ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকার দিনরাত -মারুফ রায়হান

প্রকাশিত: ২০:২৬, ৩০ জুন ২০২০

ঢাকার দিনরাত -মারুফ রায়হান

দেখতে দেখতে এক মাসই হয়ে গেল সাধারণ ছুটি শেষ হয়েছে। এই এক মাসে নিঃসন্দেহে রাজধানীর পথেঘাটে ভিড় বেড়েছে। প্রধান সড়কে কয়েক মিনিট চোখ রাখলেই বোঝা যায় কী পরিমাণ গাড়ি রাস্তায় নামছে। গণপরিবহন স্বাভাবিক সময়ের মতোই যথেষ্ট পরিমাণে চলতে শুরু করেছে। ঢাকাবাসী সুযোগ পেয়ে ঢাকার বাইরে বেড়াতে যাওয়াও শুরু করেছে বেশ ভালমতোই। এমনকি ঘরোয়াভাবেও এখন রাতের বেলা আড্ডা বসাচ্ছেন বন্ধুবান্ধব নিয়ে। সান্ধ্যকালীন আড্ডা তো আর তেমন হচ্ছে না কফি হাউসে বা হোটেল-রেস্টুরেন্টে। বেশির ভাগই বন্ধ থাকছে, অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার কথা ভাবছেন। তাই বিকল্প হিসেবে কোন বন্ধুর বাসায় মিলিত হচ্ছেন কয়েকজন বন্ধু। চলছে আড্ডা, গানবাজনা, খানাপিনা। ভাইরাসের সঙ্গে সহাবস্থান বোধহয় এভাবেই শুরু হয়ে যাবে। ধারণা করি জুলাই মাসেই বেশি সংখ্যক মানুষ ঘরের বাইরে বের হতে থাকবেন নিয়মিতভাবে। সঙ্গে থাকবে স্যানিটাইজার, মুখে অবশ্যই মাস্ক। বেশি সাবধানীরা বহন করবেন জীবাণুনাশক স্প্রে, হাতে পরবেন দস্তানা। এছাড়া উপায়ই বা কী! সামাজিক মানুষ আর কত মানসিক পীড়ন সহকারে ঘরবন্দী থাকবেন? যুগল সুসংবাদ পত্রিকার কাজ নাকি শুধু দুঃসংবাদ দেয়া। ঘটা করে সুসংবাদ মিললেও পাঠকের চোখ খোঁজে টাটকা খবর, আর সেটা সম্ভবত মন্দ খবরই। যা হোক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) উদ্যোগে সংগঠনের সদস্য ও পরিবারবর্গের জন্য সার্বক্ষণিক এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশ এ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতির সহায়তায় ঢাকা শহরের যে কোন স্থান থেকে এই সার্ভিস দেয়া হবে। এ্যাম্বুলেন্স সেবার জন্য আগ্রহী সদস্যদের নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। এই সুসংবাদ নিঃসন্দেহে ঢাকার সাংবাদিকদের জন্য প্রযোজ্য। আসলেই এটি কতটা কাজে আসবে সেটি বুঝতে পারব এক মাসের মধ্যেই। তবু ভাল লাগছে যে বর্তমান কার্যকরী কমিটি একটা ভাল পদক্ষেপ নিয়েছে। দ্বিতীয় সুখবরটি পৌনে দুই কোটি ঢাকাবাসীর জন্য প্রযোজ্য। সত্যিই যদি এটি বাস্তবায়ন হয় তাহলে বিরাট একটি কাজ হবে। আমরা সাংবাদিকরা তো লিখে লিখে কত কলমই না ভেঙে ফেলেছি। সব কালি শেষ করে ফেলেছি। মনে হতো এ সবই বুঝি অরণ্যে রোদন। ঢাকার খালগুলো আর জীবন ফিরে পাবে না। দখল-দূষণ থেকে তাদের মুক্তি ঘটবে না। কিন্তু সরকার যে ঠিকই উদ্যোগী হবে, ঢাকার প্রাণসম এই খালগুলোও আবার প্রাণ ফিরে পাবে, এমনটা বহু ঢাকাবাসীর কল্পনার অতীত ছিল। আশা করতে দোষ কী! খবরে পড়েছি ঢাকার খালগুলোকে হাতিরঝিলের মতো দৃষ্টিনন্দন করার পরিকল্পনা সরকারের। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেছেন, ঢাকার খালগুলোকে পারস্পরিক সংযোগ করে নৌপথ হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী করলে সড়কে যানবাহনের চাপ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। অন্যদিকে নগরবাসীর ভোগান্তি কমাতে খালগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ওয়াসার ড্রেনেজ সার্কেল ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) কাছে হস্তান্তরের প্রস্তাব দিয়েছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। শনিবার আশকোনা হজক্যাম্প থেকে সিভিল এভিয়েশন অফিসার্স কোয়ার্টার হয়ে বনরূপা হাউজিং পর্যন্ত খনন করা খালের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এই প্রস্তাব দেন। খালটি খননের ফলে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের একাংশ, কসাইবাড়ী, আশকোনা, কাওলাসহ আশপাশের এলাকার জলাবদ্ধতা অনেকাংশে দূর হবে বলে আশা করছি। মেয়র ঠিকই বলেছেন। খালগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ওয়াসার। কিন্তু জনগণের দুর্ভোগের কথা শুনতে হয় সিটি কর্পোরেশনকে। জনপ্রতিনিধি হিসাবে মেয়র ও কাউন্সিলরদের জবাবদিহি করতে হয়। কিন্তু ওয়াসাকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। তাই বিদ্যমান জনবল, যন্ত্রপাতিসহ ওয়াসার খাল ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করার প্রস্তাব দিয়েছেন মেয়র। কারাবাসীদের কল্যাণে গত বছর এই জুনেই কারাবন্দীদের জন্য মানবিক একটি সিদ্ধান্ত এসেছিল প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে। ঢাকার দিনরাত কলামে তার উল্লেখও ছিল। যারা বন্দী, তারাও মানুষ। তাদের দিনের প্রথম আহারটি ছিল সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই রুটি ও সামান্য গুড়। অনেক সময় পেরিয়ে গেছে, এটা সংশোধিত হয়নি। আমাদের মানবপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটা দেখে যুগোপযোগী স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশনা মোতাবেক সেই জুন থেকেই সারাদেশের কারাগারে খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। সবার জন্য দুই দিন সবজি খিচুড়ি, একদিন হালুয়া রুটি, বাকি দিনগুলোতে সবজি রুটি দেয়া হচ্ছে। এখন একজনের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ খাবারই দেয়া হচ্ছে। শুধু সকালে নয়, দুপুরে ও রাতে স্বাস্থ্যসম্মত সুষম খাবার দেয়া হচ্ছে। বিশেষ দিনগুলোয় বিশেষ খাবার তো চালু থাকছেই। সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠলে প্রতিটি মানুষেরই জীবনে নতুন আরেকটি দিন শুরু হয়। প্রাতঃরাশ করতে বসে যদি সেই জীবনকে গ্লানিকর মনে হয় দিনের প্রথম আহারে দারিদ্র্যের লক্ষণ থাকায়, তবে মানুষের মন ছোট হতে বাধ্য। প্রধানমন্ত্রী বরাবরই মানবিক। দেশের সব জেলখানায় ভার্চুয়াল সিস্টেম স্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি এবারের জুনে। পাশাপাশি তিনি বলেন, কয়েদিরা যেন মানবিক সুযোগ-সুবিধা পায়, সেজন্য সব কারাগারই সংস্কার করতে হবে। কারাগার থেকে বন্দীর মাধ্যমে যা আয় হবে, তার অর্ধেক তারা পাবে। বাড়ি যাওয়ার সময় নিয়ে যাবে। স্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেছেন, একটা আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, জেলের বাসিন্দারা যেন মানসম্মত অবস্থায় থাকতে পারে। দশ বছর আগেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার কারাবন্দীদের জন্য মানবিক সদয় পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করে। কারাবিধিতে বন্দীদের অনুকূল একটি রীতি বহাল রয়েছে। কারা বিধির ১ম খ-ে ৫৬৯ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের রেয়াতসহ ২০ বছর সাজা ভোগের পর মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি দীর্ঘকাল যাবত স্থবির হয়ে পড়েছিল। বর্তমান সরকারের, আরও নির্দিষ্ট করে বললে বলতে হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমেই ওই বিধির আওতায় হাজার বন্দীর মুক্তিলাভ ঘটে এক দশক আগে। প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে কারা ভোগকারী বৃদ্ধ, নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ও অসুস্থ এক হাজার বন্দীকে মুক্তি দেয়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। দ্রুততম সময়ের ভেতর ওই নির্দেশ পালনের জন্য কারা কর্তৃপক্ষ প্রশংসাও পান। বন্দীমুক্তির এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকা দরকার। ঘরবন্দী শিক্ষার্থী স্কুলের টিউশন ফি স্কুলগুলো সেই মার্চ থেকে বন্ধ। শিক্ষার্থীরা ঘরবন্দী। অভিভাবকদের কড়া নজর তারা যেন ঘরের বাইরে বের না হয়। কোন পিতা-মাতাই চায় না বাইরে বেরিয়ে তার সন্তান করোনার সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়ুক। স্কুল বন্ধ হলেও বেশ কিছু স্কুল অনলাইনে পাঠদানের ব্যবস্থা করেছে অল্প কিছুদিন হলো। তবে সব শিক্ষার্থীর ঘরে কি আর কম্পিউটার আছে? কিংবা ওয়াইফাই কানেকশান? স্কুল বন্ধ, কিন্তু শিক্ষকদের কি জীবনধারণ করতে হচ্ছে না। তবে কোন শিক্ষকই বা একালে শুধু স্কুলের বেতনের ওপর নির্ভর করে থাকেন। বরং নিজের স্কুলসহ অন্য স্কুলের ছাত্রদের প্রাইভেট পড়িয়েই বেশি রোজগার হয় তার। এদিকে ঘরে বসে থাকা ছাত্রদের স্কুলের বেতন দিতে অভিভাবকদের কষ্টই হওয়ার কথা এই করোনকালে। বিষয়টি নিয়ে পত্র-পত্রিকায় খুব লেখালেখিও হচ্ছে ইদানীং। এটাও বাস্তবতা যে ইচ্ছেমতো টিউশনসহ অন্যান্য ফি নির্ধারণ করছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাড়তি ফি পরিশোধ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন অভিভাবকরা। সরকার শিক্ষার উন্নয়নে নানা সুযোগ-সুবিধা দিলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ধরনের উচ্চ ফিয়ের কারণে শিক্ষাগ্রহণ এখন ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত বেতনসহ অন্যান্য ফি আদায় বন্ধে নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। তাই এবার শিক্ষা আইনের খসড়ায় এসব প্রতিষ্ঠানের লাগাম টেনে ধরার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় এ সংক্রান্ত ধারায় বলা হয়েছে, বাংলা ও ইংরেজী ভার্সনের সব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বেতন ও অন্যান্য ফি সরকার অনুমোদিত হতে হবে। অনুমোদন ছাড়া কোন রকম বেতন বা অন্যান্য ফি গ্রহণ করা যাবে না। এই বিধানের ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ক্ষেত্রেও ফি নির্ধারণ করে দেয়ার কথা বলা আছে। আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের টিউশন ও অন্যান্য ফি আইন, বিধি বা নির্বাহী আদেশ দ্বারা নির্ধারিত হবে। প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে শিক্ষানীতি প্রণয়নের পরের বছরই শিক্ষা আইন নিয়ে কাজ শুরু করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই আইনের প্রথম খসড়া তৈরি হয়েছিল ২০১২ সালে। পরে নানা বিষয় সংযোজন-বিয়োজন করে জনমত যাচাইয়ের জন্য ২০১৩ সালে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এরপর তা মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা হলে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। সর্বশেষ ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে খসড়াটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হলে ক্ষোভ প্রকাশ করে আবার মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়। শিক্ষা আইনের খসড়ায় ব্যাপক অসামঞ্জস্য, বৈপরীত্য ও বিদ্যমান বিভিন্ন আইনের সঙ্গে অসঙ্গতি থাকায় আবারও এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ফেরত পাঠায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ফলে শিক্ষা আইন আর আলোর মুখ দেখেনি। যুক্তি বলে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় স্কুলের বিদ্যুত, পানির বিলসহ অনেক ধরনের ব্যয় হচ্ছে না। শিক্ষকদের যাতায়াত খরচ হচ্ছে না। তাছাড়া আপদকালীন সময়ের জন্য কর্তৃপক্ষের একটা ফান্ড থাকে। সেখান থেকে অর্থব্যয় করা যেতে পারে। মহামারীকালে অতিমুনাফার পথ পরিহার করে শুধু জীবন রক্ষার জন্য প্রকৃত ব্যয় নির্বাহের বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখবে, এমন আশাও অভিভাবকদের। অভিভাবক, প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বিষয়টির সমাধান বেরিয়ে আসতে পারে। অভিভাবকরা তারই অপেক্ষায়। করোনাকালে কবির প্রস্থান স্নিগ্ধ কবি মাশুক চৌধুরী (জন্ম ১৯৪৯) প্রয়াত হলেন করোনাকালে। যদিও টেস্টে করোনা নেগেটিভ এসেছিল, কিন্তু ফুসফুসের সংক্রমণে কবির মৃত্যু হয়। মিষ্টি হাসি, মিতভাষী এবং কবিতায় বাকসংযম তথা পরিমিতিবোধের জন্য কবি মহলে তিনি অজাতশত্রু ছিলেন। পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন সাংবাদিকতাকেই। লেখক মোরশেদ শফিউল হাসান স্মৃতিচারণে লিখেছেন- ‘আমাদের সাহিত্যের ১৯৬০ ও ’৭০ দশকের একজন অগ্রগণ্য কবি ছিলেন মাশুক চৌধুরী। সে সময়ে দেশের এমন কোন নামী-দামী পত্রিকা বা সাময়িকী ছিল না যেখানে তাঁর কবিতা ছাপা হয়নি। তবে এদেশে ভাল লেখা এবং তার জন্য সামাজিক-প্রাতিষ্ঠানিক বা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়া ভিন্ন ব্যাপার। মাশুক চৌধুরী দীর্ঘ কয়েক দশক, বলা যায় জীবনের শেষদিনটি পর্যন্ত সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত থাকলেও, এবং পেশাগত ক্ষেত্রে তার দক্ষতার কথা সবার জানা থাকলেও, সাংবাদিকতা পেশাকে কখনও প্রভাব-প্রতিপত্তি, পরিচিতি বা জনপ্রিয়তা অর্জনের কাজে লাগাননি। কবি হিসেবেও নিজেকে কখনও মঞ্চে অধিষ্ঠিত বা পাদপ্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত করতে চাননি। স্বভাবধর্মেই সবসময় নিভৃতচারী থেকে গেছেন। ফলে নবীন প্রজন্মের কবি-লেখক বা সাহিত্য সম্পাদকরা অনেকে তার কবিতা দূরের কথা, নামের সঙ্গেও হয়ত পরিচিত নন। আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি যখন আত্মপ্রচার ও আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্য ধাকাধাক্কির মধ্যেও বোধ হয় অন্যায়, অনৈতিক বা রুচিহীনতার কিছু আছে বলে মনে করা হয় না।’ কবি মাশুক চৌধুরীর শেষ কর্মস্থল ছিল দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন। সেখানে তার সহকর্মী শেখ মেহেদি হাসান লিখেছেন- ‘তার কর্তব্যনিষ্ঠা, রুচি, নিখুঁত সম্পাদনা প্রভৃতি আমাকে আকর্ষণ করত। সহকর্মী হিসেবে তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল নিবিড়। নির্মল হৃদয়ের অধিকারী এই মানুষটির সঙ্গে আড্ডা হয়েছে বহু। মনে পড়ছে, কয়েক বছর আগে তিনি অফিসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। শ্রদ্ধেয় সম্পাদক নঈম নিজাম ভাইয়ের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে তাঁকে এ্যাপলো হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালে রাসেল, সালাউদ্দিন, আসলাম ও আমি গভীর উদ্বেগে পাঁয়চারি করছি। পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। রাত সাড়ে ১১টায় চিকিৎসক জানালেন, পরিবারের যে কোন একজন সদস্য দরকার। জরুরী। বিষয়টি সম্পাদক ও মাহমুদ হাসান ভাইকে জানালে দুজনই দ্রুত চলে এলেন হাসপাতালে। পরিবারের পক্ষে আমি দায়িত্বপূর্ণ একটি স্বাক্ষর করলাম।’ [email protected]
×