স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর বিরজমান পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান এবং পাট খাতকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে কর্মরত শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে শতভাগ পাওনা পরিশোধ করে সরকারী বেসরকারী অংশীদারীত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে মিলগুলো চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ উপলক্ষে সোমবার দুপুরে খুলনা জেলা প্রশাসন সার্কিট হাউজে এক প্রেস কনফারেন্সের আয়োজন করে। প্রেসব্রিফিংয়ে বলা হয়, শতভাগ পাওনা পরিশেধের মাধ্যমে পিপিপির ভিত্তিতে চালু হবে খুলনা অঞ্চলের সাত পাটকল।
খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেনের সভাপতিত্বে প্রেস কনফারেন্সে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিকদের ব্যাপারে অত্যন্ত আন্তরিক। শ্রমিকদের কথা চিন্তা করেই সরকার এ পর্যন্ত পাটকলগুলোতে ১০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকারী-বেসরকারী অংশীদারীত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে মিলগুলোর আধুনিকায়ন করেই চালু করা হবে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে মিলগুলো বন্ধ হবে না, আবার শ্রমিক বেকারও হবে না। কারণ পরবর্তীতে এসব মিলে এ অঞ্চলের শ্রমিকদেরই কর্মসংস্থান অব্যাহত থাকবে।
প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সরদার রকিবুল ইসালম, পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লহ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ইউসুফ আলী, খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এসএম নজরুল ইসলাম, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ মুন্সি মাহবুব আলম সোহাগ প্রমুখ।
পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার দাবিতে মিলগেটে অবস্থান ॥ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার দাবিতে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে খুলনা অঞ্চলের শ্রমিকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে স্ব স্ব মিল গেটের সামনে সোমবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছে। এ সময়ে শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আর্কষণ করে দাবি তোলেন মিলগুলো বেসরকারী খাতে ছেড়ে দিলে আমরা কর্মহীন হয়ে পড়ব। করোনা দুর্যোগের এই সময়ে কাজ হারালে শিশু সন্তান, বৃদ্ধ, বাবা মা নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে।
খুলনার খালিশপুরে অবস্থিত ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, দিঘলিয়া উপজেলার স্টার, আটরা শিল্পাঞ্চলের ইষ্টার্ণ ও আলীম এবং যশোরের নওয়াপাড়া এলাকায় অবস্থিত কার্পেটিং ও জেজেআই জুট মিলের শ্রমিকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে স্ব স্ব মিল গেটে অবস্থান কর্মসূচী পালন করে। এই নয় পাটকলের মধ্যে খালিশপুর ও দৌলতপুর জুট মিলের শ্রমিকরা নো ওয়ার্ক নো পে ভিত্তিতে কর্মরত। বাকি সাত পাটকলের শ্রমিকদের দেশের অন্য রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর শ্রমিকদের সঙ্গে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকে পাওনা পরিশেধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এদিকে খুলনা বিভিন্ন পাটকলে অবস্থান কর্মসূচী পালনকালে শ্রমিক নেতারা বলেন, লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে পাটকল বন্ধের জন্য চক্রান্ত চলছে।
অভয়নগরে পাটকল শ্রমিক-কর্মচারীদের অবস্থান ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল দাবিতে যশোরের অভয়নগরে দুটি পাটকলের শ্রমিক-কর্মচারী ও তাদের সন্তানরা অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছে। দাবি আদায় না হলে আমরণ অনশনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। সোমবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ (জেজেআই) ও কার্পেটিং জুট মিলের স্ব স্ব গেটে এ অবস্থান কর্মসূচী পালন করা হয়।
যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজের ৩নং গেটের সিবিএ মঞ্চ চত্বরে কয়েক হাজার শ্রমিক-কর্মচারী তাদের সন্তানদের উপস্থিতিতে অবস্থান কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়। সিবিএ সভাপতি ইকবাল খানের সভাপতিত্বে এ সময় বক্তব্য রাখেন, জাতীয় পাটকল শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটি ও যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ সিবিএয়ের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান চুন্নু, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, সিবিএয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ, বর্তমান সহ-সভাপতি আব্দুল হামিদ, নজরুল মল্লিক, সহ-সাধারণ সম্পাদক গোলাম আজম মিঠু, ইসরাইল সরদার প্রমুখ।
বক্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাট শিল্পে আধুনিক মেশিন স্থাপনের মধ্য দিয়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তির আহ্বান জানান। অন্যথায় মঙ্গলবার দুপুর ২টা থেকে বুধবার দুপুর ২টা পর্যন্ত স্ব স্ব মিলগেটে শ্রমিক-কর্মচারীদের অবস্থান কর্মসূচী পালন করার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। এরপরও যদি সরকার মিল বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল না করে বুধবার দুপুর দুটার পর থেকে স্ব স্ব মিলগেটে শ্রমিক-কর্মচারী ও তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে আমরণ অনশন শুরু করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।