ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দৌলতপুর সীমান্ত

করোনার মধ্যে মাদক বিক্রেতারা বেপরোয়া

প্রকাশিত: ২০:২৭, ১ জুলাই ২০২০

করোনার মধ্যে মাদক বিক্রেতারা বেপরোয়া

নিজস্ব সংবাদদাতা, দৌলতপুর, ৩০ জুন ॥ মাহামারী মানুষ যখন প্রায় ঘরবন্দী অবস্থায় রয়েছে তখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্তের মাদক বিক্রেতা। সীমান্ত অঘোষিত দখল নিয়ে জমজমাট মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। তবে মাঝে মধ্যে পুলিশ, র‌্যাব ও সীমান্তরক্ষী বিজিবির অভিযানে মাদকসহ মাদক পাচারকারী ও ব্যবসায়ী ধরা পড়লেও মাদক পাচারের তুলনায় তা নগন্য বলে সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামবাসীদের অভিমত। দৌলতপুরে ৪৬ কিমিজুড়ে সীমান্ত রয়েছে। যার প্রায় অর্ধেক ভারত সীমান্তে তারকাটার বেড়া বেষ্টিত। অর্থাৎ ধর্মদহ সীমান্তের ওপার ভারতের ফুলবাড়ি-শিকারপুর সীমান্ত থেকে মুন্সীগঞ্জের ওপার নাসিরাবাদ সীমান্ত পর্যন্ত। এর মধ্যে বাংলাদেশ সীমানায় রয়েছে আদাবাড়িয়া, প্রাগপুর, রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়ন। ৪টি ইউনিয়নের বিপরীতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয় জেলার মরুটিয়া থানা, করিমপুর থানা, হোগলবাড়িয়া থানা ও মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গী থানা। তবে মাদক পাচারের রুট হিসেবে বিলগাথুয়া, মহিষকুন্ডিমাঠপাড়া, জামালপুর, ঠোটারপাড়া, মুন্সীগঞ্জ, চরপাড়া, চল্লিশপাড়া, ছলিমেরচর, চিলমারী, চরচিলমারী, বাংলাবাজার, মানিকেরচর, উদয়নগরসহ অন্তত ২০টিরও বেশি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে মাদকপাচারকারী সুযোগ বুঝে মাদক পাচার করে থাকে। এর মধ্যে রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচারকারীরা নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করে। কারণ দুই ইউনিয়নের বিপরীতে ভারত সীমানায় তারকাটার বেড়া না থাকায় মাদক পাচারকারীরা অনেকটা নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলকা ঘুরে ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনার কারণে মানুষ যখন নিজেদের নিরাপদ রাখতে ও করোনামুক্ত থাকতে সামাজিক ও শরীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার চেষ্টা করছে তখন এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি নতুন করে উঠতি বয়সী ছেলেরা মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন রাতের আঁধারে সংঘবদ্ধ সশস্ত্র মাদক পাচারকারীচক্র অবাধে মাদক পাচার করে থাকে। আর পাচার হওয়া মাদকের তালিকায় রয়েছে গাঁজা, ফেনসিডিল ও ইয়াবা। মাদক পাচারের সঙ্গে অস্ত্র পাচারও হয়ে থাকে। তবে মাদক পাচারের তুলনায় তা কম। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মুন্সীগঞ্জ ও ভাগজোত এলাকার লোকজন জানান, রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ৩৫ থেকে ৪০ জন ছোট বড় মাদক ব্যবসায়ী ও পাচারকারী। তবে এসব মাদক পাচারকারী ও ব্যবসায়ীদের অনেকের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও গডফাদার হিসেবে পরিচিত যারা সব সময়ই থাকেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। মাদক পাচার করার সময় কেউ ধরা পড়লে তাদের ছাড়ানোর জন্য দেন দরবার থেকে শুরু করে জেলহাজত থেকে জামিনে মুক্ত করা পর্যন্ত কাজটি করে থাকে ওইসব নেপথ্য শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও গডফাদাররা। মজার ব্যাপার হলো পুলিশ বা বিজিবির হাতে কোন মাদক পাচারকারী ধরা পড়লে জিজ্ঞাসাবাদে গডফাদারদের নাম তারা মুখে আনতে চাই না। আবার মাদক পাচারের কাজে নারী মাদক পাচারকারীরাও রয়েছে। তারাও বিভিন্ন কৌশলে মাদক পাচার করে থাকে। বিনিময়ে পেয়ে থাকে মোটা অঙ্কের টাকা। মাদক পাচার রোধে পুলিশ ও বিজিবি শক্ত অবস্থানে থাকলেও বিপরীতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ততটায় রয়েছে নরম অবস্থানে। মূলত তাদের ছত্রছায়ায় ভারতীয় মাদক পাচারকারী ও মাদক ব্যবসায়ীরা রাতের আঁধারে তারকাটার বেড়া পার করে বাংলাদেশ সীমানায় মাদক পৌঁছে দেয়ার কাজটি করে থাকে। একসময় ভারতীয় ফেনসিডিল কাঁচের বোতলে করে পাচার করা হতো। তারকাটার বেড়ার ওপার থেকে বাংলাদেশ সীমানায় ছুড়ে ফেলা হলে তা ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে পরবর্তীতে প্লাস্টিকের বোতলে প্যাকেটজাত করে পাচার করা হয়। আর ভারত থেকে পাচার হয়ে আসা এসব মাদক হাত বদল হয়ে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ওইসব মাদক পাচারকারীসহ দৌলতপুর সীমান্তের বিভিন্ন মাদক পাচারকারী ও ব্যবসায়ী দৌলতপুর থেকে দেশের নানা প্রান্তে পৌঁছে দিচ্ছে। এর ফলে রাতারাতি তাদের নাম উঠে যাচ্ছে ধনীদের তালিকায়। গড়ে তুলছে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সুরম্য অট্টলিকা ও প্রসাদ। আর এমন সব প্রাসাদ ভাগজোত বাজার ঘুরলে চোখে পড়বে। রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের উল্লেখিত মাদক ব্যবসায়ীদের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডল সত্যতা স্বীকার করে বলেন, করোনার এই দুঃসময়ে মানুষ নিজেদের বাঁচাবে কিভাবে তা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও মাদক পাচারকারী ও ব্যবসায়ীরা রয়েছে বহাল তবিয়তে। রাতের আঁধারে তারা অবাধে মাদক পাচার করে থাকে। সীমান্তের মাদক ব্যবসায়ী ও পাচারকারীদের প্রশাসন থেকে শুরু করে সব ধরনের সহায়তা দিয়ে থাকেন সীমান্তের এক বড়ভাই। তাকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে মাদক ব্যবসার তালিকায় নাম লেখাতেও হবে আবার মাদক পাচার ও ব্যবসাও করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে পরক্ষণেই পুলিশ গিয়ে হাজির হবে ওই মাদক পাচারকারী ও ব্যবসায়ীর বাড়িতে। আর এমন কাজ তিনি করে যাচ্ছেন যুগ যুগ ধরে। প্রশাসনের দফতরেও রয়েছে তার অবাধ যাতায়াত। তাকে ভয় ও সমীহ না করলেই সীমান্তবাসীর কপালে জুটে পুলিশে লাঠি। আর এমন ঘটনা সবারই জানা। মাদক ব্যবসা ও মাদক পাচারের বিষয়ে দৌলতপুর থানার ওসি এস এম আরিফুর রহমান বলেন, প্রতিদিনই মাদকবিরোধী অভিযান চলছে। মাদকসহ মাদক পাচারকারী ও মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতারও হচ্ছে এবং মামলাও হচ্ছে। মাদক ব্যবসায়ী যেই হোক না কেন তাকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নাই। মাদকের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স রয়েছি। করোনা করুণা করলেও মাদকের ভয়াল থাবা কাউকে করুণা করবে না। তাই মাদক প্রতিরোধে প্রয়োজন সকলের সহযোগিতা ও সচেতনতা। আর এমনটাই মনে করেন সচেতন মহল।
×