ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাঁচ পশুর হাটের টেন্ডারে বিরাট দরপতন

প্রকাশিত: ২১:৪৯, ২৯ জুন ২০২০

পাঁচ পশুর হাটের টেন্ডারে বিরাট দরপতন

মশিউর রহমান খান ॥ করোনাভাইরাসের কারণে ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকা ও জনসমাগম বেশি এমন এলাকায় পশুর হাট না বসানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। সংস্থাটি নিজস্ব রাজস্ব আয়ের কথা চিন্তা না করে নাগরিকদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে ও নির্দিষ্ট কিছু আবাসিক এলাকায় পশুর হাট বসানো বন্ধ করতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। কোন কোন হাট থেকে সিটি কর্পোরেশন কয়েক কোটি টাকা পর্যন্ত রাজস্ব আয় হতো। পশুর হাট বসাবে কি না এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আজ সোমবার সভা ডেকেছে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। এদিকে আসন্ন ঈদ উল আযহায় কোরবানির পশুর হাটের ডিএনসিসি টেন্ডার আহ্বান করা মোট ১০ পশুর হাটের মধ্যে পাঁচটিরই ভয়াবহ দরপতন হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব হাটের সরকারী দরের চেয়ে কোন কোটির কমপক্ষে পাঁচ গুণ দর কম উঠেছে। দ্বিতীয় দফায়ও দর কম পাওয়ায় ইজারা চূড়ান্ত করেনি সংস্থাটি। এর আগে প্রথম দফায় চারটি হাটের ইজারা সম্পূর্ণ করেছে সংস্থাটি বাকি নতুন একটি হাটের চূড়ান্ত করার কাজও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে ইজারা সম্পন্ন হওয়া হাটের বেশিরভাগই মূল ঢাকা উত্তর সিটি তথা শহর এলাকার বাইরের বলে জানা গেছে। এদিকে প্রথম দফায় চারটি হাটের ইজারা সম্পূর্ণ হয়। এগুলো হলো, কাওলা-শিয়ালডাঙ্গা-সংলগ্ন খালি জায়গার ইজারামূল ধরা হয়েছে ১৭ লাখ ৬৪ হাজার ৯০০ টাকা। যার সর্বোচ্চ দর উঠেছে ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং (আফতাবনগর) ব্লক-ই, সেকশন-৩-এর খালি জায়গার মূল্য ধরা হয়েছে ১ কোটি ৮ লাখ ৩১ হাজার ৪৩২ টাকা। যার সর্বোচ্চ দর উঠেছে ১ কোটি ৯ লাখ টাকা। ভাষানটেক রাস্তার নির্মাণাধীন অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত অংশ এবং পাশের খালি জায়গার ইজারা মূল্য ধরা হয়েছে ৪২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। যার সর্বোচ্চ দর উঠেছে ৪৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরস্থিত বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গার ইজারামূল্য ধরা হয়েছে ২২ লাখ ৫৩ হাজার ৪৮৪ টাকা। যার সর্বোচ্চ দর উঠেছে ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ডিএনসিসি সূত্র জানায়, তেজগাঁও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট খেলার মাঠের এ হাটের জন্য মাত্র ১টি টেন্ডার জমা পড়েছে, সরকারী ইজারামূল্য ধরা হয়েছে ৪৯ লাখ ৫৭ হাজার ২৬৭ টাকা। এখানে দরপত্র দর দিয়েছে মাত্র ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। যা সরকারী দরের চেয়ে প্রায় ৪ গুণ কম। ভাটারা (সাঈদনগর) পশুর হাটের জন্য তিনটি টেন্ডার জমা পড়ে। যার সরকারী ইজারা মূল্য ধরা হয়েছে ১ কোটি ৭৪ লাখ ১ হাজার ৬৬৭ টাকা। অপরদিকে এ হাটটির সর্বোচ্চ দর পড়েছে ৭১ লাখ টাকা। যা সরকারী দরের চেয়ে প্রায় আড়াই শতাংশ কম। উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর ব্রিজের পশ্চিম অংশ এবং ২ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমে গোলচত্বর পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশের ফাঁকা জায়গার জন্য তিনটি টেন্ডার জমা পড়ে। হাটটির সরকারী মূল্য ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৮১ লাখ ৯৫ হাজার ৩৩৪ টাকা। এ হাটের সর্বোচ্চ দর উঠেছে ৬৬ লাখ টাকা। যা সরকারের দরের চেয়ে প্রায় ছয় গুণ কম। মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী সড়কসংলগ্ন (বসিলা) পুলিশ লাইনের খালি জায়গার হাটের সরকারী ইজারামূল্য ধরা হয়েছে ১ কোটি ৯৯ লাখ ৬৩ হাজার ৬৬৭ টাকা। সেখানে মাত্র একটি টেন্ডার জমা পড়েছে। জমা দেয়া দরপত্রে হাটের মূল্য দিয়েছে ৫৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এ যা সরকারী দরের চেয়ে প্রায় ৪ গুণ কম উঠেছে। মিরপুর সেকশন-৬, ওয়ার্ড- ৬ (ইস্টার্ন হাউজিং)-এর খালি জায়গার হাটের সরকারী ইজারামূল্য ধরা হয়েছে ১ কোটি ৪৮ লাখ ২০ হাজার ৩৪০ টাকা। যার দর উঠেছে ৪৯ লাখ ১৬ হাজার টাকা। সরকারী দরের চেয়ে যা প্রায় তিন গুণ কম উঠেছে। এদিকে সম্পূর্ণ নতুন হিসেবে ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বাচল ব্রিজসংলগ্ন মস্তুল ডুমনি বাজারমুখী রাস্তার উভয় পাশের খালি জায়গার হাটের দর উঠেছে ১৭ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। এই হাটটির সরকারী দর দেয়া হয়নি। তবে ডিএনসিসি এ হাটটির ইজারা প্রদানের জন্য ডিএনসিসি মেয়র চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোঃ মোজাম্মেল হক জনকণ্ঠকে বলেন, প্রথম দফায় সরকারী দর পাওয়ায় চারটি হাটের ইজারা সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও পূর্বাচল ব্রিজসংলগ্ন মস্তুল ডুমনি বাজারমুখী রাস্তার উভয় পাশের খালি জায়গার জন্য ডাকা একটি হাট চূড়ান্ত করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে দ্বিতীয় দফায় ৫টি হাটের কোনটিই সরকারী ইজারামূল্য পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। এসব হাটের বিপরীতে টেন্ডার জমা পড়েছে মোট ১০টি। এই ছয়টি হাটের এজন্য ইজারা দেয়া হয়নি। ডিএনসিসির কর্তৃক তৃতীয় পর্যায়ের দরপত্র খোলার তারিখ ৮ জুলাইয়ের পর সভার মাধ্যমে এসব হাটের ইজারার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ইজারা নিয়ে ডিএনসিসির মেয়রের সঙ্গে এ নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা করা হবে। মূলত রাজস্ব আয় ও জনস্বার্থ উভয় দিক চিন্তা করেই হাট ইজারা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমরা নাগরিকদের স্বার্থ সুরক্ষাকেই সবাধিক প্রাধান্য দেব। বর্তমানে ডিএনসিসির কিছু স্থানে কোরবানির পশুর হাট বসে। কোরবানির সময় ঘনিয়ে আসার সময়ই এসব এলাকায় বসবাসকারী নাগরিকদের নানা বিড়ম্বনায় পড়তে দেখা যায়। যা একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। অনেক নাগরিক আমাদের বিভিন্ন সময় অভিযোগ দেন। এছাড়া বর্তমানে করোনার ভাইরাসের প্রকোপ থাকায় স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা ভেবে ঘনবসতিপূর্ণ ও করোনা ভাইরাসের কারণে ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকা ও জনসমাগম বেশি এমন এলাকায় পশুর হাট না বসানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আমরা রাজস্ব আয়ের কথা চিন্তা না করে নাগরিকদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে ও নির্দিষ্ট আবাসিক এলাকায় পশুর হাট বসানো বন্ধ করতেই এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। মেয়র আতিক বলেন, উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের হাট থেকে আমরা গত বছর প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছিলাম। এছাড়া ঢাকা পলিটেকনিকেল কলেজ মাঠের হাটিও আবাসিক তথা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় হয়ে পড়েছে। তাই এগুলোসহ সব হাটের জন্য নাগরিক স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে সারাবছর যেহেতু পশু ব্যবসায়ী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা, এ সংশ্লিষ্ট লোকজন কোরবানির সময়ে পশু বিক্রি করে সারা বছরের আয়ের একমাত্র উৎস হিসেবে বিবেচনা করেন ও তাদের সংসার পরিচালনা করেন সে বিষয়টিও আমরা ভাবছি। তবে আবাসিক এলাকায় হাটের বিষয়ে আলোচনা স্বাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নিতে আজ সোমবার সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা আহ্বান করেছি। অতি দ্রুতই এ বিষয়ে জানানো হবে। নাগরিক দুর্দশা লাঘবই আমাদের মূল লক্ষ্য। এক্ষেত্রে সেটিকেই প্রাধান্য দেয়া হবে।
×