ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

করোনাকালে এ্যান্টিবডি টেস্টও দরকার

প্রকাশিত: ২০:৩৩, ৩০ জুন ২০২০

করোনাকালে এ্যান্টিবডি টেস্টও দরকার

প্রতিদিন স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মিত বুলেটিন- করোনায় কতজনের মৃত্যু, কতজন আক্রান্ত, কতজন সুস্থ (করোনাজয়ী)। এর বাইরের খবর কি! কতজনের হার্ড ইমিউনিটি বা এ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে! কতজন কতদিনে হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে সুস্থ হয়েছেন! করোনার সঙ্গে কিভাবে তারা যুদ্ধ করেছেন! স্বাস্থ্যবিধির সঙ্গে কি ওষুধ সেবন করেছেন! আইসোলেশন হাসপাতালে কি ওষুধ দেয়া হচ্ছে! ভেন্টিলেশন কি মিলছে! এই খবরগুলো অগোচেরেই রয়ে যায়। প্রতিদিন টিভি চ্যানেলগুলোর ‘আলোচনা সভায়’ যারা নিয়মিত আসেন (কখনও একই মুখ বহুবার বিভিন্ন চ্যানেলে) তাদের বহুমুখী কথার সারমর্ম একই! বলা যায় চর্বিতচর্বণ। এবার আসা যাক আসল বিজ্ঞজন কি বলেছেন। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আসলে চীনের আঁতুড়ঘরে জন্ম নেয়া সার্স (সিভিয়ার এ্যাকিউট রেসপেরেটরি সিনড্রম) এর একটি জাত। যার বর্তমান পরিচিতি সার্স কোভিড-২। এই কোভিড-১৯-এর চলাচল এখনও বুঝে ওঠা যায়নি। কিভাবে কত বছর বয়সী মানবদেহে প্রবেশ করছে তা নিরূপণ করা যায়নি। এর জীবন রহস্য (জেনোম সিকুয়েন্স) রহস্যই থেকে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে উদ্ঘাটিত হয়েছে। তারপরই বলা হয়েছে কতবার যে এই সিকুয়েন্স মিউটেশন হয়েছে তার হিসাব নেই। আসলে ভাইরাসের এই জিন ধরাই যাচ্ছে না। প্রথমে বলা হলো বয়স্করা আক্রান্ত হবে। তারপর বলা হলো তরুণরা। তারপর বলা হলো মধ্যবয়সীরা। এখন বলা হচ্ছে শিশু থেকে বুড়ো সকলেই। কেউ বাদ যাচ্ছে না। তাহলে কি দাঁড়ালো! অদৃশ্য কোভিড-১৯ অধরা! তবে একটি বিষয়ে সকলেই ঐকমত্য- মানব দেহে এই ভাইরাসের আক্রমণের প্রধান স্থল ফুসফুস। করোনা ফ্লাইটে ফুসফুসে প্রবেশের রুটগুলো হলো নাক কান চোখ মুখ। তারপর গলায় ট্রানজিট করে সরাসরি ল্যান্ড ফুসফুসে। তারপর! বাঁচলে বাঁচলেন। তবে কোনভাবে যদি করোনা ফ্লাইটের রুটগুলো বন্ধ করে দিয়ে গলায় ট্রানজিট রুদ্ধ করে দেয়া যায় তাহলে অক্কা পাওয়া থেকে রক্ষা পেতে পারেন। এই রুটগুলো বন্ধ করে দেয়ার চিকিৎসাই দেয়া হচ্ছে। মূল চিকিৎসা হলো প্রকৃতির। স্বাস্থ্যবিধি মানা। হালকা ব্যায়াম করা। ব্রেদিং এক্সসারসাইজ করা। এক মিটারের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। চিকিৎসকগন যে ওষুধের কথা বলছেন তার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি কেউ দিতে পারছেন না। একটা দুটো করে ওষুধের ট্রায়ালে সুস্থ হওয়ার কথা বলছেন, অমনি ওষুধগুলো নেই হয়ে যাচ্ছে। ফের আরেকটি ওষুধের কথা বলছেন। পূর্বেরটি মার্কেটে এসে পরেরটি নেই হয়ে যাচ্ছে। এ্যালোপ্যাথি ওষুধের পাশাপাশি হোমিওপ্যাথিও এসে গেছে। হোমিও ওষুধের নাম ও ডোজ নিয়ে তেমন প্রতিক্রিয়া পড়েনি। অনেকে এসব নাম বোঝেও না। এখন বাকি আছে আয়ুর্বেদ। তাও এলো বলে। ভেষজ তো বিকল্প পথে শুরু হয়েছে। এখন ফলাফল কি দাঁড়াচ্ছে বলুন! আপনি তো কথা বলে বিজ্ঞ হয়েছেন। সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টোটকা ডাক্তারও এসেছে। আতি বক্তা পাতি বক্তাও অনেক আগেই আসন পেতেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এত কিছুর মধ্যেও কিছু ভাল পরামর্শ আসছে। যেমন : করোনা কাল কবে কাটবে তা কেউ বলতে পারে না। করোনার সঙ্গেই যখন বাস করতে হবে তখন নিজেদের সুরক্ষার দায়িত্বটুকু নিজেদের নিয়ে চলাফেরা করা দরকার। পৃথিবী তো বসে থাকবে না। মানুষের গড়া সভ্যতার পথকে মানুষকেই মসৃণ করে দিতে হবে। মানুষ এই পৃথিবী গড়ে তুলেছে মানুষকেই এই পৃথিবী রক্ষা করতে হবে। পৃথিবী নতুন করে বদলে গিয়ে নতুন পৃথিবী গড়ে উঠবে। জীবন রক্ষার জন্য মানুষের স্বাস্থ্যবিধির এই অভ্যাসগুলো চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে। আরেকজনের পরামর্শ : দয়া করে মানুষকে আতঙ্কিত করবেন না। ভীতিকর অবস্থার মধ্যে ফেলবেন না। তাদের প্রীতিকর করে তোলার চেষ্টা করুন। বয়স্ক ও মধ্য বয়সীরা দিনের পর দিন শুধু নেগেটিভ আর নেগেটিভ খবর শুনে খবর পড়ে খবর জেনে মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলছেন। দিনে দিনে কাবু থেকে কাবু হয়ে পড়ছেন। তাদেরকে সুস্থ হয়ে বাঁচতে সহযোগিতা করুন। এমনিতেই তারা আপনজনের সান্নিধ্য পাচ্ছে শুধু ভার্চুয়ালে (স্মার্ট ফোনে ট্যাবে ল্যাপটপে)। তারপরও একান্ত আপনে নির্মল প্রশান্তির জায়গা হারিয়ে ফেললে তারা অসুখ বিসুখের সঙ্গে লড়বেন কি করে। এই বিষয়গুলো সকল বয়সীদের জন্য প্রযোজ্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে রুমি বাগচি ভাওয়াল জানিয়েছেন তাদের প্রতিষ্ঠান এ্যান্টিবডি চেকআপ করাচ্ছে। অর্থাৎ শরীরে কোন ভাইরাস আক্রমণ করার পর প্রকৃতি থেকেই এ্যান্টিবডি ফরম করেছে কিনা সেই পরীক্ষা। তার শরীর এান্টিবডি হয়েছে। তিনি জানালেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম দিকে কেউ করোনাভাইরাসকে গুরুত্ব দেয়নি। হাসাহাসি করেছে। যখন তা চরমে উঠছে তখন হুঁশ হয়েছে। ততদিনে কোভিড-১৯ যা করার তা করেই দিয়েছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছোট রাজ্যগুলোতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কম। এর অন্যতম কারণ জনঘনত্ব কম। সোশ্যাল ডিসটেন্সিং (সামাজিক দূরত্ব) এমনিতেই হয়ে আছে। তারা স্বাস্থ্য সুরক্ষাও মেনে চলেছেন। বাংলাদেশ ও ভারতের প্রেক্ষাপটে তার মন্তব্য : এ্যান্টিজেন পরীক্ষার (করোনা পরীক্ষা) পর জানা যাচ্ছে কে পজিটিভ আর কে নেগেটিভ। যাদের পরীক্ষা হচ্ছে না যারা লকডাউনের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে বাজারে যাচ্ছে সদাইপাতি করছে তাদের দেহে কোভিড-১৯ বইছে কিনা তা কি কেউ জানতে পারছে। ভালনারেবল এলাকা বিশেষ করে বস্তি জনঘনত্বের এলাকায় কত জনের পরীক্ষা হয়েছে। হয়তো দেখা যাবে আপনি যেখানে গেছেন আপনার কাছেই লোকই করোনা আক্রান্ত, যার পরীক্ষা হয়নি। তার কাছে থেকে আপনি এলেন। আপনি আপনার আশপাশের লোক কেউ জানল না। উপমহাদেশের দেশগুলোতে (বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারত) এই অবস্থাই এখন বেশি! তাহলে কি হার্ড ইমিউনিটির (এ্যান্টিবডি) পথে যাচ্ছে দেশ! বাংলাদেশে এখনও এ্যান্টিবডি পরীক্ষা শুরু হয়নি। বর্তমানে যা হচ্ছে তা হলো দেশের ৫০টি হাসপাতালে আরটি পিসিআর ল্যাবে করোনা টেস্ট। প্রায় ১৭ কোটি মানুষের এই বাংলাদেশে প্রতিদিন যে টেস্ট হচ্ছে হিসাব করে নিন তা কত শতাংশ দাঁড়ায়! এর বাইরে যে মানুষ যারা প্রতিনিয়ত কোনমতে মাস্ক পরে চলাফেলা করছে তাদের মধ্যে কতজন আক্রান্ত। বলা হচ্ছে টাকা লেনদেনে সাবধানে থাকতে। কতজন টাকা লেনদেন করার সময় টাকার ওপর ও হাতে স্যানিটাইজ করি। গণপরিবহনে যাতায়াত করতে হচ্ছে। কেনাকাটার জরুরী প্রয়োজনে বাইরে যেতে হচ্ছে। প্রতিটি দেশের সরকার বলছে অর্থনীতির গতি ঠিক রাখতে। দেশে লাল হলুদ সবুজ জোন করার পালা শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে শিথিলও হচ্ছে। কখনও বলা হচ্ছে আরও কঠিন হবে। তা তো এপ্রিল মাস থেকেই বলা হচ্ছে। এপ্রিল মে কঠিন হবে। এখন বলা হচ্ছে জুন কঠিন হবে। তারপর কি! কঠিনেরে ভালবাসিলাম হবে! রুমি বাগচি ভাওয়ালের কথা দিয়েই ইতি টানতে হচ্ছে- এ্যান্টিবডি টেস্টের সময় এখনই। তাহলে বোঝা যাবে দেশ কি হার্ড ইমিউনিটির দিকে যাচ্ছে। ৮০ শতাংশ মানুষের হার্ড ইমিউনিটি (এ্যান্টিবডি) থাকলে করোনার সঙ্গে বাস করা সহজ হবে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, করোনা যাবে না। থাকবে। টিকা কবে আসবে কে জানে। লেখক : সাংবাদিক
×