ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভৈরব নদ খননের নামে বালু তুলে বাণিজ্য

প্রকাশিত: ১৯:৩৭, ২ জুলাই ২০২০

ভৈরব নদ খননের নামে বালু তুলে বাণিজ্য

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ সীতারামপুরে ভৈরবের বালি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুর ও ডেবা। গোপালগঞ্জ থেকে দুটি ড্রেজার মেশিন এনে নদ খননে নিযুক্ত ঠিকাদারের সঙ্গে বিশেষ রফায় তোলা হচ্ছে এ বালি। এলাকার এক সময়ের বাসিন্দা এখন যশোর শহরে বাস করা বাবলু ও ডাবলু নামে দু’ভাই পরিবেশ বিধি লঙ্ঘন করে মোটা অংকের টাকা হাত বদল করে পুকুর ডোবা সমতল ভূমি করার কাজটি করে যাচ্ছেন। যশোর শহরের বারান্দীপাড়া অংশে বসানো হয়েছে আরও একটি ড্রেজার মেশিন। সেখানেও পাবলিকের সঙ্গে চুক্তি করে চলছে পুকুর ডোবা ও নিচু জমি ভরাটের ব্যবসা। জানা গেছে, যশোর সদরের বালিয়াডাঙ্গার মৃত আবু মিয়ার ছেলে যশোর শহরে বাস করা বাবলু ও ডাবলুর মালিকানাধীন সীতারামপুরের একটি পুকুর ও পাশের দুটি ডোবা ভরাট করছে। এক থেকে দেড় কিলোমিটার দূরের ভৈবর নদ থেকে পাইপের মাধ্যমে বালি আনা হচ্ছে। গত দু’ সপ্তাহ ধরে চলছে বালি তোলার কাজ। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, দু শ’ গজের ব্যবধানে দুটি ড্রেজার মেশিন। কাক ডাকা ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে মেশিন দুটি। যত দ্রুত পুকুর ভরাট হবে তত দ্রুত টাকা যাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিযুক্ত লোকজন ও ড্রেজার মেশিন কর্তৃপক্ষের পকেটে। পুকুর ভরাটে ব্যস্ত সহোদর সমতল ভূমিতে বিশাল ব্যবসা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের স্বপ্ন দেখছেন। জানা গেছে, সীতারামপুর অংশে ভৈরবের কয়েক কিলোমিটারের মাটি কাঁদা বালি ওই ড্রেজার মেশিন দিয়ে উত্তোলন করে পাবলিকের সঙ্গে গোপন চুক্তির মাধ্যমে অর্থবাণিজ্য করা হচ্ছে। গোপালগঞ্জ থেকে দুটি ড্রেজার মেশিন আনা হয়েছে। একটি মেশিনের মালিক বাগেরহাটের আব্দুল কাদের। এই মেশিনটি চালাচ্ছেন ইয়াসিন নামে গোপালগঞ্জের এক মেশিনম্যান। অপর ড্রেজার মেশিনের মালিক গোপালগঞ্জ কোটালিপাড়া টুটপাড়ার কামরুল শেখ। তারা মোটা টাকার চুক্তিতে মিটার ও সিইফটি চুক্তিতে বালি উত্তোলন করে দিচ্ছে। এ ব্যাপারে ড্রেজার মেশিন মালিক কামরুল শেখ জানিয়েছেন, সীতারামপুর এলাকার চার কিলোমিটারের ঠিকাদার গোপালগঞ্জ মকছেদপুরের পলাশ তাদের চুক্তি করে এনেছেন। তারা ১শ’ মিটার পর্যন্ত ১৬ ফিট গভীর করে মাটি ও কাঁদা বালি উত্তোলন করে দেবেন। তবে ওই বালি কাঁদা কোথায় ফেলা হবে তা ঠিকাদারের নির্দেশনায় হচ্ছে। কয়েকটি পুকুর ভরাটের কাজ চলছে। ওই পুকুর ও পাশের কয়েকটি ডোবা ভরাট করতে দুটি মেশিনে এক মাস সময় লেগে যেতে পারে। আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুকুর মালিকের সঙ্গে কত টাকায় চুক্তি করেছে তা তার জানা নেই। তবে ড্রেজার মেশিনে কাজ করা এক শ্রমিক জানিয়েছেন, নয় লাখ টাকা চুক্তিতে বালি উত্তোলন ও পুকুর ডোবা ভরাটের কাজ চলছে। এতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও তাদের নিযুক্ত লোকজন এক ঢিলে দু’পাখি শিকার করছেন। একদিকে সরকারের কাছ থেকে ভৈরব খনন বিল উত্তোলন করছেন। আবার পাবলিকের পুকুর ভরাট করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। বারান্দীপাড়া এলাকায় নদে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে পাইপ লাগিয়ে নিচু জমি, পুকুর ও ডোবা ভরাট করা হচ্ছে। এলাকার কয়েক ডজন লোকের এ ধরনের জমি ভরাট করে ২০ লাখ টাকার মতো বাণিজ্য করেছে অপর একটি অসাধু চক্র। এভাবে গত এক বছরে মোটা অংকের টাকার ব্যবসা করছে নদের বালিকে পুঁজি করে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিযুক্ত লোকজন ড্রেজার মেশিন পরিচালনাকারী ও সাইড দেখাশোনাকারী এবং দালাল চক্রের মাধ্যমে অর্থ বাণিজ্য করছে। আবার পুকুর ডোবা ভরাটের বেলায় পরিবেশ আইন মানা হচ্ছে না। এসব নিয়ে এলাকাগুলোতে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা এর প্রতিকার দাবি করেছেন। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম জানিয়েছেন, নদ খননে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হয়েছে। পাউবো খনন বুঝে নেবে নদের পাড় সীমানা। কিন্তু ড্রেজার মেশিন বসিয়ে পাবলিককে বালি দেয়া, কারো ব্যক্তিগত পুকুর ডোবা ভরাট ও অর্থ বাণিজ্যের বিষয়ে তিনি অবগত নন। ওই সব অংশে কাউকে বালি মাটি বিক্রি করার অনুমতিও দেয়া হয়নি। যে চক্রটি মানুষকে বোকা বানিয়ে ভরাটের নামে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ আসছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নদ কাটতে বলা হয়েছে, কারও ডোবা, পুকুর নিচু জমি ভরাটের দায়িত্ব দেয়া হয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে।
×