ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

২০ বছর সংস্কারহীন সড়ক

প্রকাশিত: ২২:০৭, ২৯ জুন ২০২০

২০ বছর সংস্কারহীন সড়ক

নিজস্ব সংবাদাতা, মীরসরাই, চট্টগ্রাম, ২৮ জুন ॥ গাড়ি তো দূরের কথা কোন মানুষই এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে পারে না। সড়কের অবস্থা দেখে বুঝার উপায় নেই যে এটি কি সড়ক নাকি খাল। বড় বড় গর্ত দেখলে মনে হবে যেন এখানে কোন নির্মাণ কাজ চলছে। সড়কে যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে ২০ বছর আগে। হেঁটে চলাচল করতে গিলেও হাঁটু পরিমাণ কাদা মাড়িয়ে চলাচল করতে হয়। এই সড়কে শুকনো মৌসমে গড়িতে চড়লে মনে হবে আপনি ঝড়-ঝঞ্ঝা কবলিত বিশাল ঢেউয়ের মুখোমুখি হয়ে সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছেন। বলা হচ্ছিল প্রায় দুই দশক ধরে সংস্কারহীন মীরসরাইয়ের মুহুরী প্রজেক্ট থেকে মীরসরাই ইকোনমিক জোন পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলেমিটার টেকেরহাট সড়কের কথা। দীর্ঘদিন সড়কটির বেহাল দশা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই টেকেরহাট সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। ২০০০ সালে সড়কটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীনে এই সড়কটি সংস্কার করার পর আর কোন সংস্কার কাজ করা হয়নি। গর্ভবতী নারী ও রোগীদের রাত-বিরাতে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চরম অসুবিধার মুখোমুখি হতে হয়। দুর্ঘটনা এখানে নিত্য নৈমিত্যিক বিষয়। সামান্য বৃষ্টি হলেই হাঁটু সমান কাদা পানি জমে থাকে। নিয়মিত আটকা পড়ে গাড়ি। সড়কটি নিয়ে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় লোকজনদের করুণ অবস্থা। সব মিলিয়ে চরম ভোগান্তি আর বেহাল দশা এবং মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে টেকের হাটের ঐতিহ্যবাহী এ সড়কটি। এই এলাকার সন্তানসম্ভবা নারীরা যাদের পারিবারিক আর্থিক অবস্থা ভাল তারা প্রসবের ২ মাস আগে জোরারগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন জায়গায় বাসা ভাড়া নিয়ে চলে আসে। অনেকে তাদের নিকটাত্মীয়দের বড়িতে চলে যায়। সড়কটির বিষয়ে কর্তৃপক্ষ অবগত থাকা সত্ত্বেও কোন এক অদৃশ্য কারণে এর অগ্রগতি হচ্ছে না। স্থানীয়রা জানান, এই সড়কটি এক সময় যানবাহন চলাচলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ছিল। নিয়মিত গাড়ি চলাচল। টেকের হাট হয়ে প্রজেক্ট রোড দিয়ে জোরারগঞ্জ এবং বারইয়ারহাট পৌরসভা পর্যন্ত দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসে নিয়মিত যাতায়াত করত স্থানীয় লোকজন। ফলে এ রাস্তাটি ছিল হাজার হাজার মানুষের দৈনন্দিন চলাচল একমাত্র ভরসা। ইউপি সদস্য এমদাদ হোসেন বলেন, পুরো মীরসরাইয়ে সব ইউনিয়নের রাস্তাগুলো ভাল। শুধু আমার ওয়ার্ডের রাস্তার বেহাল দশা। এ দুর্ভোগের দিন কবে শেষ হবে তা জানি না। এ ব্যাপারে ইছাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল মোস্তফা জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে আমরা ভাঙ্গা ইট দিয়ে কোন রকম সংস্কার করে আসছি। এতে কিছুই হয় না। এটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে হওয়ায় এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাউবো কর্তৃপক্ষ দিতে পারবেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর অধীনে মুহুরী প্রজেক্ট থেকে ইকোনমিক জোন পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটর টেকেরহাট সড়কটির প্রাক্কলিত ব্যয় ২০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত এই সড়কটির নির্মাণ কাজের বরাদ্দ অনুমোদন হয়নি। এটি পাউবো কর্তৃপক্ষ জানে। পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া জানান, বেডিবাঁধের ২০ কিলোমিটার টেকেরহাট কাঁচা সড়কটি পাকাকরণের ব্যাপারে মীরসরাইয়ের এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ডিও লেটার দিয়েছেন। এ বছর অনুন্নয়ন খাতে মাত্র ২.৫ কিলোমিটার সড়কটির কার্পেটিং করার বাজেট অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে। শীঘ্রই এই কাজটি শুরু করা হবে। বাউফলে ৫শ’ কিমি সড়ক বেহাল নিজস্ব সংবাদদাতা বাউফল থেকে জানান, প্রায় ৫শ’ কিলোমিটার সড়ক খানাখন্দে ভরা। চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পরেছে। এসব সড়ক সংস্কার ও বা পুনর্নির্মাণ জরুরী হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, উপজেলার ১ পৌর সভাসহ ১৫টি ইউনিয়ন প্রধান ও আভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর মধ্যে প্রায় ৫শ’ কিলোমিটার সড়ক চলচলা অনুপযোগী হয়ে পরেছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এসব সড়ক দিয়ে চলাচল কষ্টকর হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, উপজেলার কাছিপাড়া টু কালিশুরি সড়ক, ধুলিয়া ব্রিজ টু মমিনপুর বাজার সড়ক, ভড়িপাশা খেয়াঘাট টু তালতলি সড়ক, গোলাবাড়ি , নুরাইনপুর টু কালিশুরী সড়ক, কালাইয়া, নওমালা টু হাজিরহাট সড়ক, বাংলবাজার টু বড়ডালিমা সড়ক, বিলবিলাস বাজার থেকে মধ্য মদনপুরা বাজার ভায়া সূর্যমনি ক্লাব সড়ক, কনকদিয়া সড়ক থেকে সরদার বাড়ি সরকারী প্রাইমারী স্কুল, চন্দ্রপাড়া টু মধ্যমদনপুরা মৃধার বাজার, কাগুজিপুল থেকে ইউপি কার্যালয় ভায়া বিলবিলাস বাজার, সোনামুদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মদনপুরা বোর্ড স্কুল সড়ক, কেশবপুর কলেজ থেকে মমিনপুর অভিমুখি সড়ক, ভড়িপাশা ব্রিজ থেকে কেশবপুর ইউনিয়ন পরিষদ সড়ক, কেশবপুর চৌমোহনী বাজারের দক্ষিণ পাশের ব্রিজ থেকে ধুলিয়া লঞ্চঘাট পর্যন্ত সড়ক, বগার নাজিরবাধ থেকে মৃত এ্যাড. ইউনুস মিয়ার বাড়ি লগোয়া সড়ক, কনকদিয়া বাজারের দক্ষিণ ও মধ্যস্থলে আভ্যন্তরীণ সড়ক খানাখন্দে ভরা। এসব সড়ক দিয়ে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়া অন্য সব ইউনিয়নে কম বেশি সড়ক চলাচলে অনুপযোগী হয়ে আছে।
×