ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাবনায় বিষধর সাপের উপদ্রব ॥ প্রতিষেধক নেই হাসপাতালে

প্রকাশিত: ২২:২৪, ২৯ জুন ২০২০

পাবনায় বিষধর সাপের উপদ্রব ॥ প্রতিষেধক নেই হাসপাতালে

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ২৮ জুন ॥ বর্ষার শুরুতেই বসতবাড়িসহ চরাঞ্চলে বিষধর সাপের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। করোনাকালে সাপের উপদ্রব মানুষের মাঝে আরেক আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। পৃথিবীর অন্যতম বিষাক্ত প্রজাতির সাপ রাসেল ভাইপারের দেখাও মিলছে অহরহ। গত সপ্তাহে তিন জনসহ জেলায় এক বছরে সাপের কামড়ে মারা গেছে ১৫ জন। অথচ জেলার কোন সরকারী হাসপাতালে নেই সাপের বিষের প্রতিষেধক। ভুক্তভোগী মানুষ সাপের উপদ্রব থেকে বাঁচতে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন। জানা গেছে, বর্ষা শুরুতেই ঈশ্বরদীর পদ্মার তীরবর্তী চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন গ্রামের ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে সাপের উপদ্রব। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঈশ্বরদীতে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র হোসেন আলী ৫ম শ্রেণীর ছাত্র আসলাম হোসেন এবং চাটমোহরে গৃহবধূ রুফিয়া খাতুন সাপের কামড়ে মারা গেছে। পাকশির গৃহবধূ ছোফুরা খাতুন সাপের কামড়ে প্রাণে বেঁচে গেছেন। এছাড়া সাপের কামড়ের শিকার হয়েছে আরও অনেকে। সাপের কামড়ের রোগীকে সরকারী হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে না। সাপের দংশনের শিকার রোগীর চিকিৎসায় কোন প্রতিষেধক নেই কোন সরকারী হাসপাতালে। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলেও অনেক সময় রোগীকে সময়মতো চিকিৎসা দিতে না পারায় বাঁচানো যাচ্ছে না। গত এক বছরের ঈশ্বরদীতে পলি খাতুন, শাহজালাল ইসলাম, রাজা আলী, পাবনা সদরের আফজাল কাজী, বিএনডিসির নৈশপ্রহরী জোনাব আলী, চাটমোহরের মাদ্রাসা শিক্ষক শফিউল আলম, সাঁথিয়া উপজেলার হান্নান খানসহ মারা গেছে প্রায় ১৫ জন। এদিকে পাবনা সদর উপজেলার দোগাছি এবং ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশির পদ্মার চরে পৃথিবীর অন্যতম বিষাক্ত সাপ রাসেল ভাইপারের দেখা মিলছে। এক গৃহবধূকে আক্রমণ করায় এলাকাবাসী দুটি রাসেল ভাইপার সাপকে মেরে ফেলেছে। এর মধ্যে একটি রাসেল ভাইপার পাবনা মেডিক্যাল কলেজে সংরক্ষণ করা হয়েছে। পাবনা মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ কাজী মুহিউদ্দিন জানান, সম্প্রতি চরাঞ্চলের এক নারীকে সাপে কামড় দেয়। এলাকাবাসী ওই সাপটি মেরে রোগী এবং মরা সাপটি সঙ্গে নিয়ে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে আসে। সেখানে তিন দিন ভর্তি রেখে চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেছে ওই নারী। তিনি জানান, সাপ ঠিকমতো কামড় বসিয়ে দিতে না পারায় রোগীটি প্রাণে বেঁচে গেছেন। রোগীর সঙ্গে নিয়ে আসা মরা সাপের চেহারা, আকার ও বৈশিষ্ট্য ভিন্ন হওয়ায় চিকিৎসকরা মরা সাপটি পাঠিয়ে দেন পাবনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ল্যাবে। সেখানকার বিশেষজ্ঞরা সাপটি পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিত হন সাপটি আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী সংস্থার বিলুপ্ত তালিকায় থাকা দুর্লভ প্রজাতির রাসেল ভাইপার। বিশ্বব্যাপী বিষক্রিয়ার রেটিংয়ে পঞ্চম এবং ক্ষিপ্রতায় প্রথম অবস্থানকারী রাসেল ভাইপার নামের এ সাপ। এই বিষধর সাপ আমরা নিজেরা চিনতে পারি এবং তা দ্রুত পরিচিতি ঘটাতে পারি এমনটি ভেবেই সাপটি সংরক্ষণ করে গবেষণার কাজে লাগানো হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। পাবনার সিভিল সার্জন ডাঃ মেহেদী ইকবাল বলেন, জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রতিষেধক থাকাটা খুবই জরুরী। তিনি বলেন, সঠিক সময়ে চিকিৎসা দিতে না পারলে সাপে কাটা রোগীর জীবন বাঁচানো ঝুঁকিতে পড়ে। হাসপাতালে প্রতিষেধক না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি জানান, উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নজরে দেয়া হবে।
×