ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির আসল চেহারা বেরিয়ে পড়েছে ॥ আইনমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২২:৩৪, ১ জুলাই ২০২০

বিএনপির আসল চেহারা বেরিয়ে পড়েছে ॥ আইনমন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার ॥ দেশের বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন নয় উল্লেখ করে স্বাধীনতার পূর্বে পাকিস্তান আমলের আদলে আইন প্রণয়ন করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির সংসদ সদস্য মোঃ হারুনুর রশীদ। এ নিয়ে জাতীয় সংসদে সরকারী দলের সংসদ সদস্যরা তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ জানালে জবাবে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘বিএনপির আসল চেহারা বেরিয়ে পড়েছে। তারা আবারও পাকিস্তানে যেতে চান।’ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আনীত ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনাকালে বিচার ব্যবস্থার কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপির সংসদ সদস্য মোঃ হারুনুর রশীদ। তিনি বলেন, সরকারী দলের বিপক্ষে রায় দেয়ায় অনেক অধঃস্তন বিচারককে তিন থেকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। এমন নজিরবিহীন ঘটনাও ঘটেছে। সেটা পত্র-পত্রিকায় ঢালাওভাবে আসছে। তাই আমি মনে করি বিচার ব্যবস্থাকে স্বাধীন করতে আমাদের স্বাধীনতার পূর্বে যে লক্ষ্য উদ্দেশ্য ছিল, সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে আমরা পূরণ করার জন্য আইন প্রণয়ন করব। এ সময় সরকারী দলের সংসদ সদস্যরা প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। তারা হৈ-হট্টগোল শুরু করেন। ফ্লোর ছাড়াই অনেকেই নিজ আসন থেকে চিৎকার করে প্রশ্ন করতে থাকেন- ‘তাহলে কী পাকিস্তানে ফিরে যাবো?’ তখন সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ আরও জোর দিয়ে বলেন, ‘হ্যাঁ, পাকিস্তান আমলে। স্বাধীনতা-উত্তর পাকিস্তান আমলের কথা বলেছি। স্বাধীনতার পূর্বের কথা বলছি। তখন বিচার ব্যবস্থা অনেক ভাল ছিল।’ এই বক্তব্যে সংসদের অধিবেশন কক্ষে উত্তেজনা বেড়ে যায়। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন। আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। বিএনপির এমপির বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘তার (হারুনুর রশীদ) আসল চেহারা বেরিয়ে গেছে। শুধু পাকিস্তান যেতে চান না, তারা (বিএনপি) সব কিছু নিয়ে পাকিস্তান যেতে চান। কিন্তু আমরা সেখানে (পাকিস্তান) যাবো না। সেখানে কোনদিনই ন্যায়বিচার ছিল না। আমরা দেশে ন্যায়বিচার দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমরা কি দেখেছি, সেটা জানানো দরকার। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর ইনডিমিনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল। আজকে উনি (বিএনপির এমপি হারুন) সংসদে বলছেন ন্যায়বিচারের কথা। শেখ হাসিনার সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যার মামলা শেষ করেছে। এর মাধ্যমে ন্যায়বিচার হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এর আগে সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, সরকারের সদিচ্ছা থাকতে হবে- আমি বিচার বিভাগকে স্বাধীন করব কিনা। বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়। বিচার বিভাগ এখনও নির্বাহী বিভাগের অধীন। বিচার বিভাগ, উচ্চ আদালতে বিভিন্ন নির্দেশে বিচারকার্য পরিচালিত হচ্ছে। এটি আমাদের সত্যিকার অর্থে ন্যায় ও সঠিক বিচারের অন্তরায়। দেশের প্রায় ৫০ বছর স্বাধীনতার পার হয়েছে। কিন্তু এখনও আমাদের দেশে বিচার ব্যবস্থাকে স্বাধীন করতে পারেনি। আজকে বলতে দ্বিধা নাই- সারাদেশে চিহ্নিত মাদক সম্রাট, চিহ্নিত মাদক পাচারকারী, চিহ্নিত বাংলাদেশের সরকারী সম্পদ আত্মসাতকারীরা বিচারের আওতায় বাইরে। যদি তারা সরকারী দল সমর্থিত হয় তাহলে তো কোন কথা নেই। বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, বিচার ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জন্য আইনমন্ত্রী যে অর্থ দাবি করেছেন, ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য যদি আরো অর্থের প্রয়োজন হয়, সেই অর্থও আমরা অবশ্যই দেব। কিন্তু আজকে বিচার ব্যবস্থার যে দুরবস্থা, এই দুরবস্থা থেকে কেউ রেহায় পাচ্ছেন না। আজকে মিথ্যা মামলায় হাজার হাজার নেতাকর্মী রাস্তায় ঘুরছে। পুলিশ বাদী ও সাক্ষী হয়ে যেসব মামলা দেয়া হচ্ছে, সেই মামলায় বিরোধীদলীয় হাজার হাজার নেতাকর্মী রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে, আদালতে ঘুরছে, সুপ্রীমকোর্টে ঘুরছে। এই অবস্থা থেকে আমাদের মুক্তির একমাত্র উপায় বিচার ব্যবস্থাকে স্বাধীন করতে হবে।
×