ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত নকলার ফসলি জমি ও বাড়ি

প্রকাশিত: ২১:২৪, ৩০ জুন ২০২০

ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত নকলার ফসলি জমি ও বাড়ি

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর, ২৯ জুন ॥ নকলায় বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা মৃগী নদীর দক্ষিণ তীরে প্রবল ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এতে একদিকে শত শত পরিবারের ফসলি জমি ও ভিটেবাড়ি বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে, হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে আরও অনেক মানুষ। অন্যদিকে দিন দিন ছোট হচ্ছে নদী তীরবর্তী এলাকার স্থলভাগের মানচিত্র। এরপরও ওই বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তরফ থেকে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন-নিবেদন করেও মিলছে না প্রতিকারের কোন পদক্ষেপ। জানা যায়, নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়ন ও চরঅষ্টধর ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা মৃগী নদীর বিস্তৃত এলাকাজুড়ে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ভাঙ্গন। এরই মধ্যে গত কয়েক বছরে কয়েক শ’ একর আবাদী জমি, শতাধিক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, গাছপালা, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খেলার মাঠ, কবরস্থানসহ অনেকের স্বপ্ন ওই নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে চরঅষ্টধর ইউনিয়নের দ্বিতীয়বারের মতো স্থানান্তরিত হওয়া নারায়ণখোলা দক্ষিণ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অনেক ঘরবাড়ি, কৃষি আবাদি জমি, রাস্তাঘাটসহ অনেক কিছু। এছাড়া চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের বেতমারি, চরবাছুরআলগা ও পার্শ্ববর্তী জামালপুর সদরের হালগড়াচরসহ বেশ কয়েকটি এলাকার জনগণের যাতায়াতের একমাত্র সড়কের বেশ কিছু অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া উপজেলার একমাত্র শতবর্ষী মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চন্দ্রকোনা রাজলক্ষ্মী উচ্চ বিদ্যালয় ও চন্দ্রকোনা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদ্রাসা ও ফসলি জমিসহ রাস্তাঘাট রয়েছে ঝুঁকির মুখে। ফলে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ওসব এলাকার হাজারও মানুষের। দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেতে স্থানীয় বাসিন্দা ছামিউল হক খানসহ অনেকেই নিজের ঘরবাড়ি অন্যত্র স্থানান্তর করে ফেলেছেন। শনিবার ভাঙ্গনকবলিত এলাকায় সরেজমিনে গেলে স্থানীয় ইউপি সদস্য রুকনুজ্জামান খান টুটুল বলেন, ২০১৫/১৬ সালের দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধতন কর্মকর্তারা এসে ভাঙ্গনের চিত্র সরেজমিনে দেখে, ভাঙ্গনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে মর্মে এলাকাবাসীদের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু আজও কোন প্রকার পদক্ষেপ না নেয়ায় তারা হতাশ। তবে জনস্বার্থে নদী রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা জরুরী বলে মনে করছেন তারা। স্থানীয় সমাজসেবক কামরুল ইসলাম গেন্দু বলেন, ব্রহ্মপুত্রের শাখা মৃগী নদীর ভাঙ্গন রোধে এখনই দ্রুত পরিকল্পনা হাতে নিয়ে বাস্তবায়ন না করলে নদীর উত্তর তীরের আশপাশের এলাকাসহ সবজিভা-ার খ্যাত চন্দ্রকোনা বাজার হুমকির মুখে পড়বে। কেবল তাই নয়, অব্যাহত ভাঙ্গনে উপজেলার স্থলভাগের মানচিত্র আগের চেয়ে অনেক ছোট হয়ে যেতে পারে। তারাসহ অনেক এলাকাবাসীর অভিযোগ, ক্ষতিগ্রস্ত ও হুমকির মুখে থাকা স্থানীয় অধিবাসীদের তরফ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বহুবার আবেদন-নিবেদন করা হলেও আজও নদীর ভাঙ্গনরোধে নেয়া হয়নি কোন উদ্যোগ। ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা করতে বা নকলা উপজেলার মানচিত্র ঠিক রাখতে হলে এখনই মৃগী নদীর রক্ষা বাঁধ দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা। নদীভাঙ্গন প্রসঙ্গে চন্দ্রকোনা ইউপি চেয়ারম্যান সাজু সাঈদ সিদ্দিকী জানান, ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত মৃগী নদীর ভাঙ্গনে প্রতি বছরই ফসলি জমি এবং বসতবাড়িসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এবারও টানা বর্ষণে ও উজান থেকে পাহাড়ী ঢল নেমে এলে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মৃগী নদীর উত্তর তীরে ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের শেরপুর জেলার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন জানান, এ বছর চরঅষ্টধর ইউনিয়নের নারায়ণখোলা এলাকায় ভাঙ্গন রোধে নদীর তীরে ৫শ’ মিটার এলাকায় বালির জিও ব্যাগ ফেলার পরিকল্পনা এরই মধ্যে হাতে নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে সঙ্গে সঙ্গেই কাজ শুরু করা হবে। এছাড়া গত বছর চন্দ্রকোনা এলাকায় নদীর ভাঙ্গন রোধে বালির জিও ব্যাগ দেয়া হয়েছিলো বলেও তিনি জানান। তাই চলতি বছর এ এলাকার ভাঙ্গন রোধে এখন পর্যন্ত নতুন কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। তবে মৃগী নদীর ভাঙ্গন রোধে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বালির জিও ব্যাগ প্রয়োগ করাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে মৃগী নদীর ভাঙ্গনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। নদী ভাঙ্গনের বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন। তবুও জনস্বার্থে ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা মৃগী নদীর ভাঙ্গন রোধে সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি লেনদেনসহ প্রয়োজনীয় যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।
×