ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

যান চলাচল সীমিত

প্রত্যয়ের ধাক্কায় পোস্তগোলা সেতু ক্ষতিগ্রস্ত, ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা

প্রকাশিত: ২২:২৪, ১ জুলাই ২০২০

প্রত্যয়ের ধাক্কায় পোস্তগোলা সেতু ক্ষতিগ্রস্ত, ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়ের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত রাজধানীর পোস্তগোলায় বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু-১ (প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতু) ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। পাশাপাশি ওই সেতুতে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। চার লেনের সেতুটিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করায় মঙ্গলবার ভোর থেকে দু’পাড়ে দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পর অনেকে বিকল্প পথে চলেন। যানবাহন চলাচলের চাপ বাড়ে দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতুর ওপর। রাত ৯টার দিকে সীমিত পরিসরে যান চলাচল শুরু হয়েছে সদরঘাটে সোমবার সকালে ডুবে যাওয়া মর্নিং বার্ড লঞ্চ উদ্ধারে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা উদ্ধারকারী জাহাজের ধাক্কায় সেতুটিতে ফাটল দেখা দেয়ার পর ওই দিন রাতেই যানবাহন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। মঙ্গলবার সওজ বিভাগের এক্সপার্ট টিম পরিদর্শন করার পর সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। দুপুরে সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ঢাকা অঞ্চল) সবুজ উদ্দিন খান বলেন, সেতুর একটি জায়গায় ফাটল দেখা দেয়ায়, রাতে যানবাহন চলাচল স্থগিত করা হয়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পোস্তগোলায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু-১ (প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতু) আমরা এক্সপার্ট টিম বিশেষজ্ঞ দলসহ পরিদর্শন করেছি। এক্সপার্ট টিম তারা তাদের মতো করে কী ধরনের রিপেয়ার করলে ঝুঁকিমুক্ত হবে সে ধরনের ডিজাইন করছেন। তিনি বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে সেতুটির ওপর যানবাহন চলাচল সীমিত করে করে দেয়া হয়েছে। রাত ৯টা থেকে সীমিত পরিসরে যান চলাচল শুরু হয়েছে। সব ধরনের ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ব্রিজটিতে ফাটল দেখা দেয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। কবে নাগাদ সেতুটি ঝুঁকিমুক্ত হবে বা মেরামতের কাজ সম্পন্ন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা সময় সাপেক্ষ, বেশ সময় লাগবে। বুধবার আমাদের আরও অনেক ইকুইপমেন্ট আসবে। ব্রিজের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ স্ক্যান করা হবে, এক্সরে এর মতো করে ভেতরের অবস্থা দেখা হবে যে কী ধরনের ক্ষতি হয়েছে। সেটা দেখার পরে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। এজন্য কিছুটা সময় লাগবে বলেও জানান তিনি। সেতুটি কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, গতকাল যে লঞ্চটি ডুবেছে সেটি উদ্ধার করতে আসা জাহাজ প্রত্যয়ের ধাক্কায়ই সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, আপাতত সেতুটি সম্পূর্ণ মেরামত না হওয়া পর্যন্ত বাবুবাজার ব্রিজ দিয়ে ভারি যান চলাচলে আমরা অনুমোদন দেব না। সেজন্য মাইকিং, প্রচারপত্র এবং সাইন বোর্ড লাগানো হবে। ওই ব্রিজ দিয়ে শুধু বাস-প্রাইভেটকারসহ অন্যান্য কম ভারি যানবাহন চলাচল করবে। তিনি আরও বলেন, আমরা সাইনবোর্ড দিয়ে দেব, ব্রিজের ওপর লোড লিমিট করে দেয়া হবে। কত টনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে সেটাও আমাদের এক্সপার্ট টিম বলে দেবে। আমরা বিকেল নাগাদ লোডের পরিমাণ জানিয়ে দেব। তিনি সকালে একথা জানালেও কিছু সময় পর সেতু দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। সোমবার সকালে বুড়িগঙ্গা নদীতে ডুবে যাওয়া লঞ্চটি উদ্ধার করতে নারায়ণগঞ্জ থেকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের দিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উদ্ধারকারী জাহাজ যাচ্ছিল। বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক বলেন, ‘উদ্ধারকারী জাহাজের মাস্টার দ্রুত দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছতে চাইছিলেন। তার ভুলে সেতুতে আঘাত লাগতে পারে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সেতু ব্যবস্থাপনা বিভাগ) শিশির কান্তি রাউত জানান, তাদের একটি দল মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সেতুর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। একই বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ঢাকা অঞ্চল) সবুজ উদ্দিন খান বলেন, তারা এখন বৈঠক করে বিষয়গুলো পর্যালোচনা করছেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে। এ অবস্থায় সোমবার রাত ৮টার পর সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল সীমিত করা হয়। মঙ্গলবার থেকে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হওয়ায় বাবু বাজার ব্রিজে বাড়তি চাপ পড়েছে বলে পুলিশের ওয়ারী বিভাগের সহকারী ট্রফিক কমিশনার তারেক উল ইসলাম জানান। তিনি বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা সেতু ঘুরে দেখে আমাদের বলেছেন, উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। তাদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে কখন সেতু চালু হবে। এদিকে সেতুটি বন্ধ থাকায় হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। তারা পায়ে হেঁটে সেতু পারাপার হচ্ছে। দূরপাল্লার বাসগুলো ফিরিয়ে দিচ্ছে সেতু কর্তৃপক্ষ। যানবাহনগুলো বিপরীত রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে। এর প্রভাবে চাপ পড়েছে বুড়িগঙ্গা ২য় সেতুর ওপর। এখন সকল ধরনের যানবাহন এ সেতু দিয়ে চলাচল করছে। দীর্ঘ লাইনে পড়ে রয়েছে বাস, ট্রাকসহ ছোটখাটো যানবাহন। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। খুব দ্রুতই বাংলদেশ-চীন মৈত্রী সেতু সংস্কার করে আবার খুলে দেয়া হবে এমনটাই প্রত্যাশা করে এমনটাই বললেন, ব্রিজ ইজারাদারের অপারেশন ও ম্যানেজমেন্ট কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম।
×