ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে ॥ তবে যে কোন সময় মাথাচাড়া দিতে পারে

প্রকাশিত: ২১:২২, ২ জুলাই ২০২০

জঙ্গী তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে ॥ তবে যে কোন সময় মাথাচাড়া দিতে পারে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জঙ্গীদের তৎপরতা যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে। তবে পুরোপুরি আত্মতৃপ্তিতে থাকার কোন কারণ নেই। কারণ জঙ্গীবাদ এমন একটি বিষয়, যা যেকোন সময় মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। জঙ্গীদের অন্যতম প্রধান টার্গেট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কারণ তাদের সাঁড়াশি অভিযানের কারণেই জঙ্গীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। জঙ্গীদের অন্যতম প্রধান টার্গেট পুলিশকে হত্যা করা। বুধবার যথাযোগ্য মর্যাদায় হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলার চার বছর পূর্তির সেই হৃদয় বিদারক ঘটনা স্মরণ করেছে জাতি। র‌্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলামসহ পুলিশ ও র‌্যাবের উর্ধতন কর্মকর্তারা গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তুরাঁয় নিহতদের ফুল দিয়ে স্মরণ করেন। নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করেন তাঁরা। সেখানে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন দূতাবাসের উর্ধতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত হয়েছিলেন। অনুষ্ঠানিকতা শেষে র‌্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, জঙ্গীবাদ অনেক নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে। তবে আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। এই সফলতা ধরে রাখতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জঙ্গীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। আর যাতে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে এজন্য ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দেশে জঙ্গীবাদের তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে। র‌্যাব এখন পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি জঙ্গীকে গ্রেফতার করতে পেরেছে। জঙ্গীবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। সারা বিশ্ব জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় কাজ করছে। র‌্যাব মহাপরিচালকের সঙ্গে র‌্যাবের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেমসহ উর্ধতন র‌্যাব কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। নিহতদের ফুল দিয়ে ও নীরবতা পালনের মধ্যদিয়ে স্মরণ করার পর ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, জঙ্গীদের প্রধান টার্গেট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। বিশেষ করে পুলিশ তাদের প্রধান টার্গেট। জঙ্গীবাদের তৎপরতা কমে গেলেও পুরোপুরি শেষ হয়নি। করোনা পরিস্থিতিতে অধিকাংশ মানুষ ঘরে অবস্থান করছেন। বাসায় থাকার কারণে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছেন। এমন সুযোগটিকেও কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে জঙ্গীরা। তারা কন্টিনিউয়াসলি করোনার মধ্যেও ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। লোন উলফ বা একাকী হামলার জন্য তারা তাদের সমমনা জঙ্গীদের উদ্বুদ্ধ করছে। হামলার অন্যতম প্রধান টার্গেট পুলিশ। প্রয়োজনে একটি হাতুড়ি নিয়ে হলেও যাতে জঙ্গীরা পুলিশের ওপর হামলা করে, সেজন্য তাদের উদ্বুদ্ধ করছেন জঙ্গীদের নেপথ্য কারিগর ও মাস্টারমাইন্ডরা। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জঙ্গী হামলার ঘটনা ছিল হলি আর্টিজানে। এ সংক্রান্ত মামলায় সাত জন মৃত্যুদ-ের সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গী আপীল করেছে। আপীলের শুনানি এখনও শুরু হয়নি। করোনাকাল কেটে গেলে নিশ্চয়ই কার্যক্রম শুরু হবে। হলি আর্টিজানসহ বেশ কয়েকটি হামলার পর পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। একের পর এক ধারাবাহিক অভিযানের জঙ্গীদের ভিত নড়ে গেছে। তাদের আর আগের মতো কাজ করার সক্ষমতা নেই। আবার মানুষও জঙ্গীবাদ সম্পর্কে বুঝতে পেরেছে। জনসচেতনতা সৃষ্টি হওয়ার কারণে জঙ্গীরা আর তাদের ইচ্ছেমতো তৎপরতা চালাতে পারছে না। এছাড়া কঠোর নজরদারিতো রয়েছেই। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রাযসহ ডিএমপির উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১ জুলাই প্রথম রোজার দিন দিবাগত রাত আটটার দিকে জঙ্গীরা রেস্তরাঁটির ভেতরে হামলা করে ১৭ জন বিদেশী ও তিন জন বাংলাদেশীকে জবাই করে ও গুলি চালিয়ে পৈশাচিক নির্যাতনের পর হত্যা করে। এর আগে সেখানে অভিযান চালাতে গেলে দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেনেড হামলা করে হত্যা করে। সবমিলিয়ে ২২ জনকে হত্যা করে। পরে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো, র‌্যাব, পুলিশসহ সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে পাঁচ জঙ্গীকে হত্যা করতে সক্ষম হয়। জীবিত অবস্থায় বিদেশীসহ ৩৩ জনকে জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করে।
×