ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লকডাউন বাস্তবায়নে তিন স্তরে কমিটি গঠন শুরু

প্রকাশিত: ২২:৩৩, ১ জুলাই ২০২০

লকডাউন বাস্তবায়নে তিন স্তরে কমিটি গঠন শুরু

মশিউর রহমান খান ॥ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সরকার নির্ধারিত রেড জোন এলাকায় লকডাউন বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার নির্দেশিত মাঠ পর্যায়ের তিন স্তরের বাস্তবায়ন কমিটি গঠনের কাজ শুরু করছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। সোমবার দেশের সকল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক লকডাউন (জোনিং সিস্টেম) বাস্তবায়নে সমন্বিত স্ট্যান্ডার্ট অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) তৈরির পর তাতে দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী এসব কমিটি গঠনে দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছে সংস্থা দুটি। ডিএনসিসিন ও ডিএসসিসি সূত্র জানায়, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই এসব কমিটি গঠন করে লকডাউন বাস্তবায়নে কাজ শুরু করবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এসওপিতে দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী প্রত্যেক সিটি কর্পোরেশন জোনিং সিস্টেম সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে তিন ধরনের কমিটি গঠন করছে সংস্থা দুটি। কমিটিগুলো হচ্ছে, সিটি কর্পোরেশন পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা কমিটি, ওয়ার্ড ব্যবস্থাপনা কমিটি ও প্রতিটি উপ অঞ্চল পর্যায়ে সাবজোন বা স্পট ব্যবস্থাপনা কমিটি। উক্ত কমিটিতে মেয়রকে প্রধান করে ও স্থানীয় সকল সংসদ সদস্যকে উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত করে ১৪ সদস্যের কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠর করবে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মেয়রের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে মঙ্গলবার একটি সভাও সম্পন্ন করেছে। সভা শেষে রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছেন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। মেয়র আগামী ৪ জুলাই ভোর ৬টা থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত রাজধানীর ওয়ারী এলাকা লকডাউন ঘোষণা করেন। আগামী তিন দিন মাইকিং করে লকডাউনের প্রস্তুতিগুলো এলাকাবাসীর কাছে তুলে ধরা হবে বলেও জানান মেয়র। যেভাবে কাজ করবে তিন স্তরের কমিটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা কমিটি ॥ মেয়রকে সভাপতি ও স্থানীয় সকল সংসদ সদস্যকে উপদেষ্টা ও সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব হিসেবে যুক্ত করে ১৪ সদস্যের কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা কমিটিতে অন্য সদস্যরা হলেন, সিটি কর্পোরেশেনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রতিনিধি হিসেবে উক্ত বিভাগ মনোনিত একজন পরিচালক বা উপপরিচালক। ডিএমপির পুলিশ কমিশনার বা জেলা পুলিশ সুপারের একজন যোগ্য প্রতিনিধি স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিনিধি, সশস্ত্র বাহিনীর একজন প্রতিনিধি, আইইডিসিআর এর প্রতিনিধি, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি, এ টু আই কর্তৃপক্ষের সিস্টেম এনালিস্ট বা প্রোগ্রামার, সংশ্লিষ্ট সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনে কাউন্সিলর, এনজিও প্রতিনিধি, ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি। ১০টি নির্ধারিত কার্যপরিধি নির্ধারণ করা হয়েছে। যা উক্ত কমিটি বাস্তবায়ন করবে। সেগুলো হচ্ছে, উক্ত কমিটি স্বাস্থ্য অধিদফতর চিহ্নিত রেড জোন থেকে অগ্রাধিকার বা পারিপার্শ্বিক সক্ষমতা বিবেচনা করে সাব জোন বা স্পট বাছাই করবে। সংশ্লিষ্ট স্পটকে ভৌগোলিকভাবে নির্দিষ্ট করে সাব জোনিং সিস্টেম বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। নির্ধারিত সাব জোন বা স্পটকে লকডাউনসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করা, ওয়ার্ড ব্যবস্থাপনা কমিটিকে প্রয়োজনীয় গাইডলাইন প্রদান করা, আইসোলেশন সেন্টার স্থাপনে সহযোগিতা করা, লকডাউন এলাকার সংক্রমণ হার মনিটরিং করা, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগকে প্রতি সপ্তাহে হালনাগাদ তথ্য প্রদান করা, বিভিন্ন সময়ে সরকার কর্তৃক অর্পিত অন্যান্য দায়িত্ব পালন করা। উক্ত কমিটি ইচ্ছে করলে সদস্যদেরকে কো অপ্ট করতে পারবে ও সময় সময় সকলকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বয় সভা করতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক চিহ্নিত রেড জোন এলাকায় এসওপি অনুযায়ী জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে হবে। সোমবার বিকেলে দেশের ১২টি সিটি কর্পোরেশনে এ সংক্রান্ত পাঠান চিঠিতে বলা হয়, তিন স্তরের কমিটি তাদের উর্ধতনদের সঙ্গে কথা বলে যেকোন সময় বিশেষ কারণে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে। এছাড়া বাকি কমিটি গঠনের দায়িত্ব পালন করবে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা কমিটি। এজন্য সংশ্লিষ্টদেরকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করে নির্দেশনা প্রদান করবে। ওয়ার্ড ব্যবস্থাপনা কমিটি ॥ ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিতে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে আহ্বায়ক ও সংশ্লিষ্ট এলাকার সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে এগারো সদস্যের কমিটি গঠন করবে। কমিটিতে সংরক্ষিত আসনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে সদস্য হিসেবে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সশস্ত্র বাহিনীর ফোকাল পার্সন, সংসদ সদস্য কর্তৃক মনোনিত জনপ্রতিনিধি বা নেতৃবৃন্দ, ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট এলাকার কল্যাণ সমতির প্রতিনিধি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি বা স্থানীয় মসজিদের ইমাম, এনজিও প্রতিনিধি থাকবে। কমিটি প্রয়োজনে সদস্য কো অপ্ট করতে পারবে। কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী সাব জোনিং বা লকডাউন বাস্তবায়ন করবে ও এজন্য জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে জনসচেতনতামূলক প্রচার করবে ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় নাগরিক সুবিধা বজায় রাখতে সহযোগিতা করবে। প্রয়োজনীয় স্বেচ্ছসেবী প্রতিষ্ঠান বা স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা, সাব জোন বা স্পট ব্যবস্থাপনা কমিটিকে গাইডলাইন দেয়া, সবাইকে নিয়ে সমন্বয় সভা করা ও কেন্দ্রীয় কমিটিকে রিপোর্ট করা ও সরকারের বিভিন্ন নির্দেশ বাবাস্তবায়ন করা ও অর্পিত দায়িত্ব পালন করা। সাব জোন বা স্পট ব্যবস্থাপনা কমিটি ॥ সাবজোন বা স্পট ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রতিটি ওয়ার্ডকে ৮-১০টি অঞ্চলে ভৌগোলিকভাবে বিভক্ত করে তা সীমাবদ্ধ করে জোনিং সিস্টেম বাস্তবায়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করবে। ওয়ার্ড কাউন্সিলর কর্র্তৃক মনোনিত স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে আহ্বায়ক করে মোট ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করবে। অন্য সদস্যরা হলেন, এনজিও প্রতিনিধি, মসজিদের ইমাম ও মসজিদ কমিটির একজন, স্থানীয় কল্যাণ সমিতির একজন, যুব বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধি, বিশিষ্ট ২ ব্যক্তি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবর্নিং বডির ১ জন ও শিক্ষক ১ জন, নারী সমাজসেবী একজন সদস্য রাখবে। কমিটি ইচ্ছে করলে সদস্য কো অপ্ট করতে পারবে। এছাড়া কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা, প্রচার করা, মসজিদের মাইকে সতর্কীকরণ বার্তা দেয়া, কোভি-১৯ ও নন কোভিড-১৯ রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করা, হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা, আইসোলেশন কেন্দ্র স্থাপন করা, টেলিমেডিসিন সার্ভিস চালু করে সাহায্য প্রদান, রোগী পরিবহনে এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা, মৃতদের দাফন বা সৎকারের ব্যবস্থা করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর্থিক বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, দোকান রেস্তরাঁ শপিংমল চালু রাখা বা বন্ধ রাখার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া, গণপরিবহন বা মালবাহী যান চলাচল করা, মসজিদ বা ধর্মীয় উপসনালয়ে যোগদান করা, জনসাধারণের চলাচল নিশ্চিত করাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সবরাহে ব্যবস্থা করবে। এছাড়া বস্তিবাসী বা লকডাউনের কারণে কর্মহীনদেরকে খাদ্য ব্যবস্থাপনা করবে। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ স্বোচ্ছাসেবী নিয়োগ করা ও তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এছাড়া রেড জোনে সপ্তাহে বিশেষ ব্যাগে কোভিডের জন্য ব্যবহারিক বর্জ্য সংগ্রহ করা হবে ও তা ডিসপোজালের ব্যবস্থা করবে। এছাড়া সেবচ্ছসেবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য তাদের মোবাইল নাম্বারগুলো লিফলেট আকারে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিবে। ৪ জুলাই থেকে ওয়ারী লকডাউন- মেয়র তাপস ॥ রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের লকডাউন বাস্তবায়ন কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রস্তুতি বৈঠক শেষে নগর ভবনে মেয়র এই ঘোষণা দেন। আগামী ৪ জুলাই ভোর ৬টা থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত রাজধানীর ওয়ারী এলাকা লকডাউন ঘোষণা করেন মেয়র। ডিএসসিসির ৪১নং ওয়ার্ডের ওয়ারীর টিপু সুলতান রোড, জাহাঙ্গীর রোড, ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে (জয়কালী মন্দির থেকে বলধা গার্ডেন) এবং ইনার রোড হিসেবে লালমিনি রোড, হরে রোড, ওয়ার রোড, রানকিন রোড এবং নওয়াব রোড। এ সময় সমস্ত কিছু বন্ধ থাকবে। তবে চলাচলের জন্য দুটি সড়ক খোলা থাকবে। লকডাউন এলাকায় করোনা নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া অন্যান্য জরুরী সেবাগুলো দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। আগামী তিন দিন মাইকিং করে লকডাউনের প্রস্তুতিগুলো এলাকাবাসীর কাছে তুলে ধরা হবে। মেয়র তাপস বলেন, লকডাউন এলাকায় নন কোভিড রোগীদের চিকিৎসার প্রয়োজন হলে সেটা দেয়া হবে। শুধু ওষুধ, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহের ব্যবস্থা থাকবে। তাছাড়া দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সামগ্রী ই-কমার্সের মাধ্যমে মিনাবাজার, স্বপ্নসহ অন্যান্যরা সরবরাহ করবে। সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেয়া হবে। সেখানে করোনার নমুনা সংগ্রহ বুথ থাকবে। তাছাড়া ডিএসসিসির মহানগর জেনারেল হাসপাতালকে কার্যকর করে আইসোলেশন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
×