ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা

টাঙ্গাইলে ইজিবাইক বৈধতা দেয়ার নামে বাণিজ্য

প্রকাশিত: ১৯:৩৬, ২ জুলাই ২০২০

টাঙ্গাইলে ইজিবাইক বৈধতা দেয়ার নামে বাণিজ্য

ইফতেখারুল অনুপম, টাঙ্গাইল ॥ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বাণিজ্য করে টাঙ্গাইল পৌরসভার বিরুদ্ধে অবৈধ ইজিবাইক বৈধতা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। সরকারীভাবে পৌরসভার ফি ১০ হাজার ৫০০ টাকা নেয়ার কথা থাকলেও প্রতিটি ইজিবাইকের প্লেট ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে পৌর কর্তৃপক্ষ। ফলে আগের চেয়ে আরও এক হাজার ইজিবাইক বৃদ্ধি করায় এক-তৃতীয়াংশ ইজিবাইকের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। এতে আগের যেকোন সময়ের তুলনায় যানজট বেশি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা যায়, দিন দিন টাঙ্গাইলে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। অতিরিক্ত ইজিবাইক বেড়ে যাওয়ায় যানজটের শহরে পরিণত হয়েছে টাঙ্গাইল পৌর এলাকা। এছাড়া ইজিবাইকের বেপরোয়া চলাচল ও চালকের অদক্ষতার কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। যানজটের চরম ভোগান্তি ও দুর্ভোগ থেকে শহরবাসীকে রেহাই দিতে বিগত ২০১৮ সালের এপ্রিল মাস থেকে ৩ হাজার ইজিবাইককে দুই শিফটে ভাগ করে দেয়া হয়। এক হাজার পাঁচ শ’ ইজিবাইককে লাল রং ও অপর এক হাজার পাঁচ শ’ ইজিবাইককে হলুদ রঙে চিহ্নিত করে দেয়া হয়। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এক রঙের ইজিবাইক চলবে। আর দুপুর ২টা হতে রাত ৮টা পর্যন্ত অপর ইজিবাইকগুলোকে শহরে চলাচল করতে হবে। দুই শিফট করার পরও টাঙ্গাইল শহরে অটোজট লেগেই থাকে। করোনাভাইরাসের কারণে টাঙ্গাইল শহরে মানুষের যাতায়াত কমে গেছে। তাই ইজিবাইকের সংখ্যাও কম। এই সুযোগে টাঙ্গাইল পৌরসভা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশ করে আর এক হাজার অবৈধ ইজিবাইককে বৈধতা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু কোন ইজিবাইকের মালিক সরাসরি নম্বর-প্লেট নিতে পারবে না। কাউন্সিলর বা তাদের সিন্ডিকেটের কোন সদস্যদের মাধ্যমে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার বিনিময়ে সেই নম্বরপত্র নিতে হবে। কোন ইজিবাইকের মালিককে সরাসরি নম্বর-প্লেট দেয়া হয় না। পৌরসভার একটি সূত্র জানায়, এক হাজার ইজিবাইকের নম্বর-প্লেটের প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় কয়েক প্রভাবশালী নেতার মাঝে বণ্টন করে দেয়া হয়। এর মধ্যে পৌরসভার কয়েক কাউন্সিলর ও একজন প্যানেল মেয়রও রয়েছেন। আর এই প্যানেল মেয়রের মাধ্যমেই বেশিরভাগ নম্বর-প্লেট বিতরণ করা হয়। আবার তিনি নিজেই তার সহযোগীদের দিয়ে সেগুলো বিক্রি করে যাদের নামে বরাদ্দ তাদের কাছে টাকা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। টাঙ্গাইল ট্রাফিক পুলিশের এক সার্জন জানান, দিন দিন শহরে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি পৌর কর্তৃপক্ষ এক হাজার ইজিবাইকের লাইসেন্স দিয়েছে। আর সেগুলো ৮০ থেকে এক লাখ টাকায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিক্রি করেছেন। এখন করোনার কারণে সেই রেজিস্ট্রেশনের মূল্য ৭০ হাজারে নেমে এসেছে। আমাদের তো এ বিষয়ে কিছুই করার নেই। আমাদের দায়িত্ব শহর যানজটমুক্ত রাখা। কিছু বলতে গেলেই উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। পৌরসভার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জোগসাজশে অতিরিক্ত এক হাজার লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। এগুলোর কোন বৈধতা নেই। শুধু স্টিকার দিয়েই চলছে এসব অবৈধ ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক। ৩৬০১ নম্বর-প্লেটের মালিক আলামিন নামের এক ইজিবাইক চালক জানান, ছয় মাস আগে তিনি এক লাখ টাকা দিয়ে ওই নম্বর-প্লেটটি কিনেছেন। তবে তাকে এখন পর্যন্ত ডিজিটাল নম্বর-প্লেট দেয়া হয়নি। ৩২৭৭ সিরায়ালের নম্বর-প্লেটটিও আরেক চালক মোসলেম উদ্দিন প্রতিদিন ৬০ টাকা করে ভাড়া দিয়ে ইজিবাইক চালাচ্ছেন। ৩৮৯৫ সিরিয়ালের মালিক সোনা মিয়া জানান, তিনি ৯৫ হাজার টাকায় এটি একজন কাউন্সিলরের মাধ্যমে কিনেছেন। এখন তিনি এটি প্রতিদিন ৬০ টাকা করে ভাড়া দিচ্ছেন। তার কাছে আরও দুটি রয়েছে। সেগুলোও মাসিক হিসেবে ভাড়া দেয়া হয়েছে। টাঙ্গাইল পৌরসভার সহকারী কর আদায়কারী রণজিত চন্দ্র পাল জানান, প্রতিটি ইজিবাইকের লাইসেন্স নতুন নিবন্ধন করতে হলে সরকারী ফি ১০ হাজার ৫০০ টাকা এবং নবায়ন করতে ভ্যাটসহ এক হাজার ৭২৫ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে শহরে কত ইজিবাইক রয়েছে এবং নতুন নিবন্ধনের জন্য সরকারী ফির অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন কিনা এ বিষয়ে তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
×