ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের ৪২৩ মিটার জমি দখল নিয়েছে চীন, ওয়াশিংটন ও টোকিওর সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াচ্ছে দিল্লী

সীমান্ত লঙ্ঘন লাল ফৌজের

প্রকাশিত: ১৮:৫৩, ১ জুলাই ২০২০

সীমান্ত লঙ্ঘন লাল ফৌজের

ভারত-চীন উত্তেজনা কমার আলামত দেখা যাচ্ছে না। মঙ্গলবার ভারতের একাধিক গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়েছে, চীনা সৈন্যরা লাদাখের ৪২৩ মিটার ভারতীয় জমির দখল নিয়েছে। গালওয়ান নদীর তীরঘেষা ওই ভারতীয় ভূমিতে অন্তত ১৬টি সেনা ছাউনি গেড়েছে চীন। উপগ্রহের সাহায্যে ধারণকৃত চিত্রেও এই সেনা ছাউনি ছবি ধরা পড়েছে। একইসঙ্গে ওইসব ছাউনির আশপাশে চীনের অন্তত ১৪টি সামরিক যান রয়েছে। ১৯৬০ সালের দাবিকে প্রাধান্য দিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডের ৪২৩ মিটার দখল করেছে বেজিং। ২৫ জুনের সংঘর্ষস্থল পেট্রলিং পয়েন্ট ১৪’র কাছে চীনা সেনারা এ ‘তৎপরতা’ চালাচ্ছে। উপগ্রহ চিত্রে আরও দেখা গেছে, গালওয়ান উপত্যকায় লাল ফৌজের উপস্থিতি ক্রমশই জোরদার হচ্ছে। খবর এনডিটিভি, আনন্দবাজার ও ইন্ডিয়া টুডে অনলাইনের। এদিকে বেজিংকে চাপে ফেলতে চীনের ওপর কড়া নজর রেখে টহল বাড়িয়েছে ভারতীয় সৈন্যরা। পূর্ব লাদাখে চীনের সঙ্গে সাত সপ্তাহ ধরে সীমান্ত উত্তেজনার জেরে ভারত মহাসাগরে নজরদারি অভিযান ও সরঞ্জাম মোতায়েন বাড়িয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনী। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মতো বন্ধুত্বপূর্ণ নৌবাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা সম্পর্কের গতি এনেছে দিল্লী। আঞ্চলিক নিরাপত্তার চিত্র দ্রুত পরিবর্তিত হতে থাকায় এসব পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত। গালওয়ান উপত্যকাসহ লাদাখের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় এলএসি’র ‘অবস্থান’ নিয়ে দু’পক্ষের মতবিরোধ দীর্ঘদিনের। কিন্তু ১৯৬০ সালে চীনা নেতা মাও সে তুং সরকার গালওয়ানে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার যে অবস্থান চিহ্নিত করেছিল এবার তাকেও লঙ্ঘন করেছে লালফৌজ। ‘হাই রেজ্যুলিউশন স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ষাটের দশকের সেই রেখার অন্তত ৪২৩ মিটার উত্তরে ভারতীয় ভূখণ্ডে ২৫ জুন চীনা বাহিনীর শিবিরের অবস্থান। আশপাশের পাহাড়ের উঁচু জায়গাগুলোও চীন সেনার নিয়ন্ত্রণে। ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব নিরুপমা রাও বলেন, নিয়ন্ত্রণ রেখায় চীনের অবস্থান এখন জোরদার করছে। বিষয়টি সংঘাতকে আরও উস্কে দিতে পারে। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে লাদাখ সীমান্তে ভারত ও চীনা সেনাদের মধ্যে উত্তেজনার পর গত ১৫ জুন উভয়পক্ষ সংঘাতে জড়ায়। এতে ভারতের ২০ সেনা নিহত ও অপর ৭৬ জন আহত হয়। ভারত দাবি করে আসছে, চীনের অন্তত ৪৫ জন হতাহত হয়েছে। তবে চীন সরকারীভাবে কোনও হতাহতের খবর জানায়নি। দুই দেশই পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে। দুই দেশের এই উত্তেজনার মধ্যে ভারত মহাসাগরে ভারতীয় নৌবাহিনীর তৎপরতা বাড়ানোর খবর সামনে এলো। শনিবার ভারতীয় নৌবাহিনী এবং জাপানের নৌবাহিনী ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ একটি মহড়ায় অংশ নেয়। ওই অঞ্চলে চীনা নৌবাহিনীর জাহাজ ও সাবমেরিন প্রায়ই চলাচল করে। ওই মহড়ায় ভারতীয় নৌবাহিনীর দুটি জাহাজ আইএনএস রানা ও আইএনএস কুলিশ অংশ নেয়। অপরদিকে জাপানী নৌবাহিনীর দুটি জাহাজ জেএস কাসিমা এবং জেএস শিমায়ুকি অংশ নেয়। চীনের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনা এবং দক্ষিণ চীন সমুদ্রে চীনা নৌবাহিনীর আচরণের মধ্যে ভারত ও জাপানের ওই যৌথ মহড়া বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। তবে ভারতীয় সূত্র বলছে, ‘ওই মহড়ার উদ্দেশ্য ছিল দুই নৌবাহিনীর মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক বাড়ানো।’ লাদাখে চীনের সঙ্গে সংঘাতের পর নিজেদের তিন বাহিনীকেই সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রেখেছে ভারত। ভারত মহাসাগরের যেসব এলাকায় চীনা নৌবাহিনী নিয়মিত টহল দেয় সেসব এলাকার ওপর ভারতীয় নৌবাহিনীকে সতর্কতার মাত্রা বাড়াতে বলা হয়েছে।
×