ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আবেদন করা লেখকদের বইও অন্তর্ভুক্ত হবে

মুজিববর্ষে প্রাথমিকের বই কেনায় নতুন চিন্তা

প্রকাশিত: ২২:০৭, ৩০ জুন ২০২০

মুজিববর্ষে প্রাথমিকের বই কেনায় নতুন চিন্তা

বিভাষ বাড়ৈ ॥ ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে ৬৬টি সৃজনশীল বই শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের কেনার কথা থাকলেও চলতি অর্থবছরে সব বই কেনা সম্ভব হচ্ছে না। ৯টি বই কেনার পর এবারের প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে। করোনা মহামারীর মধ্যে আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষ করে সব বই কেনা সম্ভব হয়নি জানিয়ে অধিদফতর বলেছে, তালিকায় থাকা বাকি বই আগামী অর্থবছরে কেনা হবে। একই সঙ্গে নতুন করে আবেদন করা লেখকদের বইও যাচাই-বাছাই করে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। ‘সমালোচনার মুখে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের ১৫০ কোটি টাকার বই কেনা স্থগিত’ এমন একটি খবরের প্রেক্ষিতে সোমবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছে, সমালোচনার কারণে বই কেনা স্থগিত করার খবর ঠিক না। বই কেনা স্থগিত করা হয়নি। প্রক্রিয়া চলমান আছে। তালিকায় থাকা বাকি বই আগামী বছরেই কেনা হবে। করোনার কারণে এবার সব বই কেনা সম্ভব হয়নি। তবে নিজেদের বই তালিকায় রাখার জন্য যারা দাবি করেছেন তারা মন্ত্রণালয়ে বই অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ প্রক্রিয়া চলতে থাকবে জানিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ ফসিউল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেছেন, ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে ৬৬টি সৃজনশীল বই শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের কেনার কথা থাকলেও চলতি অর্থবছরে তা কেনা সম্ভব হচ্ছে না। ৮টি বই কেনা হয়েছে। একটি বই কেনার প্রক্রিয়ায় আছে। এই অর্থবছরে বাকি বই কিনতে পারছি না আমরা। নতুন অর্থবছরে বাকি বই কিনব। তবে জানা গেছে, এর আগে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেশের ১৫ বিশিষ্ট লেখক বিবৃতি দিয়েছিলেন। তাদের দেয়া বিবৃতি আমলে নিয়ে নতুন বই অন্তর্ভুক্তির পথ খোলা রাখা হয়েছে। লেখকরা সব প্রকাশককে বইয়ের তালিকা জমা দেয়ার সুযোগ দিয়ে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে বই নির্বাচন করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। গত ২৪ জুন এক বিবৃতিতে ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের ১৫০ কোটি টাকার বই কেনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান দেশের ১৫ বিশিষ্ট লেখক। বিবৃতি তারা বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বই কেনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বিবৃতিতে বলা হয়, করোনাকালে সৃজনশীল প্রকাশকরা দুরবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এ সময় বই কেনার সংবাদ লেখক, প্রকাশক সবার জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। কিন্তু হাতে গোনা কয়েক লেখক-প্রকাশক সুফল ভোগ করবে আর দেশের বৃহৎ সংখ্যক লেখক-প্রকাশক সরকারের সুফল থেকে বঞ্চিত হবেন, এই অন্যায় মেনে নেয়া যায় না। এ ধরনের অস্বচ্ছ কাজ সমর্থনযোগ্য নয়। বাংলাদেশের অনেক লেখক বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বই লিখেছেন। বই কেনার আগে সেসব বই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আনা আবশ্যক। বই কেনার প্রক্রিয়া স্থগিত করে সব প্রকাশককে বইয়ের তালিকা জমা দেয়ার সুযোগ দেয়া ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে বই নির্বাচন করে বই কেনার আহ্বান জানানো হয়েছিল বিবৃতিতে। অন্যান্য মন্ত্রণালয়, বিশেষ করে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় গণগ্রন্থাগার অধিদফতর ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের জন্য প্রতিবছর যে পদ্ধতিতে বই কেনা হয়, প্রাথমিকেও সে পদ্ধতি অনুসরণ করে বই কেনার আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে। লেখকদের দাবি, সৃজনশীল প্রকাশকদের কাছে উপযুক্ত বইয়ের তালিকা ও নমুনা কপি জমা নেয়া হোক। দেশের বিশিষ্ট লেখক, বুদ্ধিজীবী, প্রকাশক সমিতির প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তার সমন্বয়ে বই নির্বাচন কমিটি গঠন করে বইকেনা আবশ্যক। দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে করোনার দুঃসময়ে কোন ধরনের অনিয়ম ও অস্বচ্ছতা আমাদের কাম্য নয়। বিবৃতি দেয়া লেখকরা হলেন- হাসান আজিজুল হক, নির্মলেন্দু গুণ, সেলিনা হোসেন, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ইমদাদুল হক মিলন, মুন্তাসীর মামুন, আনিসুল হক, আবুল আহসান চৌধুরী, রামেন্দু মজুমদার, আবুল মোমেন, সুব্রত বড়ুয়া, মোরশেদ শফিউল হাসান, অসীম সাহা, ফরিদুর রেজা সাগর ও আমীরুল ইসলাম। তাদের পক্ষে বিবৃতিটি দিয়েছিলেন বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ। তাহলে কি আপত্তির কারণে বই কেনা স্থগিত করা হয়েছে? প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ ফসিউল্লাহ কথা বলেছেন, না কথাটা ঠিক নয়। আপত্তির কারণে নয়। তাছাড়া এখানে আপত্তির কিছু নেই। করোনার কারণে আসলে বই কেনার প্রক্রিয়াটা এই অর্থবছরে শেষ করা সম্ভব হয়নি। ৯টি বই কেনা সম্ভব হয়েছে। তালিকায় থাকা বাকি বইও কেনা হবে, তবে আগামী অর্থবছরে। অন্য লেখকদের দাবির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা তো তাদের বই কেনার জন্য বলেছেন। তারা আবেদন করবেন মন্ত্রণালয়ে। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকবে সব সময়। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক বলেন, যদি কোন বই নিয়ে আপত্তি থাকে, যদি আসলেই সমস্যা থাকে তবে সেই বইও রিভিউ হতে পারে। মন্ত্রণালয় এটা করতেই পারে।
×