ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নীলফামারীতে নদী ভাঙ্গন অব্যাহত

প্রকাশিত: ১৪:৫৭, ২৯ জুন ২০২০

নীলফামারীতে নদী ভাঙ্গন অব্যাহত

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ী ঢলে টানা চার দিন ধরে তিস্তা অববাহিকায় বন্যা চলছে। এতে করে চরগ্রামের মানুষজন চরম দূর্ভোগে পড়েছে। তিস্তার পানি লোকালয়ের ঢুকে পড়ায় অসহায় পরিবারের টিনের কাঁচা ঘরবাড়ি নড়বড়ে হয়ে পড়ছে। কারো কারো ঘর ভেঙ্গে পড়েছে। পাশাপাশি নদী ভাঙ্গন ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে। এতে করে নীলফামারী ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, ঝুনাগাছচাঁপানী ও টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। বন্যা ও ভাঙ্গন কবলিত মানুষজনের পাশাপাশে সরকারী সহায়তা নিয়ে ছুটে চলেছেন ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়শ্রী রানী রায়, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেজবাহুর রহমান, প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের সিনিয়র প্রকৌশলী ফেরদৌম আলম। সঙ্গে থাকছেন জনপ্রতিনিধিরা। আজ সোমবার উজানের ঢল কমে আসায় তিস্তা নদীর পানি অনেকাংশে নিচে নেমেছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরণ কেন্দ্র সুত্র মতে এ দিন সকাল ৬টায় দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার (৫২.৬০) ৫ সেন্টিমিটার ওপরে থাকলেও সকাল ৯টায় আরও ৩ সেন্টিমিটার কমে বর্তমানে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে গত চারদিন ধরে ওই পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আসছিল। সোমবার তিস্তা অববাহিকায় কোন বৃষ্টিপাত ছিলনা বলে সুত্র জানায়। এদিকে ফুঁসে উঠা তিস্তায় ইতোমধ্যে ৬৯ পরিবারের ঘরবাড়ি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়শ্রী রানী রায় জানান, প্রতিদিন নৌকাযোগে তিস্তা নদীর বন্যা ও ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শনে ছুটে যাচ্ছি। উপজেলার ঝুনাগাছ ইউনিয়নের ছাতুনামা ও ভেন্ডাবাড়িতে ৩৮টি, খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের কিছামত ছাতনাই মৌজায় ২৩টি ও টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চড়খড়িবাড়ি এলাকায় ৮টি সহ ৬৯টি পরিবারের বসতভিটা তিস্তা নদীতে বিলিন হয়েছে। তিনি আরও জানান এ পর্যন্ত উপজেলার ৬ ইউনিয়নে ৩ হাজার ৯১০টি পরিবার বন্যাকলিত হয়েছে। সরকারীভাবে এ পর্যন্ত মোট ১২৫ মেট্রিকটন চাল ও নগদ দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। পরিবারপ্রতি ২০ কেজি করে চাল ও যাদের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে তাদের ২০ কেজি চালের পাশাপাশি নগদ ২ হাজার করে টাকা প্রদান করা হচ্ছে। এ ছাড়া শুকনা খাবারো আমরা বিতরণ করছি বলে উল্লেখ করেন ইউএনও। উপজেলার ছাতুনামা গ্রামের রমজান আলী জানান তিস্তা নদীর পানি উজানের ঢলে গ্রামের কাঁচাঘরবাড়ি গুলো নড়বড়ে হয়ে ভেঙ্গে পড়ছে। কেউ কেউ বাঁশের ঠেকা দিয়ে ঘর রক্ষার চেষ্টা করছে। কেউ কেউ ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। বন্যা ভাঙ্গন দেখা দিলেই আমাদের কষ্টের শেষ নাই। একদিকে তিস্তার উজানের ঢলের পানি ঘরবাড়ি প্লাবিত করেছে। অন্য দিকে নদীর স্রোতের পানির চাপে ঘরবাড়িগুলো হেলে পড়ছে। এখন ভাঙ্গন রোধে ঘর বাঁচাতে বাঁশের ঠেকা দেয়া হয়েছে। ডিমলা উপজেলার খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন বলেন, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কিসামত ছাতনাই চরের প্রায় শতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন এই চর সংলগ্ন ওপারে ভারতের ফোকরতের চর রয়েছে। সেখানে প্রায় আড়াইশ পরিবারের বসবাস ছিল। সেই চরটি বিলিন হয়েছে। এখন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে কিছামত চরটি। পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান জানান আমার ইউনিয়নের ঝাড়শিঙ্গেশ্বর চর ও খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের কিছামত চর গ্রামটি ভারতের ফোকরতের চরের সঙ্গে একভিুত। তিস্তা নদীর বন্যা ও ভাঙ্গনে ভারতের ফোকরতের চরটি বিলিন হয়েছে। ভারতের ওই চরের সঙ্গে ভারতীয় বিএসএফের শিংপাড়া ক্যাম্পটিও বিলিন হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশের চরবাসীরা বেশ কিছু নৌকা নিয়ে ছুটি গিয়ে ওই চরের তিনশতাধিক পরিবারকে ভারতীয় ফোরেস্টবাগানে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের চরবাসীকে কৃতজ্ঞ প্রকাশ করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ জানান, রংপুর অঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র, যমুনেশ্বরী, টাঙ্গন, পুনর্ভবা, ইছামতি, নদীর চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। তবে এখন পর্যন্ত বড় কোনো স্থাপনায় ভাঙ্গন ধরেনি। মাঠে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা আছেন। কোথাও বড় ধরনের ভাঙ্গন দেখা দিলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×