ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা রাখা যাবে ॥ প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০০:৩৫, ১ জুলাই ২০২০

সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা রাখা যাবে ॥ প্রতিমন্ত্রী

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সীমিত পরিসরে যেভাবে অফিস চলছে, তা আগামী ৩ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এছাড়া ১ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা রাখা যাবে বলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন। খবর বিডিনিউজের। তিনি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘যেভাবে সীমিত পরিসরে কর্মকাণ্ড চলছে সেভাবেই আগামী ৩ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। মানুষকে সচেতন করতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এবং তথ্য মন্ত্রণালয় প্রচার-প্রচারণা চালাবে।’ সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে দোকানপাট খোলা রাখার সময় তিন ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে বলে বলে জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী। এতদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা রাখা যেত। মঙ্গলবারই এ বিষয়ে আদেশ জারি করা হবে জানিয়ে ফরহাদ বলেন, সেখানে বিস্তারিত দিকনির্দেশনা দেয়া হবে। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে চলা টানা ৬৬ দিনের লকডাউন ওঠার পর গত ৩০ মে থেকে সীমিত পরিসরে অফিস চলছে। এই সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে জারি করা নির্দেশনাগুলো কঠোরভাবে অনুসরণের পাশাপাশি সবাইকে মাস্ক পরে অফিস করতে হচ্ছে। বয়স্ক, অসুস্থ ও সন্তান সম্ভবাদের এ সময় অফিসে যেতে মানা করা হয়েছে। একসঙ্গে ২৫ শতাংশের বেশি কর্মকর্তার অফিসে থাকায় মানাও করা হয়েছে। রাত ১০টা থেকে ৭ ঘণ্টা বাসস্থানের বাইরে যাওয়া নিষেধ ॥ এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সীমিত চলাচলের নতুন নির্দেশনায় বাসস্থানের বাইরে থাকার সময় বেড়েছে তিন ঘণ্টা। মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, রাত ১০টা থেকে সকাল ৫টা পর্যন্ত অতীব জরুরী প্রয়োজন ব্যতীত (প্রয়োজনীয় ক্রয়-বিক্রয়, কর্মস্থলে যাতায়াত, ওষুধ ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মরদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) বাসস্থানের বাইরে আসা যাবে না। খবর বাংলানিউজের। বাসস্থানের বাইরে মাস্ক পরিধান করা, পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। করোনা সংক্রমণ রোধে গত ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত টানা ছুটি শেষে ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত চলাচল সীমিত করে অফিস-আদালত এবং গণপরিবহন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়। সেই মেয়াদ পরে ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। আগের নির্দেশনায় রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত বাড়ির বাইরে আসা নিষেধ ছিল। অসুস্থদের অফিসে আসা মানাসহ সরকারের ১১ দফা নির্দেশনা ॥ করোনা সংক্রমণ রোধে এক মাসের জন্য চলাচল সীমিত করে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। এতে সরকারী অফিস, গণপরিবহন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান শর্ত দিয়ে চালু রাখার নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মঙ্গলবার রাতে ঝুঁকিপূর্ণ, অসুস্থ কর্মচারী ও সন্তানসম্ভবা নারী কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত রাখাসহ ১১ দফা নির্দেশনা জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, সীমিত পরিসরে যেভাবে অফিস, গণপরিবহন চলছে, নতুন নির্দেশনায় সেভাবে চলবে। এ সময়ে সীমিতভাবে সরকারী-বেসরকারী অফিস চলমান থাকবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহনও (বাস, লঞ্চ ও ট্রেন) চালু থাকবে। সরকারের নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- ১. আগামী ১ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত এ নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত থাকবে। সাপ্তাহিক ছুটি এ নিয়ন্ত্রণের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ২. রাত ১০টা থেকে সকাল ৫টা পর্যন্ত অতীব জরুরী প্রয়োজন ব্যতীত (প্রয়োজনীয় ক্রয়-বিক্রয়, কর্মস্থলে যাতায়াত, ওষুধ ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মরদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) বাসস্থানের বাইরে আসা যাবে না। বাসস্থানের বাইরে মাস্ক পরিধান করা, পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৩. হাটবাজার, দোকানপাটে ক্রয়-বিক্রয়কালে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অনান্য স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালন করতে হবে। শপিংমলের প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। শপিংমলে আসা যানবাহনসমূহকে অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। হাটবাজার, দোকানপাট ও শপিংমলসমূহ আবশ্যিকভাবে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে। ৪. সরকারী/স্বায়ত্তশাসিত/ বেসরকারী অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা ও সেবা প্রতিষ্ঠানসমূহ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ জারিকৃত স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করে খোলা থাকবে। ৫. গণপরিবহনসহ সব ধরনের যানসমূহ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ জারিকৃত স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করে চলাচল করবে। ৬. উক্ত নিয়ন্ত্রণকালে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে না। তবে অনলাইন কোর্স-ডিস্টেন্স লার্নিং অব্যাহত থাকবে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রশাসনিক কার্যাবলী চালাতে পারবে। ৭. উক্ত সময়ে সব প্রকার সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত ও অনুষ্ঠান আয়োজন বন্ধ থাকবে। ধর্ম মন্ত্রণালয় সময় প্রদত্ত নির্দশনা প্রতিপালনপূর্বক মসজিদে জামায়াতে নামাজ আদায় ও অন্যান্য উপাসনালয়ে প্রার্থনা পরিচালনা করা যাবে। ৮. স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রণীত ‘কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঝুঁকি জোনভিত্তিক সংক্রমণ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন কৌশল/গাইড’ অনুসরণ করে জোনিং সিস্টেম বাস্তবায়ন করতে হবে। রেড জোন ঘোষণা করে সে এলাকায় কেবল গুরুতর সংক্রমিত পরিসীমাকে লকডাউনের আওতায় আনতে হবে। সেখানে সর্বসাধারণের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিষয়াদির সরবরাহ/প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর এ বিষয়ে সুস্পষ্ট অনুমোদন ও নির্দেশনা প্রদান করবে। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ও অন্যান্য এলাকায় জেলা প্রশাসন এ সংক্রান্ত কার্যাবলীর সার্বিক সমন্বয় করবে। ৯. আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-আজহার সময় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ জারিকৃত স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ অনুসরণপূর্বক কোরবানির পশুরহাট আয়োজনের অনুমতি প্রদান করা যাবে এবং উল্লিখিত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন ও জনচলাচল অব্যাহত থাকবে। ১০. ঝুঁকিপূর্ণ, অসুস্থ কর্মচারী এবং সন্তানসম্ভবা নারী কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকবে। এক্ষেত্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে জারিকৃত নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। ১১. জনসাধারণকে কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য করণীয় বিষয় অনুসরণের লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং তথ্য মন্ত্রণালয় সারাদেশে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে ব্যাপক প্রচার ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সব মন্ত্রণালয়/বিভাগের সচিব ও সিনিয়র সচিবদের পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
×