ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁর মহাদেবপুর হাটে খাজনা আদায়ের নামে চলছে চরম অরাজকতা

প্রকাশিত: ১৭:২২, ২৯ জুন ২০২০

নওগাঁর মহাদেবপুর হাটে খাজনা আদায়ের নামে চলছে চরম অরাজকতা

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ ॥ নওগাঁর মহাদেবপুর হাটে খাস আদায়ে (খাজনা আদায়) ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা ভুমি অফিসের সার্ভেয়ার এমদাদুল হক ও ইউনিয়ন ভুমি অফিসের সহকারী তহশিলদার ফিরোজ আহম্মেদের বিরুদ্ধে। যেখানে সরকারি টোল (খাজনা) আদায়ের বাইরে অতিরিক্ত টোল আদায় করা হচ্ছে। আবার হাট থেকে আদায়কৃত খাজনা সরকারি কোষাগারে সঠিকভাবে জমা দেয়া হয় কিনা তা নিয়েও গুঞ্জন চলছে। এতে সরকার লাখ লাখ টাকা রাজস্ব পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট বিষয়টির ওপর নজরদারী বাড়ানোর অনুরোধ করছেন স্থানীয় সচেতনরা। জানা গেছে, চলতি ১৪২৭ বঙ্গাব্দে মহাদেবপুর হাট ইজারা হয়নি। এতে সরকারিভাবে খাস আদায় (খাজনা আদায়) করা হচ্ছে। সপ্তাহে দুইদিন শনিবার ও বুধবার হাট বসে। তবে শুধু শনিবার গরু ও ছাগল বেঁচাকেনা হয়ে থাকে। সরকারিভাবে যেখানে খাজনা আদায় নির্ধারণ করা আছে, প্রতিটি গরু ৪০০ টাকা এবং ছাগল ১৫০ টাকা। কিন্তু গত ২০ জুন শনিবার হাটে প্রতিটি গরু ৫০০-৫২০ টাকা এবং প্রতিটি ছাগল শতকরা ১০ টাকা করে খাজনা আদায় করা হয়েছে। এছাড়া লিখনিতে গরুতে ২০ টাকা এবং ছাগলে ১০ টাকা করে নেয়া হয় বলে উল্লেখ করা হয়। ২৭ জুন শনিবার হাটে প্রতিটি গরুতে ৫০০ টাকা খাজনা আদায় করা হলেও রশিদে ৪০০ টাকা এবং প্রতিটি ছাগলে ২০০ টাকা থেকে তারও বেশি টাকা খাজনা আদায় করা হলেও রশিদে ১৫০ টাকা লিখা হয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। প্রতি হাটে প্রায় ১০ হাজার মণ ধান, দেড়শ’ থেকে দুইশ’ মণ আলু বেঁচাকেনা হয়ে থাকে। ধান বিক্রেতার কাছ থেকে ৫ টাকা মণ ও ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৪ টাকা মণ এবং আলু ক্রেতা ও বিক্রেতার কাছ থেকে ১০ টাকা মণ হিসেবে খাজনা নেয়া হয়ে থাকে। এছাড়া অন্যান্য থেকেও খাজনা আদায় করা হয়। যেখানে শনিবার হাট থেকে প্রায় লাখ টাকা খাজনা আদায় হয়ে থাকে। ধানের আড়তের শ্রমিক সালাউদ্দিন বলেন, প্রতি হাটে প্রায় ১০ হাজার মণ ধান বেচাকেনা হয়ে থাকে। যেখানে কৃষকের কাছ থেকে ব্যবসায়ীররা প্রতি মণে ৫টাকা খাজনা কেটে নেয়। এছাড়া ব্যবসায়ীরা প্রতি বস্তায় (দুই মণ) ৮ টাকা খাজনা দিয়ে থাকে। কাঁচা তরকারির ব্যবসায়ী হবিবর বলেন, সপ্তাহে দু’দিন হাট বসে। প্রতি হাটে ২০ টাকা করে তাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করা হয়। তার মতো প্রায় ১০০ জনের কাছ থেকে ২০ টাকা করে আদায় করা হয়। উপজেলার খাঁজুর গ্রামের ছাগল ক্রেতা বাবু বলেন, গত শনিবার হাটে ৩ হাজার ৮শ’ টাকা দিয়ে ছাগল কিনে ২০০ টাকা খাজনা দিতে হয়েছে। কিন্তু রশিদে ১৫০ টাকা লিখা হয়। এছাড়া বেলকুড়ি গ্রামের রফিকুল ইসলাম দুইটি ছাগলে ৪০০ টাকা এবং মান্দা উপজেলার দূর্গাপুর গ্রামের আবুল হোসেনের দুইটি ছাগল ৩৫০ টাকা খাঁজনা দিতে হয়েছে। উপজেলার বাগডোব গ্রামের ইদ্রিস আলীর কাছ থেকে গত ২০ জুন তারিখে ২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে ছাগল কিনে ২৫০ টাকা এবং তুড়–কগ্রামের গরু ক্রেতা রিয়াজ উদ্দিনের কাছ থেকে ২২ হাজার ৮০০ টাকায় গরু কিনে ৫০০ টাকা খাঁজনা দিতে হতে হয়েছে। ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী তহশিলদার ফিরোজ আহম্মেদ এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি। বিষয়টি ইউএনও স্যার ভাল জানেন বলে জানান তিনি। মহাদেবপুর উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার এবং খাস আদায়কারী মো. এমদাদুল হক বলেন, আমরা সরকারি কর্মচারী হওয়ায় কখনো এমন দায়িত্ব পালন করা হয়নি। গত ২০ জুন হাটে খাজনা আদায়ে কিছুটা অসঙ্গতি হওয়ায় পরে তা বন্ধ করা হয়। তবে ২৭ জুন এক টাকাও বেশি নেয়া হয়নি। এছাড়া খাজনা আদায়ে কোন অনিয়ম করা হয়নি। মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান বলেন, গত ২০ জুন হাটে একটু সমস্যা হয়েছিল। এরপর থানা পুলিশের মাধ্যমে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। তবে গত ২৭ জুন হাটে সরকারি মূল্যের বাহিরে কোন খাজনা আদায় হয়নি। এছাড়া রশিদের বাইরে কেউ যদি বাড়তি টাকা নিয়ে থাকে এমন কোন লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×