নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগুনা, ২৮ জুন ॥ আমতলীতে আমন বীজের তীব্র সঙ্কট চলছে। কৃষকরা বাজারে বিআর-২৩ ও বিআর-৫২ জাতের ধানের বীজ পাচ্ছে না। ডিলারদের আগাম টাকা দিয়েও চাহিদা অনুযায়ী এ জাতের বীজ ধান না পেয়ে দিশেহারা কৃষকরা। এদিকে বিএডিসির সরবরাহকৃত বিআর-২৩ জাতের ধানের বীজ বাজারে না থাকায় সুযোগ বুঝে বিভিন্ন কোম্পানির ডিলাররা বীজ তিনগুণ মূল্যে বিক্রি করছে। কোম্পানির বীজের মূল্যে বাজারে কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। বীজ ধান না পেলে অনেক জমি অনাবাদি থেকে যাবে বলে জানান কৃষকরা। তারা সরকারের কাছে দ্রুত বীজ সঙ্কট সমাধানের দাবি জানিয়েছেন। আমতলী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, আমতলীতে এ বছর আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ হাজার ৫০০ হেক্টর। এতে বীজ ধান প্রয়োজন ৫শ’ ৮০ টন। এর মধ্যে ৯৫% কৃষক ফলন ভাল হওয়ায় বিআর-২৩ জাতের বীজ ধানের চাষাবাদ করেন। উপজেলার মোট জমির অর্ধেক বীজ কৃষকরা মজুদ রেখে থাকেন। অবশিষ্ট জমির জন্য দুই শ’ ৯০ মেট্রিক টন বীজের চাহিদা রয়েছে। আমতলী কৃষি অফিস দুই শ’ ৯০ মেট্রিক টন আমন ধানের বীজ বরাদ্দ চেয়ে পটুয়াখালী বিএডিসিকে চাহিদা পাঠিয়েছে। কিন্তু বিএডিসি কৃষি অফিসের চাহিদা অনুযায়ী বীজ সরবরাহ করছে না। ইতোমধ্যে বিএডিসি আমতলীতে ৫৮ মেট্রিক টন বীজ ধান বরাদ্দ দিয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। ওই বীজ ধান গত সপ্তাহের তিন দিনে বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানান ডিলাররা। কৃষকরা ডিলারদের কাছে আগাম টাকা ও পরিচয়পত্র জমা দিয়েও বীজ পাচ্ছে না। উপজেলার কোন ডিলার ও বীজের দোকানে বিআর-২৩ ধান পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষকরা হন্য হয়ে বীজ খুজে বেড়াচ্ছেন। বীজ না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পরেছে কৃষকরা। অনেক কৃষক বলেন, বীজ না পেলে অনেকে জমি অনাবাদি থেকে যাবে। কৃষকরা ক্ষেতে আমন ধান চাষাবাদে জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পুরো আষাঢ় মাস জুড়ে আমনের বীজতলার জন্য বীজের চাহিদা রয়েছে। রবিবার আমতলী পৌর শহরের হাসপাতাল সড়কের মেসার্স ইউনুস এ্যান্ড সন্স, মামুন এন্টার প্রাইজ ও আরিফ স্টোর, আমতলী কলেজ রোডের গাজী বীজ ভান্ডার ও আমতলী বীজসহ বহু বীজের দোকানে ঘুরে দেখা গেছে কোন ডিলার ও বীজের দোকানে বিআর-২৩ ও বিআর-৫২ (ভিত্তি) জাতের বীজ ধান নেই। আমতলী কলেজ রোডের গাজী বীজ ভান্ডার ও আমতলী বীজ ভান্ডারে ব্রি ধান-৫২, বিআর-১১, বিনা-৭ বিআর-৪৯ জাতের বীজ ধান পাওয়া গেলেও ১০ কেজির এক বস্তা বীজ ধান ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি করছে। কাউনিয়া গ্রামের কৃষক খলিলুর রহমান ও রুহুল আমিন বলেন, বিআর-২৩ জাতের বীজের জন্য ডিলারের কাছে গত এক সপ্তাহ পূর্বে টাকা ও পরিচয়পত্র জমা দিয়েছি কিন্তু এখনও বীজ পাইনি। বীজ পাব কিনা না নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তারা আরও বলেন, দ্রুত বীজ ধানের ব্যবস্থা না করলে অনেক জমি অনাবাদি থেকে যাবে। আমতলী হাসপাতাল সড়কের মেসার্স ইউনুস এ্যান্ড সন্সের মালিক বিএডিসির ডিলার ইউনুস মিয়া বলেন, বাজারে বিআর-২৩ ধানের কোন বীজ নেই। এ জাতের বীজের তীব্র সংঙ্কট চলছে। এছাড়াও বিআর-৫২ ও বিআর-৪৯ জাতের বীজের সঙ্কট চলছে। গত এক সপ্তাহ ধরে কৃষকদের এ জাতের বীজ দিতে পারিনি। প্রতিদিন কৃষকরা এসে বীজ চাচ্ছে। কৃষকদের যন্ত্রনায় আমরা অতিষ্ঠ।
পটুয়াখালী বিএডিসি কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আসাদুজ্জামান মুঠোফোনে বীজ সংঙ্কটের কথা স্বীকার করে বলেন, আমতলীতে ৫৮ টন বিভিন্ন জাতের আমনের বীজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
বরাদ্দকৃত বীজ ইতোমধ্যে সরবরাহ করেছি। সরবরাহকৃত বীজের মধ্যে ২৫.৫ মেট্রিকটন বীজ বিআর-২৩ জাতের। তিনি আরও বলেন, আমতলীতে ৯৫% কৃষকের বিআর-২৩ জাতের বীজের চাহিদা রয়েছে। তাই এত বীজ পাব কোথায়? উত্তরাঞ্চলে বন্যা চলছে। ওই অঞ্চলের জন্য বিএডিসি বীজ সংরক্ষণ করে রেখেছে। বন্যার উন্নতি হলে আগামী সপ্তাহে ওই বীজ দক্ষিণাঞ্চলে সরবরাহ করা হবে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: