ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অনুশীলন শুরুর ক্ষেত্রে নিরুপায় বিসিবি

প্রকাশিত: ২১:১৫, ৩০ জুন ২০২০

অনুশীলন শুরুর ক্ষেত্রে নিরুপায় বিসিবি

মোঃ মামুন রশীদ ॥ গত ঈদ-উল-ফিতরের পর বাংলাদেশে লকডাউন উঠে যায় এবং দেশের অনেক সেক্টরেই আবার কর্মব্যস্ততা ফিরে আসে। ধীরে ধীরে এখন চালু হয়ে গেছে গণপরিবহন, মার্কেট থেকে শুরু করে সবকিছুই। ক্রিকেটারদের অনবরত চাওয়ার মুখে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) ক্রিকেটারদের একক অনুশলীনের অনুমোদন দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে সেটা সম্ভব হয়নি। কারণ সার্বিক ও সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা আছে যেখানে সেই ‘হোম অব ক্রিকেট’ শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামটাই মিরপুরে অবস্থিত। আর করোনাভাইরাস সংক্রমণে মিরপুর রেড জোন অন্তর্ভুক্ত হওয়াতে ক্রিকেটারদের অনুশীলন শুরুর বিষয়টি নিয়ে আর কোন কথাই হয়নি। তবে আরেকটি মাস ক্রিকেটারদের ঘরে বসেই কেটে যাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে আবারও আলোচনা। কারণ প্রায় সবগুলো টেস্ট খেলুড়ে দেশই অনুশীলনে নেমেছে। দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় বাংলাদেশের এ বছর সবগুলো দ্বিপাক্ষিক সিরিজই বাতিল হয়েছে। কিন্তু সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপ ও অক্টোবরে টি২০ বিশ্বকাপ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। যেহেতু ক্রিকেট ফিরছে সবখানে আইসিসি এবং এসিসিও এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাবেই আছে। সেক্ষেত্রে এ দুটি আসরে অংশ নিতে হলেও দ্রুত ক্রিকেটারদের অনুশীলন শুরুর পথ বের করতে হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি)। এ অবস্থায় পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটা পর্যন্ত কিছুই করার নেই বলে জানিয়েছেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান আকরাম খান। মাঝ জুলাইয়েও অনুশীলন শুরু সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে আছে সংশয়। একক অনুশীলন, গ্রুপভিত্তিক অনুশীলনের ছক বেশ আগেই তৈরি করে বিসিবি। ঈদ-উল-ফিতরের পর দেশে লকডাউন উঠে যাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই বিসিবিও চাইছিল সীমিত পরিসরে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রিকেটারদের অনুশীলনে ফেরাতে। কারণ জুলাইয়ে ছিল শ্রীলঙ্কা সফর। তাছাড়া ক্রিকেটাররাও গত ১৭ মার্চ থেকে গৃহবন্দী হয়ে থাকতে থাকতে অনুশীলন করার জন্য চাপ দিচ্ছিল। সবকিছুই প্রস্তুত করে ফেলে বিসিবি। স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে ক্রিকেটারদের একক অনুশীলনের অনুমোদনও দেয়। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতেই ক্রিকেটাররা অনুশীলনে ফিরবেন সেই সম্ভাবনা প্রবল হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দেশে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হয়ে অবনতি ঘটেছে। এখন দৈনিক আক্রান্তের পরিমাণ গড়ে ৩৫০০ প্রায়। তাই অনুশীলনের সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসে বিসিবি। শ্রীলঙ্কা সফর স্থগিত হয়ে যায় আর অনুশীলন আদৌ কবে শুরু করা যাবে তা নিয়ে সংশয় থাকার কারণে আগেস্টে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজও বাতিল হয়ে যায়। কারণ টানা ৩ মাস কোন ধরনের ক্রিকেট কর্মকান্ড না থাকায় ক্রিকেটারদের পুনরায় ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ফিরতে সময়ের প্রয়োজন হবে। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুই বলেছেন, ক্রিকেটারদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে ম্যাচ খেলার জন্য প্রস্তুত হতে কমপক্ষে ৫/৬ সপ্তাহ সময় প্রয়োজন। সবমিলিয়ে বছরের সব দ্বিপাক্ষিক সিরিজ স্থগিত হয়ে গেছে বাংলাদেশের। সামনে আছে এশিয়া কাপ ও টি২০ বিশ্বকাপ। এ দুটি ইভেন্ট হবে কিনা তা নিয়ে সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত হয়নি। তবে ভারত ও বাংলাদেশ ব্যতীত বিশ্বের সবগুলো টেস্ট খেলুড়ে দেশই অনুশীলনে ফিরেছে। ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া, জিম্বাবুইয়ে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলার সব প্রস্তুতিই সেরে ফেলেছে। শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ডও নিয়মিত অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে। আবার ভারতের সবাই না হলেও বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার ব্যক্তিগতভাবে অনুশীলন শুরু করেছেন। অর্থাৎ ক্রিকেট ফিরছে প্রায় সবখানেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই সিরিজগুলো নিরাপদে করা সম্ভব হলে টি২০ বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপ আয়োজন নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয়ে যাবে সহজ। সেক্ষেত্রে এ দুই ইভেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তখন প্রস্তুতি ঘাটতিই বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে। এখন পর্যন্ত অনুশীলন শুরু হওয়ার কোন নামগন্ধ নেই। জুন মাসটাও চলে গেল জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহেও তা শুরু হওয়া নিয়ে আছে যথেষ্ট সংশয়। কিন্তু নিরুপায় হয়ে চুপ করে বসে থাকা ছাড়া বিকল্পও নেই বিসিবির হাতে। এ বিষয়ে আকরাম বলেন, ‘সব ব্যবস্থা তো আমরা করেই রেখেছি। তবে এখনই ক্রিকেটারদের অনুশীলনে নামিয়ে ঝুঁকি নিতে পারি না। ওদের কেউ যদি আক্রান্ত হয় সেটি আরও ভয়ের কারণ হবে।’ এখনও দেশে করোনা পরিস্থিতি যেমন সেটার উন্নতি না ঘটা পর্যন্ত অনুশীলন শুরুর কোন সম্ভাবনাই নেই। এ বিষয়ে আকরাম বলেন, ‘পরিস্থিতি একটু ভাল হলেই আমরা মাঠে নামব। পরিস্থিতি বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অনুশীলন শুরুর পর সামনে আমরা যে সিরিজ বা টুর্নামেন্ট পাব সেটি দিয়েই শুরু করব। টেস্টকে আমরা প্রাধান্য দিয়ে এসেছিলাম, কিন্তু সেটি দিয়ে শুরু করা সম্ভব হবে না হয়তো।’ আকরাম আশাবাদী এ বছরই এশিয়া কাপ টি২০ আসর হওয়ার ব্যাপারে। সে জন্য জুলাইয়ের মাঝামাঝি সাদা বলেই শুরু হতে পারে তামিম-মুশফিকদের অনুশীলন। আশার কথা হচ্ছে সেটি সম্ভব হলেও দীর্ঘ সময় পাবেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা নিজেদের প্রস্তুত করতে। কিন্তু সবই নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় সেটার ওপর।
×