ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দুই লঞ্চের সারেংই দায়ী- বললেন বেঁচে যাওয়া যাত্রী

প্রকাশিত: ২২:২৮, ৩০ জুন ২০২০

দুই লঞ্চের সারেংই দায়ী- বললেন বেঁচে যাওয়া যাত্রী

গাফফার খান চৌধুরী ॥ দুই লঞ্চের সারেং অর্থাৎ চালক ও তাদের সহযোগীদের অদক্ষতার কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটে। কারণ সারেংরা দক্ষ থাকলে ওই দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব ছিল। কারণ এটি কোন ট্রেন বা বাস নয়। আচমকা একটি আরেকটির ওপর ওঠে যাবে। অনেক দূর থেকেই সারেং ও তাদের সহযোগীরা সামনে থাকা সবকিছু দেখতে পারেন। এমনকি দুই সারেংই কোন ধরনের লঞ্চ কি পরিমাণ গতিতে যাতায়াত করে, তা তাদের জানা। আর ধাক্কা দেয়ার আগে ময়ূর-২ লঞ্চের সারেং সাইরেন বাজাননি। এমনকি ডুবে যাওয়া লঞ্চটির সারেংও সাইরেন বাজাননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেঁচে যাওয়া দুই লঞ্চেরই একাধিক যাত্রী এমনটাই দাবি করেছেন। তাদের দাবি, নাম প্রকাশ করলেই তদন্ত কমিটি তাদের জেরা করবে। যা করোনা পরিস্থিতির কারণে তাদের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তারা বলছিলেন, দুর্ঘটনা ঘটার জন্য দুই লঞ্চের সারেং ও তাদের সহযোগীরা দায়ী। কারণ প্রতিটি লঞ্চেই দক্ষ সারেং থাকার কথা। আর সারেংয়ের সঙ্গে কমপক্ষে একজন সহযোগী সারেং থাকার নিয়ম। কারণ কোন সময় মূল সারেং অসুস্থ হয়ে পড়লে বা অন্য কোন সমস্যা হলে যাতে লঞ্চটি নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছতে পারে। এজন্যই এমন ব্যবস্থা। আর সারেংদের সামনে তাদের সহযোগীরা থাকেন। সারেং কোন সময় বেখেয়ালি হয়ে কোন কিছু না দেখলেও যাতে তার সহযোগীরা সারেংকে সর্তক করতে পারেন সেই জন্যই এই ব্যবস্থা। আর প্রতিটি ঘাট এলাকা দিয়ে পার হওয়ার সময় বা যাওয়ার সময় এবং ভেড়ানোর আগে সাইরেন বাজানোর কথা। লঞ্চের সাইরেন ভয়াবহ রকমের শব্দ তৈরি করে। যা অনেক দূর থেকে শোনা যায়। ছোট ছোট লঞ্চের সাইরেনও কমপক্ষে কোয়ার্টার কিলোমিটার দূর থেকে শোনা যায়। আর বড় লঞ্চের সাইরেন কম করে হলেও আধা কিলোমিটার দূর থেকে শোনা যায়। আবার যে সময় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, ওই সময় দিনের বেলা। নদীতে কুয়াশা ছিল না। অনেক সময় কুয়াশার কারণে সাইরেন দূর থেকে তেমন শোনা যায় না। এখন কুয়াশা না থাকায় সাইরেনের পাশাপাশি নদীর বাঁকের আড়ালে না থাকলে কমপক্ষে আধা কিলোমিটার দূর থেকে লঞ্চই দেখা যায়। আর বাঁক থাকলে একাধিকবার সাইরেন বাজানোর নিয়ম। চকচকা দিনের আলোতে দুর্ঘটনাটি একেবারেই মেনে নেয়া যায় না। তারা বলছিলেন, যেভাবে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে তা হওয়ার কথা ছিল না। কারণ সারেংয়ের হয়তো কোন সহযোগী সারেং ছিলেন না। আর সারেং কেন সামনে কি আছে দেখতে পেলেন না। সারেং মাদকাসক্ত হয়ে লঞ্চ চালাচ্ছিলেন কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। আর সারেংয়ের কোন সহযোগীও হয়তো ওই সময় সামনে ছিলেন না। তারা সারেংকে সতর্ক করেননি। আর মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর এলাকার কাঠপট্টিতে ছোট ছোট লঞ্চ ছাড়াও অনেক সময় বড় বড় লঞ্চও ভিড়ে, এটি সব সারেংয়ের জানা। কোন লঞ্চের সারেংই সাইরেন বাজাননি। নদীতে ¯্রােত আছে। প্রয়োজনে মর্নিং বার্ড লঞ্চটি গতি বাড়িয়ে দ্রুত ওই স্থান ত্যাগ করতে পারত। আর গতি কমিয়ে সিগন্যাল দিয়ে অথবা বার বার সাইরেন বাজিয়ে ময়ূর লঞ্চের সারেংয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারত। অথবা ইঞ্জিন বন্ধ করে যেখানে ছিল সেখানেই থাকতে পারত। তাহলে ময়ূর লঞ্চটি হয়তো মনিং বার্ডের খুব কাছ দিয়ে যেত। বড় বড় ঢেউয়ে লঞ্চ বড় বড় দোল খেতে পারত বা কিছুটা পানি উঠতে পারত। কিন্তু পুরোপুরি ডুবত না। একই কাজ ময়ূর লঞ্চের সারেংও তাদের সহযোগিতা করতে পারতেন। ময়ূর লঞ্চের সারেং সামনে কি আছে দেখেনি। সাইরেনও বাজায়নি। এমনকি তাকে এ বিষয়ে সতর্কও করেনি সহযোগীরা। ময়ূর লঞ্চ ইচ্ছে করলে গতি কমিয়ে বা ইঞ্জিন বন্ধ করে দিয়ে বিপদ কাটাতে পারত। আবার লঞ্চটির গতি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে পারত। তাহলেও এত মানুষের পরিবারে কান্না আর দেখতে হতো না। ধারণা করা হচ্ছে, দুই লঞ্চের সারেং ও তাদের সহযোগীরা মাদকাসক্ত হয়ে লঞ্চ চালাচ্ছিল। এজন্য তারা মাতাল অবস্থায় কোন কিছুই দেখতে পায়নি। আস্ত একটি দু’তলা লঞ্চের ওপর দিয়ে লঞ্চ চালিয়ে দিয়েছে। সারেং ও তাদের সহযোগীরা যে অদক্ষ তা দিবালোকের মত স্পষ্ট। আর এ ধরনের অদক্ষ সারেংদের কম টাকায় নিয়োগ দিয়ে থাকেন লঞ্চ মালিকরা। যে কারণে প্রায়ই এমন দুর্ঘটনা ঘটে। হতাহত হয় বহু মানুষ। চিরতরে পঙ্গু হন অনেকেই। অনেক মায়ের বুক খালি হয়। সোমবার বুড়িগঙ্গী নদীতে ডুবে মনিং বার্ড নামের একটি লঞ্চের বহু যাত্রীর হতাহতের ঘটনা ঘটে।
×