ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সর্পদংশনের জ্বালা

প্রকাশিত: ২০:২৫, ৩০ জুন ২০২০

সর্পদংশনের জ্বালা

বিষধর সাপের কামড় মানুষের জীবনে কাম্য নয় কখনই। এমন আশঙ্কা থেকে বাঁচতে আধুনিক চিকিৎসাও সব থেকে বেশি জরুরী। আবার সব সাপে যে বিষ থাকে এমনটাও নয়। কিন্তু সাপে কামড়ানোর পর যে মাত্রায় বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা দেয়া আবশ্যক, সেখানে এখনও মান্ধাতা আমলের সেই ওঝাকে দিয়েই বিষ ঝারার প্রচেষ্টা দৃশ্যমান। অবিশ্রান্ত বর্ষণের ভরা ঋতুতে সাপ তার গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে। ঝোপ-জঙ্গলের আশপাশের বসতবাড়িতে ঢুকেও পড়ে। এর ফলে গ্রামগঞ্জে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষ মারা যায় শুধু হাতুড়ে চিকিৎসার কারণে। সাপের কামড়ের জন্য যে প্রতিষেধক চিকিৎসা দেয়া হয়, যা এ্যান্টিভেনাম ইনজেকশন নামে পরিচিত, সেটারও পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। দেশের বিভিন্ন সরকারী হাসাপাতালে যা যথেষ্ট পরিমাণ থাকার কথা সেখানেও রয়েছে হরেক রকম বিপত্তি। উপজেলা পর্যায়ে এই প্রতিষেধক অত্যন্ত জরুরী, অথচ সেখানে তা নেই। বাংলাদেশে অবিষধর সাপের প্রজাতিই বেশি। তাই সাপের কামড়ে আক্রান্ত হলেও মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে না সবার। কম সংখ্যক প্রজাতিই বিষধর এবং প্রাণঝুঁকির ব্যাপারটিও সেখানে এড়ানো যায় না। তবে চিকিৎসা পদ্ধতির সঙ্কটের কারণে সিংহভাগ মানুষ সর্পদংশনের সেবা থেকেও প্রায় বঞ্চিত। শুরু হয়েছে ভরা বর্ষার দুর্দমনীয় প্রকোপ। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গা পানিতে সয়লাব হওয়ার খবরও আছে। সাপের উপদ্রবের খবর কিছু স্থান থেকে পাওয়াও যাচ্ছে। বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনায় সাপের কামড়ে মৃত্যুর সংবাদ এসেছে। পরিসংখ্যান বলছে সাপের কামড়ে বছরে দেশে কমপক্ষে সাড়ে সাত হাজার মানুষ মারা যায়। তথ্যটা ভয়াবহ। আর এর শিকার হচ্ছে গ্রামাঞ্চলের মানুষ। এর কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে সাপের বসতি ভেঙ্গে গড়ে ওঠা ভৌত অবকাঠামো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে প্রতি বছর বাংলাদেশের ৬ লাখ মানুষকে সাপের দংশনে আক্রান্ত হয়। যেসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাপের কামড় বেশি তারা দূরবর্তী হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিতেও ব্যর্থ হয়। আবার মাঠ পর্যায়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকে সর্পদংশনের প্রতিষেধক পাওয়া দুর্লভ একটা বিষয়। ফলে বিপাকে পড়ে সাপের কামড় খাওয়া আক্রান্ত মানুষ। এ্যান্টিভেনাম ইনজেকশন যদি না পাওয়া যায় তাহলে মানুষের প্রাণঝুঁকি ঠেকানো মুশকিল। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি সূত্র মতে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে অসংক্রামক রোগের প্রতিষেধকের মধ্যে সর্পদংশনের প্রতিরক্ষা ওষুধও তৈরি করা হবে দেশেই। বিশেষজ্ঞদের তথ্য মতে সারাবিশ্বে ৩ হাজার প্রজাতির সাপ আছে। সেখানে বাংলাদেশে মাত্র এক শ’ প্রজাতির সাপ দেখা যায়। তার মধ্যে ৩২ প্রজাতিই বিষধর। আর বাকি ৬৮ প্রজাতিই বিষমুক্ত। সাপ মানুষকে দংশন করে সেটা যেমন ঠিক, পাশাপাশি পরিবেশকে রক্ষা করে বসবাসের উপযোগীও করে তোলে। পরিবেশকে বিপন্ন করার বিভিন্ন কীটপতঙ্গ সাপের আহার হিসেবে বিবেচিত হয়। সাপ পরিবেশ সুরক্ষায়ও প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখে। সাপের বিষ তোলার চিকিৎসা পদ্ধতি দিতে গেলে সাপের প্রজাতি চিহ্নিতকরণও আবশ্যক। আর সেটা জানা না গেলে স্বাস্থ্যসেবা দেয়াও সঠিক হয় না। এমন বিপত্তি মোকাবেলা করতে হয় হরহামেশাই। এন্টিভেনাম ইনজেকশন দেয়ার মতো যথেষ্ট প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের অভাবও এক্ষেত্রে বিবেচনায় আনা উচিত। সব মিলিয়ে সাপের কামড় থেকে রক্ষা পাওয়া তো বটেই, আক্রান্তদেরও কিভাবে যথার্থ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা যায় সেটা নিশ্চিত করাও আবশ্যক।
×