ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডাঃ শাহজাদা সেলিম

ডায়াবেটিসের প্রাথমিক সতর্ক সঙ্কেত

প্রকাশিত: ২১:০৫, ৩০ জুন ২০২০

ডায়াবেটিসের প্রাথমিক সতর্ক সঙ্কেত

সকল বড় ঘাতকই সাধারণত সংগোপনে হানা দেয়। ডায়াবেটিসের মতো সর্বাঙ্গীন ঘাতকও তাই করে। অধিকাংশ ডায়াবেটিক রোগী প্রথম দিকে ডায়াবেটিস হবার কোন লক্ষণ অনুধাবন করতে পারে না। এর কারণ নতুন ডায়াবেটিক রোগীদের অনেকের কাছে ডায়াবেটিসের লক্ষণসমূহের কোন ভাল ধারণা না থাকতে পারে; তেমনই ডায়াবেটিসের শারীরিক লক্ষণসমূহও খুব ধীরে ধীরে, নীরবে ও দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ পেতে পারে। তাই সকলকেই ডায়াবেটিসের প্রারম্ভিক শারীরিক লক্ষণসমূহ ও জটিলতা সম্পর্কে ধারণা রাখা উচিত। টাইপ ১ ও টাইপ ২- দু’ধরনের ডায়াবেটিসেরই সতর্ক সঙ্কেত কিছু কিছু ক্ষেত্রে একরকম হতে পারে; আবার কিছুটা ভিন্নতরও হতে পারে। তবে অন্য ধরনের ডায়াবেটিসগুলোর শুরুটা সাধারণত অন্যরকমই হয়। টাইপ১ ডায়াবেটিস ধ্রুপদি লক্ষণসমূহ নিয়ে হাজির হয় অনেক সময়, যা সাধারণত কয়েকদিন বা সপ্তাহের মধ্যেই প্রকট আকার ধারণ করে। একই সঙ্গে আরও কিছু অটোইমিউন রোগের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। ঘন ঘন প্রসাব হওয়ার প্রবণতা সাধারণত ডায়াবেটিসের সর্বপ্রথম লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে। এরই ধারাবাহিকতায় ঘন ঘন পানিপিপাসা পাওয়া, ক্ষুধা বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি দেখা দেবে। ক্রমশ ডায়াবেটিক রোগীটি ক্লান্ত ও দুর্বল বোধ করতে থাকবে। ক্ষুধা বৃদ্ধি সত্ত্বেও ডায়াবেটিসের চিকিৎসা শুরু“না হলে, ওজন কমতে থাকে। এক্ষেত্রে শরীরের মাংসপেশি ক্ষয় পেতে থাকে। টাইপ ২ ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষেত্রেও অনুরূপ লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তবে তা আরও ধীর গতিতে হবে। এক্ষেত্রে কখনই এরূপ ভাবার সুযোগ নেই যে, শরীরের ইনসুলিন উৎপাদনের ক্ষমতা খুব বেশি হ্রাস পেয়েছে। বরং টাইপ ২ ডায়াবেটিস শুরু হবার প্রথমদিকে শরীরের ইনসুলিন অন্য সময়ের চেয়ে স্বাভাবিকভাবে বেশি থাকতে পারে। কিন্তু শরীরে ইনসুলিনবিরোধী (ইনসুলিন রেজিস্টেন্স) কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায়। টাইপ ২ ডায়াবেটিসে ইনসুলিনের স্বল্পতা এবং ইনসুলিন রেজিস্টেন্স সমন্বিতভাবে দায়ী। টাইপ ২ ডায়াবেটিসের রোগীরা অনেক সময়ই ডায়াবেটিসের দীর্ঘকালীন জটিলতা নিয়ে চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হবার পর বা হাসপাতালে ভর্তি হবার পর তার ডায়াবেটিস ছিল তা জানতে পারেন। এ দলের মধ্যে হৃদরোগ (হার্ট এ্যাটাক), স্ট্রোক, পায়ের বা অন্য জায়গার রক্তনালীর সমস্যা, পুরুষ বা মহিলার প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া অথবা ঘন ঘন বিভিন্ন রকম স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক জীবাণু সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়া ইত্যাদি হয়ে থাকে। ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণ বা সতর্ক সঙ্কেত অনুভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একজন ডায়াবেটিস ও হরমোন বিশেষজ্ঞের স্মরণাপন্ন হওয়া অতি জরুরি। উক্ত বিশেষজ্ঞ গ্লুকোজ খেয়ে ডায়াবেটিসের পরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগ শনাক্ত করবেন, রোগীর কোন অঙ্গ ডায়াবেটিসজনিত জটিলতায় আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করবেন, ডায়াবেটিসের সঙ্গে অন্য কোন রোগ উক্ত রোগীর দেহে বাস করছে কিনা তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করবেন এবং রোগীর জন্য সবচেয়ে উপযোগী চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করবেন। যারা দীর্ঘদিন ধরে দৈহিক স্থুলতাই ভুগছেন, তাদের দৈহিক ওজন কমানোটা অন্যতম প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে নিতে হবে। ধূমপান বন্ধ করতে হবে। মিষ্টান্ন, লবণ ও চর্বি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ সীমিত করতে হবে। জীবনকে নতুন দৃষ্টি ভঙ্গিতে দেখে আরও পরিপূর্ণ ও উৎপাদনমুখী কর্মকান্ড পরিচালনা করা সম্ভব। লেখক : এমবিবিএস, এমডি ডায়াবেটিস ও হরমোন বিশেষজ্ঞ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ফোন : ০১৯১৯ ০০০০২২
×