ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টোকিওবাসীর আপত্তি, অনিশ্চিত অলিম্পিক

প্রকাশিত: ১৯:৫০, ১ জুলাই ২০২০

টোকিওবাসীর আপত্তি, অনিশ্চিত অলিম্পিক

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ চলতি বছর অলিম্পিক ছিল সারাবিশ্বের কাছে জাপানের অন্যতম আকর্ষণ। করোনাভাইরাসের প্রকোপে যা আয়োজকরা পিছিয়ে দিয়েছেন এক বছর। কিন্তু তারপরও কি সহজ হবে অলিম্পিক আয়োজন করা? গত সপ্তাহান্তে টোকিও’র দুই মিডিয়া সংস্থা কিয়োদো নিউজ এবং টোকিও এমএক্স টেলিভিশন একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল শহরবাসীর মধ্যে। তাদের সমীক্ষায় দেখা গেছে ৫১.৭ শতাংশ টোকিওবাসী চাইছেন না আগামী বছরেও অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হোক। আর অলিম্পিক অয়োজন করার পক্ষে সায় দিয়েছেন ৪৬.৩ শতাংশ মানুষ। এই সমীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ১০৩০ জন। গ্রেটার টোকিও’র জনসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৭৪ লাখ। তাই মাত্র ১০৩০ জনের সমীক্ষা হয়তো পুরো চিত্র তুলে ধরে না। তবু হাজার জনের মধ্যে যে ৫১.৭ শতাংশ মানুষ আগামী বছর অলিম্পিক চাইছেন না, তা আয়োজকদের জন্য খুব স্বস্তির খবর নয়। এই ৫১.৭ শতাংশের মধ্যে ২৭.৭ শতাংশ মানুষ আবার একেবারেই চান না টোকিও’য় আর অলিম্পিক হোক। বাকি ২৪ শতাংশ চাইছেন অলিম্পিক আরও পিছিয়ে দেয়া হোক। শহরবাসীর মধ্যে এখনও করোনাআতঙ্ক কাজ করছে। বিশ্বের নানাপ্রান্ত থেকে হাজার হাজার ক্রীড়াবিদ, কোচ, দর্শক, কর্মকর্তাদের আনাগোনায় তারা ভয় পাচ্ছেন। অলিম্পিক পিছালেও বাতিলের ভাবনা আপাতত নেই আয়োজকদের। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেছিলেন, অলিম্পিক এমনভাবে আয়োজন করতে হবে যাতে বুঝানো যায় সারাবিশ্ব এই করোনা মহামারী কাটিয়ে উঠেছে। জুনের শুরুতে আয়োজক সংস্থার প্রেসিডেন্ট ইয়োশিরো মোরি এড়িয়ে গিয়েছিলেন অলিম্পিক পুরোপুরি বাতিলের সম্ভাবনার কথা। বলেছিলেন, সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলে লাভ নেই। এখনই গেমস বাতিল নিয়ে কিছু বলা ঠিক নয়। তবে দু’মাস আগে যখন অলিম্পিক পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল তখন মোরি নিজেই অন্য কথা বলেছিলেন। এক প্রশ্নের জবাবে মোরি বলেছিলেন, এক বছর পরও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে গেমস বাতিল করা হবে। এদিকে করোনাভাইরাসের প্রকোপে একবছর পিছিয়ে দেয়া হয়েছে টোকিও অলিম্পিক গেমস। এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হলে ২০২১ সালে অলিম্পিক্স আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। বিবিসির একটি রিপোর্টে এমনটাই লেখা হয়েছে গতকাল। এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল হেলথ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শ্রীধর জানিয়েছেন, প্রতিষেধক আবিষ্কারের ওপরেই নির্ভর করছে পরের বছর অলিম্পিক হবে কিনা। তিনি আরও জানিয়েছেন, বিজ্ঞানীরা বলছেন, শীঘ্রই করোনার প্রতিষেধক চলে আসবে। তবে আমার মনে হয় না এক বছর বা দেড় বছরের আগে কিছু হবে। পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে প্রতিষেধকটি যাতে সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য হয়। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি ও টোকিও অলিম্পিকের আয়োজকরা সম্প্রতি একটি ভিডিও কনফারেন্সের আদলে বোর্ড মিটিং করেছে। তারপর যৌথ বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, আগামী বছর অলিম্পিক্স আয়োজন নিয়ে বিশেষ আশার আলো তারা দেখছেন না। আইওসি কর্মকর্তা জন কোটস জানিয়েছেন, পরের বছরও করোনায় প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে অলিম্পিক গেমসে। কোবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক ব্যাধি বিষয়ক অধ্যাপক কেন্টারো আইওয়াটাও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আগামী বছর অলিম্পিক হওয়া নিয়ে। তার মতে যেভাবে করোনাভাইরাসের প্রভাব বাড়ছে তাতে এমন নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনার উদ্রেক হওয়াই স্বাভাবিক। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি অবশ্য আসর পিছিয়ে দেয়ার পর বলেছিল, ২০২০ সালের অলিম্পিকের নানা ইভেন্ট দেখার জন্য যারা টিকেট কেটেছিলেন তারা ২০২১ সালে ঐসব টিকেট দিয়ে খেলা দেখতে পাবেন। যদি কেউ না দেখতে চায় তাদের টাকা ফেরত দেয়া হবে। কিন্তু বিমান ও হোটেলের বুকিং বাতিল করার পর অর্থ ফেরত দিচ্ছে না বিমান সংস্থা ও হোটেল কর্তৃপক্ষ। আমেরিকার ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির এক প্রফেসর জানান, ‘অলিম্পিকের জন্য বিমান বুকিং ও ২৬ দিনের জন্য ছাত্র-ছাত্রীরা থাকবেন বলে ৩০টি রুম বুকিং দিয়েছিলেন। এ জন্য তাদের খরচ হয়েছে ৮৩ হাজার ইউরো। কিন্তু আমি যদি বিমান ও হোটেল বুকিং বাতিল করি তবে তারা আমাদের কোন অর্থ দিবে না। এমনকি আমি যদি আগামী বছর তা ট্রান্সফার করি কিন্তু তাতেও বিমান সংস্থা ও হোটেল কর্তৃপক্ষ রাজি নয়।’ এদিকে টোকিও হোটেল কমিটির সচিব শিগেমি সুডো বলেন, ‘আমাদের যে কি পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে তা আমরা বুঝতে পারছি। এটি আমাদের জন্য বিরাট এক ধাক্কা।’ ইতোমধ্যে বিমান সংস্থা ও হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অলিম্পিক কমিটির কাছে নালিশ করেছে বিভিন্ন দেশের দর্শক-সমর্থকরা।
×