ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৩৪ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তায় আজ থেকে এপিবিএন

প্রকাশিত: ২১:৪২, ১ জুলাই ২০২০

৩৪ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তায় আজ থেকে এপিবিএন

মোয়াজ্জেমুল হক ॥ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তাসহ সার্বিক দায়িত্বে আজ থেকে নিয়োজিত হচ্ছে ডেডিকেটেড ফোর্স। এপিবিএনের (আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন) দুটি ইউনিট উখিয়া টেকনাফের ৩৪ ক্যাম্পের দায়িত্ব গ্রহণ করছে। বর্তমানে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর ৭০ ভাগ প্রথম ভাগে এবং অবশিষ্ট ৩০ ভাগ শেষদিকে প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। শুধু অপরাধীদের আটকের পর মামলাসহ আইনী প্রক্রিয়া আগের মতো পুলিশের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে দলে দলে রোহিঙ্গারা পালিয়ে এসে উখিয়া টেকনাফ অঞ্চলে আশ্রয় পায়। বর্তমানে এ সংখ্যা ১২ লাখের বেশি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এদেশে জন্ম নেয়া রোহিঙ্গা শিশু। যা কমপক্ষে আরও তিনলাখ বলে বেসরকারী পরিসংখ্যান রয়েছে। উখিয়া টেকনাফে এদের আশ্রয় ক্যাম্প হিসেবে রয়েছে ৩৪টি। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পুলিশ এসব ক্যাম্প পাহারা দিয়ে আসছিল। রাতেরবেলায় ক্যাম্পগুলো রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়ে যায়। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর সদ্য সমাপ্ত জুন মাস পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ৫২ হত্যা এবং অন্যান্য অপরাধে ৬৬৮টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ১৫৬১টি। অধিকাংশ রোহিঙ্গার মাঝে আইন অমান্যের প্রবণতা রয়েছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তজুড়ে রেড এলার্ট জারি থাকার পরও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা অত্যন্ত কৌশলে এপার থেকে ওপারে এবং ওপার থেকে এপারে চলাচল করে থাকে। মাদক-ইয়াবা পাচারে জড়িত মূলত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রকোপ যেখানে চলছে, সেখানেও রোহিঙ্গাদের মাদক চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ততা কমছে না। এ লাখ রোহিঙ্গার অভ্যন্তরীণ কোন্দল, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া তৎপরতা, খুন, ডাকাতি, রাহাজানি নিত্যদিনের ঘটনা। উখিয়া টেকনাফ পুলিশ এ রোহিঙ্গাদের নিয়ে তৎপর থাকলেও এদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের দমানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় এপিবিএনের ১৪ ও ১৬ -দুটি ইউনিটকে ডেডিকেটেড ফোর্স হিসেবে প্রস্তুত করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তাসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্বে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে নিয়োজিত ছিলেন। কক্সবাজার জেলা পুলিশের অধীনে ক্যাম্প অভ্যন্তরে নিরাপত্তার কাজ পরিচালিত হয়েছে। এ প্রক্রিয়া আজ থেকে আর থাকছে না। প্রথম পর্যায়ে ৭০ শতাংশ পুলিশ প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। এর পর ৩০ শতাংশ প্রত্যাহার হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এপিবিএনের ১৪ ইউনিটের ৫৮৮ ও ১৬ ইউনিটে ৬৮৮ সদস্য থাকবে। এ দুটি ইউনিটে একজন এসপির পাশাপাশি দুজন অতিরিক্ত এসপি, ৩ সহকারী এসপি পদায়িত থাকবে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বেআইনী কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া দিন দিন বেড়েই চলেছে। এরা এ মুহূর্তে মিয়ানমারে যেমন ফিরে যেতে অনিচ্ছুক তেমনি সরকার ভাসানচরে যে আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করেছে তাতে যেতেও অনিচ্ছুক। এর মূল কারণ মিয়ানমারের সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা উখিয়া টেকনাফ বসবাসের জন্য উপযুক্ত মনে করে থাকে। এর অবশ্য কারণও রয়েছে। নাফ নদীর ওপারেই রাখাইন রাজ্য শুরু; যে রাখাইন রাজ্য রোহিঙ্গাদের আদি আবাসস্থল। উখিয়া টেকনাফের সঙ্গে রাখাইন রাজ্যের মোবাইল যোগাযোগ সুবিধা ও পরিষ্কার। উভয়পারে বসবাসরতদের উভয় দেশের মোবাইল সিম রয়েছে। যখন যেটা প্রয়োজন তখন তা ব্যবহার করা যায়। প্রসঙ্গত, উখিয়া টেকনাফের স্থানীয়দের সংখ্যা রোহিঙ্গাদের তুলনায় কম। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে লাখে লাখে রোহিঙ্গা উখিয়া টেকনাফে আশ্রিত হওয়ার পর সেখানে প্রায় ৩৪টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। রোহিঙ্গারা সেখানে বসতি গাড়ার পর তাদের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা সন্ত্রাসীরা এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
×