স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু আরও কিছুটা বেড়ে ৭২ দশমিক ৬ বছর হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস। এছাড়াও সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৬৫ লাখ। সামাজিক অনেক সূচকে দেশের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। ২০১৮ সালের চেয়ে ২০১৯ সালের হিসাবে প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল বেড়েছে বলেও জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত ‘মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস অব বাংলাদেশ (এমএসভিএসবি) ৩য় পর্যায়’ প্রকল্পের মাধ্যমে পরিচালিত এক জরিপের ফলে এ তথ্য উঠে এসেছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএসের সম্মেলন কক্ষে এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হয় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। এছাড়াও বক্তৃতা করেন বিবিএসের উপ-মহাপরিচালক ঘোষ সুব্রত। প্রকল্প পরিচালক একেএম আশরাফুল হক প্রতিবেদনের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, উন্নয়নে সঠিক তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাঠপর্যায় থেকে বিশুদ্ধ তথ্য তুলে আনতে হবে। এ বিষয়টি সবাইকে মনে রাখতে হবে যে, তথ্য যত সঠিক হবে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ততই বাস্তবসম্মত হবে। প্রতিবেদনটি ইংরেজীর পাশাপাশি বাংলাতে না করায় পুনরায় তাগিদ দিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। মূল বইটা পুরোপুরি ইংরেজীতে করা হয়েছে। আমি বারবার বলে আসছি, ইংরেজীকে সম্মান করি, খুবই প্রয়োজন আছে, কিন্তু প্রতিবেদনটাকে যদি দেশের মানুষের মধ্যে, জেলা, উপজেলা, প্রশাসনে, রাজনীতিতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, কলেজে ছড়াতে হলে এটা বাংলায় করতে হবে। বাংলায় করলে প্রতিবেদনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। বোধগম্য হবে। আবার আপনাদের সামনে বলব, এটাকে বাংলায় করেন। খুব সাবধানে বাংলা করেন। পন্ডিত ব্যক্তিদের দেখিয়ে নেন, যাতে ভাষাটা সঠিক থাকে, পরিশুদ্ধ হয়। বিবিএসের দীর্ঘ কয়েক দশকের ইতিহাসে সবসময় ইংরেজীতে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। গত বছর পরিকল্পনামন্ত্রীর সুপারিশে প্রথমবার ইংরেজীর পাশাপাশি বাংলাতেও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এই প্রতিবেদন শুধু ইংরেজীতেই প্রকাশ করা হলো। এম এ মান্নান আরও বলেন, পরিসংখ্যানের গুরুত্ব যে কত বেশি, আমি বুঝিয়ে বলতে পারব না। এর গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। আমরা অনেকেই এখনও এ বিষয়ে সচেতন নই। তবে সচেতন হতে বাধ্য হব। কারণ পরিসংখ্যানের কোন বিকল্প নেই। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিসংখ্যা ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব বলেন, দেশের উন্নতির যে কয়েকটি মূল সূচক প্রকাশ করা হয় তার প্রায় সব কটিই এই সার্ভে থেকেই পাওয়া যায়। এর মধ্য দিয়ে আমরা অন্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের আর্থ-সামজিক অবস্থার পরিমাপ করি। এবারের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আর্থ-সামাজিক অনেক সূচকেই বাংলাদেশের চেয়ে শুধু শ্রীলঙ্কেই কিছুটা এগিয়ে। ভারত, পাকিস্তান ও নেপালসহ অনেক দেশ আমাদের পেছনে রয়েছে।
বিবিএসের হিসাবে, পুরুষের গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১ দশমিক ১ বছর। অন্যদিকে নারীর গড় আয়ু ৭৪ দশমিক ২ বছর। এর মানে, এ দেশে নারীরা পুরুষের চেয়ে গড়ে বেশি দিন বাঁচেন। ২০১৮ সালে এদেশে গড় আয়ু ছিল ৭২ দশমিক ৩ বছর। এ সময় পুরুষের গড় আয়ু ছিল ৭০ দশমিক ৮ বছর এবং নারীর ৭৩ দশমিক ৮ বছর। দক্ষিণ এশিয়ায় গড় আয়ু বেশি শ্রীলঙ্কায় ৭৫ বছর। এই অঞ্চলে গড় আয়ু সব থেকে কম আফগানিস্তানে ৬৪ বছর। এছাড়া ভুটানে ৭১, নেপালে গড় আয়ু ৭১ বছর। পাকিস্তানে গড় আয়ু ৬৭ বছর এবং ভারতে গড় আয়ু ৬৯ বছর। ফলে পাকিস্তান ও ভারতের থেকে বাংলাদেশে গড় আয়ু বেশি। প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের হিসাবে প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ৭২ দশমিক ৬ বছর, যা ২০১৮ সালে ছিল ৭২ দশমিক ৩ বছর। এছাড়া ২০১৭ সালে ৭২ বছর, ২০১৬ সালে ৭১ দশমিক ৬ বছর এবং ২০১৫ সালে ছিল ৭০ দশমিক ৯ বছর। প্রকল্প পরিচালক জানান, মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু বাড়ার কারণ হচ্ছে, এখন চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নয়ন হয়েছে। মানুষ সহজেই চিকিৎসা নিতে পারছেন। তাছাড়া খাদ্যগ্রহণ আগের চেয়ে বেড়েছে। পুষ্টি গ্রহণের ক্ষেত্রে তুলনামূলক অগ্রগতি হয়েছে। মানুষের সচেতনতা বেড়েছে। সবকিছু মিলিয়ে গড় আয়ু বেড়েছে। ১৯৮০ সাল থেকে নিয়মিতভাবে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: