ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পে দুর্দিন

প্রকাশিত: ২০:০৭, ১ জুলাই ২০২০

ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পে দুর্দিন

করোনার কারণে মানবিক বিপর্যয় ঘটছে নিত্যদিন। জীবন হয়ে পড়েছে ঝুঁকিপূর্ণ। বিশ্ব অর্থনীতির ওপরও বড় ধাক্কা দিয়েছে করোনাভাইরাস। তার প্রভাব থেকে আমাদের দেশও আলাদা নয়। অর্থনীতিকে বাঁচাতে নেয়া হচ্ছে নানা পদক্ষেপ। বাংলাদেশের অর্থনীতির যে খাতটি করোনার কবলে পড়ে বড় পির্যয়ের মুখোমুখি সেটি হলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। এই খাতটি দেশীয় অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কর্মসংস্থান খুঁজে নেয় সমাজের বড় একটি অংশ। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তারা নিজেদের জন্য আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি অন্যের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছেন। বর্তমান মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান ২৫ শতাংশ। প্রতিদিনের নানা পণ্যের চাহিদা মেটানোয় এই খাতটিরই অবদান সবচেয়ে বেশি। মানুষের মৌলিক মানবিক প্রয়োজনের ভেতর এখন এই করোনাকালে সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে খাদ্য। মানুষ খাবারের বাইরে তেমন ব্যয় করছে না পারতপক্ষে। খাদ্যেও চলে এসেছে কিছুটা কৃচ্ছ্রতাসাধন। খাবার নিয়ে বিলাসিতার প্রায় অবসান ঘটেছে। হোটেল-রেস্তোরাঁয় দল বেঁধে উৎসবেও মেতে উঠছে না কেউ। বহু পরিবারেই সপ্তাহান্তে ঘরের বাইরে কোন রেস্তরাঁয় গিয়ে খাবার খাওয়ার চল ছিল। সেটিতেও ভাটা পড়েছে। তাই এটা বলা যায়, খাদ্য সংক্রান্ত ব্যয় ছাড়া মানুষ অন্য ব্যয়গুলোকে এই করোনাকালে বাহুল্যই ভাবছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের আওতায় রয়েছে প্রধানত চামড়া ও পাটজাত পণ্য, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, ট্রাভেল ব্যাগ, মানিব্যাগ, বেল্ট, ফ্যাশন পণ্য, হস্ত ও কারু শিল্পপণ্য, উপহার সামগ্রী, শাড়ি, থ্রিপিস, ফতুয়া, বেডশিট, বালিশের কভার, বিভিন্ন বুটিক সামগ্রী, শোপিস. বাঁশ-বেতের পণ্য উৎপাদনকারী ছোট শিল্প। এগুলো সাধারণ এসএমই খাতের অন্তর্ভুক্ত। এমন ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের প্রায় ৭৮ লাখ প্রতিষ্ঠান রয়েছে সারাদেশে। এসব উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন বিপণি বিতানে, ব্র্যান্ডশপে তাদের পণ্য সরবরাহ করে থাকে। আবার ফেসবুক বা ওয়েবসাইট খুলে অনলাইনেও পণ্য বিক্রি করা হয়। করোনার কারণে তাদের বেচাকেনাও প্রায় বন্ধ। তবে এসবের পাশাপাশি খাদ্যশিল্পের ভেতরে মাছ, হাঁস-মুরগি, গবাদিপশুর ব্যবসায়ী এবং খাদ্য ও ওষুধ তৈরি প্রতিষ্ঠানগুলোও সমস্যায় পড়েছে। অনেকে পণ্য পৌঁছাতে পারছেন না। আবার অনেকে পণ্য তৈরিও করতে পারছেন না। এতে খামারিরা যেমন খাদ্য, ওষুধ পেতে ভোগান্তিতে পড়ছেন, আবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পড়েছে লোকসানে। হোটেল-রেস্তরাঁ ব্যবসায়ীরাও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বেচাকেনা না থাকায় ঘর ভাড়া ও কর্মীদের বেতন, ঋণের সুদ পরিশোধ নিয়ে তারাও চাপে আছেন। করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী ১ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এই প্যাকেজে দেশের কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরুজ্জীবিত ও অর্থনৈতিক গতি সঞ্চারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়। সব মিলিয়ে এ শিল্পের জন্য বরাদ্দ ২৪ হাজার কোটি টাকা। প্রণোদনার সুষ্ঠু ব্যবহার, অর্থাৎ অর্থের সঠিক বণ্টন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প পুনরুজ্জীবনে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, সেকথা বলাই বাহুল্য। এ লক্ষ্যে এসএমই ডেটাবেজ আপডেট করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এখন প্রণোদনার অর্থ সংগ্রহই সবচেয়ে গুরুত্বপর্ণ কাজ হয়ে উঠেছে। গ্রাহকরা তাকিয়ে আছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর দিকে। এ কাজে গতি আনার জন্য চাই সব পক্ষের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা।
×