্ডে নিয়মিত অংশ নিয়ে থাকেন। মাঝেমধ্যে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয় থেকেও তিনি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেললন করেন। এ ছাড়া ডক্টর এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)সহ বিভিন্ন সংগঠনের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের সঙ্গে সংযুক্ত থাকেন। সূত্রমতে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কথা দলের অন্য নেতাদের জানান। কখনও কখনও দলীয় কোন কর্মকান্ডের বিষয়ে তিনি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেন। তবে দলে ক্লিন ইমেজের অধিকারী হিসেবে পরিচিত মির্জা ফখরুল কখনও দলীয় কর্মকান্ড নিয়ে কোন বিবাদে জড়াতে চান না। তাই তাকে অবহিত না করেও যদি কোন নেতা দলের কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত প্রচার করেন তাহলে তিনি কাউকে কিছু বলেন না। তবে তিনি তার নিজের মতো করে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, করোনা পরিস্থিতির পর থেকেই দলের অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। তাই দলীয় কর্মকান্ডেও অংশ নিতে পারছেন না। তবে দলের ক’জন নেতা সর্বদা সক্রিয় থেকে কাজ করছেন। এ বিষয়ে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের একজন নেতা বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর কেন্দ্রীয় নেতারা নিষ্ক্রিয় থাকায় তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। কেউ কেউ ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের সঙ্গে সংযুক্ত থাকলেও অধিকাংশ নেতাকর্মীই ঘর থেকে বের হচ্ছে না। এদিকে কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপির দুইজন নেতা ছাড়া অন্য নির্বাহী কমিটির সদস্যরা নিষ্ক্রিয় খাকলেও বিএনপির অঙ্গ সংগঠন ড্যাব ও বিএনপিপন্থী সংগঠন জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন করোনাকালে স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছে। এর মধ্যে ড্যাবের কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ জাহিদ হোসেন। আর জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ডাঃ ফরহাদ হালিম ডোনার। এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে ২ কোটিরও বেশি মানুষকে ত্রাণসামগ্রী দেয়া হয়েছে বলে যে দাবি করা হয়েছে এ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দলের সিংহভাগ নেতা যেখানে ঘর থেকেই বের হন না সেখানে কারা কিভাবে এত লোকের কাছে ত্রাণ পৌঁছাল এ নিয়ে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। খোদ বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যেই কেউ কেউ তা বিশ্বাস করতে চাচ্ছেন না। করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর থেকেই বিএনপির সার্বিক কর্মকান্ড স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ বেশ ক’টি রাজনৈতিক দল ত্রাণ সামগ্রী বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মকান্ড নিয়ে মাঠে সক্রিয় থাকলেও কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপির মাত্র ২ জন ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন এলাকায় আরও কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা সক্রিয় রয়েছেন। এ ছাড়া তৃণমূল পর্যায়ের কিছু নেতা নিজ নিজ এলাকায় অসহায় মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশ নিয়েছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা দলীয় কর্মকান্ডে নিষ্ক্রিয় থাকায় সারাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, রাজনীতির মূল লক্ষ্যই হচ্ছে মানুষের বিপদের দিনে তাদের কাছে থাকা এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা। কিন্তু বেশ কয়েকবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দল বিএনপি করোনাকালে কার্যত নিষ্ক্রিয়। মাত্র ক’জন নেতা ছাড়া অন্য কেন্দ্রীয় নেতারা নিষ্ক্রিয় থাকায় দলের সাধারণ নেতাকর্মীরাও হতাশ। জানা যায়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমানসহ দলের সিংহভাগ কেন্দ্রীয় নেতা ঘর থেকে বের হওয়া থেকে বিরত থাকেন। শুধু তাই নয় তারা দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করাও বন্ধ করে দেন। এ কারণে দলটির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও হতাশ হয়ে দলীয় কর্মকান্ড থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখেন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুসারে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে ৩ বছর পর পর জাতীয় কাউন্সিল করার বাধ্যবাদকতা রয়েছে। কিন্তু সোয়া ৪ বছর আগে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল হয় ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ। বিএনপির গঠনতন্ত্রেও ৩ বছর পর পর জাতীয় কাউন্সিল করে নতুন কমিটি করার কথা রয়েছে। সে হিসেবে বিএনপি এখন চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে। এ ছাড়া তৃণমূল পর্যায়ের অধিকাংশ কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ। কমিটির মেয়াদ না থাকায় নেতারা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ায় সাধারণ নেতাকর্মীরাও দলবিমুখ হয়ে পড়েছে। আর এ কারণে দলটিতে এখন কোন শৃঙ্খলাই নেই।
×