ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তিন সপ্তাহে ঢাকায় গেছে ৫ লাখ ১০ হাজার কেজি আম

আম পরিবহনে সাড়া ফেলেছে ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন’

প্রকাশিত: ২৩:২৪, ৩০ জুন ২০২০

আম পরিবহনে সাড়া ফেলেছে ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন’

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ আম পরিবহনে সাড়া ফেলেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-ঢাকাগামী ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন’। ট্রেনের মাধ্যমে নামমাত্র মূল্যে আম পরিবহন করতে পেরে উজ্জীবিত রাজশাহী অঞ্চলের চাষী ও ব্যবসায়ীরা। আম পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন তারা। এরই মধ্যে স্থানীয় আম চাষী ও ব্যবসায়ীরা এর সুফল ভোগ করছেন। আমের রাজধানী খ্যাত উত্তরের শেষ সীমান্ত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এখন প্রতিদিনই রাজশাহী হয়ে রাজধানী ঢাকায় চলে যাচ্ছে নানান জাত ও নামের সুমিষ্ট রসালো সব আম। রেলরুটের ১৪ স্টোপেজ দিয়ে প্রথমবারের মতো এই রুটে চলাচলকারী ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’ তাই আশাজাগানিয়া সাফল্য পেয়েছে বলেই মনে করছেন- পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এটি রেলওয়ের পণ্য পরিবহনের ইতিহাসে নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে বলেও দাবি সংশ্লিষ্টদের। তাই রেলপথে আম পরিবহনের এই সেবাকে নিরবচ্ছিন্ন রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। ফলে এই অল্প সময়েই স্থানীয় চাষী ও ব্যবসায়ীদের কাছে আম পরিবহনে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে ‘ম্যাংগো স্পেশাল’ ট্রেন। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বুকিং শাখা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর তিন সপ্তাহ অতিবাহিত করতে যাচ্ছে রাজশাহীর ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’। চাঁপাইনবাগঞ্জ-রাজশাহী-ঢাকা রুটের এই ট্রেনটিতে আম ছাড়াও কৃষিজাত পণ্য ও অন্যান্য মালামালও পরিবহন করা যাচ্ছে। চালুর পর থেকে ‘ম্যাংগো স্পেশাল’ নামের বিশেষ এই ট্রেন সার্ভিসে চাষী ও ব্যবসায়ীদের আম পরিবহনে আগ্রহ বাড়ছে। এই বিশেষ ট্রেন তার চলাচলের তিন সপ্তাহ পূর্ণ করেছে। এই তিন সপ্তাহে ঢাকায় আম গেছে মোট ৫ লাখ ১০ হাজার ৪০৬ কেজি। এর মধ্যে প্রথম সপ্তাহে ট্রেনটি আম পরিবহন করে ১ লাখ ১০ হাজার ৫৩৭ কেজি। দ্বিতীয় সপ্তাহে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৬৮১ কেজি। এছাড়া তৃতীয় সপ্তাহে ২ লাখ ২৫ হাজার ১৮৮ কেজি আম পরিবহন করেছে। গত ৫ জুন এই ট্রেনটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। ‘ম্যাংগো স্পেশাল’ ট্রেনটিতে বর্তমানে রাজশাহী স্টেশন থেকে এক কেজি আম ঢাকার বিমানবন্দর, তেজগাঁও বা কমলাপুরে নিতে খরচ পড়ছে সর্বোচ্চ ১ টাকা ১৮ পয়সা। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এক কেজি আমের ভাড়া লাগছে ১ টাকা ৩১ পয়সা। গত ৫ জুন প্রথমবারের মতো বিশেষ এই ট্রেন চালুর পর অনেকেই বিষয়টি জানতেন না। তবে নামমাত্র মূল্যে আম পরিবহনের বিষয়টি সবার মধ্যে জানাজানি হওয়ার পর ব্যাপক সাড়া পড়ে গেছে। ঝামেলা মুক্তভাবে সম্পূর্ণ নিরাপদে আম পরিবহনের জন্য তাই ‘ম্যাংগো স্পেশাল’ ট্রেনটি এর মধ্যে রাজশাহী অঞ্চলের আম চাষী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মৌসুম শুরু আগেই আম সংগ্রহ, পরিবহন ও বাজারজাত নিয়ে গত ২০ মে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সভা হয়। ওই সভায় আম পরিবহনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী হয়ে রাজধানী ঢাকা অভিমুখে একটি বিশেষ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর আগে করোনাকালীন পরিস্থিতিতে রাজশাহীর আম, লিচু ও অন্যান্য মৌসুমি ফল বিপণন এবং কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ যেন কোন অবস্থাতেই বাধাগ্রস্ত না হয় বিষয়ে করণীয় নির্ধারণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে গত ১৬ মে ভিডিও কনফারেন্সে সরাসরি রাজশাহীর আম চাষী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। সেদিনই ট্রেনে আম পরিবহনের কথা ওঠে। পরে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পশ্চিম রেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। এই ‘ম্যাংগো স্পেশাল’ ট্রেন তারই ফসল। ‘ম্যাংগো স্পেশাল’ ট্রেনটি রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকদের আম নিরাপদে পরিবহনের ক্ষেত্রে উজ্জীবিত করেছে বলে মনে করেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (পাকশী) ফুয়াদ হোসেন আনন্দ। তিনি বলেন, এই কারণেই ট্রেন আম পরিবহনের চাহিদা ও পরিমাণ প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে। মৌসুমের শেষ দিকে আম পরিবহনের এই পরিমাণ আরও বহুগুণ বাড়বে বলেও তিনি আশাবাদী। ফুয়াদ হোসেন আনন্দ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ উদ্যোগের কারণে এই অঞ্চলের আম চাষী ও ব্যবসায়ীরা সরাসরি তার সুফল পাচ্ছেন। এই পরিমাণ আম কুরিয়ার সার্ভিসে ঢাকায় পরিবহন করতে হলে ৯৯ শতাংশ খরচ বেশি পড়তো (১৫ টাকা কেজি হিসাবে)। ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’ সার্ভিস শুরু হওয়ায় নামমাত্র খরচে এখন তারা ঢাকায় আম পরিবহন করতে পারছেন। তাই সর্বোচ্চ সেবা দিতে তারাও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে উল্লেখ করেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় এই বাণিজ্যিক কর্মকর্তা। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ বলেন, এটি সূত্রপাত, আগামীতে ‘ম্যাংগো স্পেশাল’ ট্রেনের মতো এমন সার্ভিস তারা অব্যাহত রাখতে চান। তাহলে এই অঞ্চলের কৃষিপণ্য সহজেই রাজধানীতে পরিবহন করা যাবে। এতে রাজধানীর মানুষ সুলভমূল্যে বিষমুক্ত তরতজা কৃষিপণ্য পাবেন। আর কৃষকরাও তাদের পণ্যের ভাল দাম পাবেন বলে মন্তব্য করেন পশ্চিম রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক।
×