ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্লাজমা সাপোর্ট সেন্টার

প্রকাশিত: ২০:২৪, ৩০ জুন ২০২০

প্লাজমা সাপোর্ট সেন্টার

জনকণ্ঠের ২৮ জুনের সংখ্যার প্রধান শিরোনাম যখন ‘বেহাল চিকিৎসা ব্যবস্থা’, তখন একটি স্বস্তিদায়ক সংবাদও মিলেছে। দেশে প্রথমবারের মতো যাত্রা শুরু করেছে প্লাজমা সাপোর্ট সেন্টার। সরকারী-বেসরকারী কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় এটি কাজও শুরু করেছে ইতোমধ্যে। ৩৬ করোনা রোগীকে এই সেন্টারের মাধ্যমে প্লাজমা সরবরাহও করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে করোনাজয়ীদের কাছ থেকে ব্লাড প্লাজমা সংগ্রহ করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, দেশে কমপক্ষে ৫০ হাজার করোনাজয়ী রয়েছেন বলে খবর আছে। সে অবস্থায় প্লাজমা সাপোর্ট সেন্টার স্থাপন নিঃসন্দেহে একটি আশা জাগানিয়া খবর। এই সেন্টারের মাধ্যমে ইতোমধ্যে করোনাজয়ীদের তথ্য সংগহ করা, ডেটাবেজ তৈরি, দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে একটি যোগাযোগ তথা মেলবন্ধন তৈরির সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে। উল্লেখ্য, প্লাজমা হলো রক্তের অন্যতম একটি উপাদান, যা রক্তরস নামে অভিহিত। যেসব রোগী করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন মূলত তাদের কাছ থেকেই সংগৃহীত হয়ে থাকে প্লাজমা। অবশ্য প্লাজমা থেরাপি করোনা রোগীকে শতভাগ সুস্থ করে তোলার ক্ষেত্রে নিশ্চিত গ্যারান্টি কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। সত্যি বলতে কি, করোনা নিরাময়ের জন্য প্রচলিত কোন চিকিৎসাই নিশ্চিত কার্যকর নয়। তবে প্লাজমা থেরাপিতে করোনা রোগীর উন্নতির একাধিক খবরও আছে। উল্লেখ্য, এই চিকিৎসা পদ্ধতি আদৌ নতুন নয়; বরং শতাব্দী প্রাচীন। ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় যেমন ব্লাড প্ল্যাটিলেট লাগে, তেমনি করোনা রোগীর উপশমে প্লাজমা থেরোপি সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। এর পাশাপাশি সরকারী উদ্যোগে আগামীতে অন্তত ৭০টি হাসপাতালে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা, এক হাজার হাই ফ্লো অক্সিজেন নেজাল ও ১০ হাজার অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনার প্রচেষ্টা চলছে, যা করোনা রোগীর নিরাময়ের জন্য অতীব সহায়ক হবে। এই সুবিধা ধনী-গরিব নির্বিশেষে নিশ্চিত করতে হবে। ভয়াবহ ও হন্তারক সংক্রামক ব্যাধি করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯-এর আদৌ কোন নিদান নেই। অদ্যাবধি আবিষ্কার হয়নি কোন ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক, যা কার্যকর করোনা প্রতিরোধে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন করোনা আক্রান্ত রোগীকে নিরাময় করে তুলতে। কিছু ক্ষেত্রে প্রচলিত ওষুধ কিছু কাজ করলেও ব্যর্থ হচ্ছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে। ম্যালেরিয়ার প্রচলিত ওষুধ, এমনকি স্টেরয়েড খাওয়ার কথাও বলেছেন অনেকেই। ব্লাড প্লাজমাও তাই। এসবের কোনটাই কিন্তু প্রমাণিত নয় বৈজ্ঞানিকভাবে। করোনা নিরাময়ের নিদান তো নয়ই। বিশ্বের কয়েকটি দেশ অন্তত ২০টির বেশি প্রতিষেধক তৈরির কাজে অনেকটাই অগ্রসর হয়েছে। দু-একটি ক্ষেত্রে মানবদেহে এর সফল প্রয়োগও হয়েছে বলে খবর আছে। এগিয়ে আছে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন। তবে তা বাজারে আসতে এখনও অনেক দেরি। ততদিন পর্যন্ত বসবাস করতে হবে করোনাকে নিয়েই। বাংলাদেশ ভ্যাকসিনের গবেষণায় ৫০ হাজার ডলার অনুদানও দিয়েছে, যা ইতিবাচক। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ইতোমধ্যেই বিশ্বব্যাপী জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এ অবস্থায় বাংলাদেশেও ব্যাপক জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়ানো অত্যাবশ্যক। নিয়মিত হাত ধোয়া, স্যানিটাইজার ব্যবহার, মাস্ক-গ্লাভস ব্যবহারসহ ব্যক্তিগত সুরক্ষা নীতি সর্বদাই মেনে চলতে হবে ঘরে ও বাইরে সর্বত্র। হাসপাতাল কিংবা হোম কোয়ারেন্টাইনের নিয়মকানুন অনুসরণ করতে হবে যথাযথভাবে। জনসমাগম যথাসম্ভব বর্জন ও পরিহার করতে হবে। প্রয়োজন ব্যতিরেকে ঘরের বাইরে না বেরোনোই ভাল। সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে ভুয়া প্রেসক্রিপশন, ওষুধ ও টোটকা চিকিৎসার বিরুদ্ধে।
×