ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রে করোনা রোগী ২৫ লাখ ছাড়াল

প্রকাশিত: ২১:৪৫, ২৯ জুন ২০২০

যুক্তরাষ্ট্রে করোনা রোগী ২৫ লাখ ছাড়াল

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ যুক্তরাষ্ট্রে করোনা রোগী ২৫ লাখ ছাড়িয়েছে। মারাও গেছে এক লাখ ২৫ হাজারের বেশি মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী মেক্সিকোয় করোনা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। একদিনে সেখানে আরও ৬০২ জনের মৃত্যু হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতে সুস্থতার হার ৫৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ হলেও নতুন করে আরও ১৯ হাজারের বেশি মানুষ শনাক্ত হয়ে রেকর্ড করেছে। আর মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদিতে নতুন করে তিন হাজার ৯২৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। একদিনে মারা গেছেন ৩৭ জন। এছাড়া ইতালির শিশুরা স্কুলে ফিরছে। খবর বিবিসি, সিএনএন, এনডিটিভি, এসপিএ, সৌদি গেজেট, গার্ডিয়ান, রয়টার্স ও ওয়ার্ল্ডোমিটার ডন ইনফোর। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাত্ত অনুযায়ী রবিবার পর্যন্ত করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল এক কোটি এক হাজার ৫২৭ জন। মোট মৃত্যুর সংখ্যা পাঁচ লাখ এক হাজার ১২৪ জন। আর ওয়ার্ল্ডোমিটার ডট ইনফোর মতে, বিশ্বে আক্রান্ত হয়েছেন এক কোটি এক লাখ ৭৫ হাজার ২২৫ জন। মারা গেছেন পাঁচ লাখ দুই হাজার ৯৫৫ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৫৫ লাখ ১১ হাজার ৫৯০ জন। একদিনে আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৭৬ হাজার ৫৬৮ জন। একদিনে মারা গেছেন চার হাজার ৫৪৭ জন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর সাত মাসের মাথায় বিশ্বে এ ভাইরাসে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে গেল। চীনের উহান থেকে পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যাও পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতিবছর বিশ্বে যত লোক মারাত্মক ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়, সাত মাসে তার প্রায় দ্বিগুণ মানুষকে সংক্রমিত করেছে নোভেল করোনাভাইরাস। আর করোনাভাইরাসে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে তা এক বছরে ইনফ্লুয়েঞ্জায় মৃত্যুর প্রায় সমান। এমন এক সময় এই দুঃখজনক মাইলস্টোনে বিশ্ব পৌঁছালো, যখন মহামারীতে পর্যুদস্ত অনেক দেশ লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করে অর্থনীতি সচল করার চেষ্টায় আছে। জীবন ও জীবিকার প্রশ্নে ভারসাম্য আনতে গিয়ে কর্মক্ষেত্র আর সামাজিক জীবনযাপনে আনতে হচ্ছে নানা ধরনের পরিবর্তন, যা চালিয়ে যেতে হতে পারে করোনাভাইরাসের টিকা না পাওয়া পর্যন্ত। অর্থনীতি সচল করার চেষ্টার মধ্যে অনেক দেশে সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করায় ফের আংশিক লকডাউনের পথে যেতে হচ্ছে অনেক সরকারকে; আগামী দিনগুলোতেও বারবার এই ধারা ফিরে আসবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। বিভিন্ন দেশের প্রকাশ করা সরকারী তথ্যের হিসেবে বলা হয়, বিশ্বে যত রোগী শনাক্ত হয়েছে, তার ২৫ শতাংশ করে হয়েছে উত্তর, দক্ষিণ আমেরিকা ও ইউরোপে। এছাড়া ১১ শতাংশ রোগী এশিয়ার এবং ৯ শতাংশ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর। গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে নতুন ধরনের এই করোনা সংক্রমণ মানবদেহে ধরা পড়ে; খুব দ্রুত বাড়তে থাকে আক্রান্তের সংখ্যা। পরে ভাইরাসের নাম দেয়া হয় নোভেল করোনাভাইরাস। ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগের নাম দেয়া হয় কোভিড-১৯। চীনে প্রথম মৃত্যুর দুদিন পর ১৩ জানুয়ারি থাইল্যান্ডে প্রথম রোগী ধরা পড়ার পর জানা যায়, চীনের রাষ্ট্রীয় সীমানা পেরিয়ে গেছে এই ভাইরাস। তারপর হু হু করে বাড়তে থাকে আক্রান্তের সংখ্যা, দেড় মাসের মধ্যে এ্যান্টার্কটিকা বাদে সব মহাদেশেই ধরা পড়ে রোগী। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা তখন এই পরিস্থিতিকে মহামারী আখ্যায়িত করে। কঠোর লকডাউনে চীন তিন মাসের মধ্যে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও ততদিনে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও পরে রাশিয়ায় ব্যাপক মাত্রা পায় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার পর চার মাসের মাথায় ১ এপ্রিল বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়ায়। এর পরের সাত সপ্তাহে আরও ৪০ লাখ মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় ২১ মে আক্রান্তের সংখ্যা অর্ধ কোটি ছাড়িয়ে যায়। এরপর পাঁচ সপ্তাহের মাথায় সেই সংখ্যা কোটিতে পৌঁছে গেল। এখন এ ভাইরাসের বিস্তারের নতুন উপকেন্দ্র হয়ে উঠেছে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো। বিশেষ করে ব্রাজিল ও দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ ভারত। গত এক সপ্তাহে বিশ্বে যত নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে তার এক তৃতীয়াংশই এ দুটো দেশের। ১৯ জুন ব্রাজিলে রেকর্ড ৫৪ হাজার সাত শ’ নতুন রোগী শনাক্ত হয়। ভারতে ২৭ জুন ১৯ হাজার নয় শ’ রোগী শনাক্তের সংখ্যাটি ছিল সেখানে একদিনের সর্বোচ্চ। লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে করোনায় মোট মৃত্যু ইতোমধ্যে এক লাখ ছাড়িয়েছে। আগামী অক্টোবরের মধ্যে তা বেড়ে তিন লাখ ৮০ হাজার হতে পারে বলে পূর্বাভাস এসেছে এক গবেষণনায়। যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত রোগী ২৫ লাখ ॥ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর সংখ্যা এক লাখ ২৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী দেশটিতে প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এখন ২৫ লাখ ১০ হাজারেরও বেশি। এরমধ্যে শনিবারই ফ্লোরিডা ও টেক্সাসে একদিনে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়েছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলীয় বেশ কয়েকটি রাজ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালুর অনুমতি দেয়ার পর থেকেই সেসব রাজ্যে সংক্রমণের উর্ধগতি দেখা যাচ্ছে। ভারতে সুস্থতার হার প্রায় ৫৯ শতাংশ ॥ জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর দেশ হিসেবে ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টানা পঞ্চমদিনের মতো ১৫ হাজারের অধিক শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের সংখ্যা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৯০৬ জনে। বর্তমানে সুস্থতার হার ৫৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ। সর্বশেষ শনাক্তের তথ্য যোগ করে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো পাঁচ লাখ ২৮ হাজারেরও বেশি। মেক্সিকোয় নিয়ন্ত্রণহীন করোনা ॥ মহামারীর নিয়ন্ত্রণ হারাতে বসেছে মেক্সিকো। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে লাতিন আমেরিকার দেশটিতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে, সেই সঙ্গে বাড়ছে প্রাণহানির সংখ্যাও। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরও ৬০২ জন। মেক্সিকোর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে ৪ হাজার ৪১০ জনের শরীরে ধরা পড়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। সৌদিতে আরও ৩৭ মৃত্যু ॥ সৌদি আরবে একদিনে ৩ হাজার ৯২৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৭৮ হাজার ৫০৪। আর মৃত্যু হয়েছে আরও ৩৭ জনের। এ নিয়ে মোট এক হাজার ৫১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সুস্থ হয়ে উঠেছেন মোট এক লাখ ২২ হাজার ১২৮ জন। সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন ৫৪ হাজার ৮৬৫ জন। স্কুলে ফিরছে ইতালির শিশুরা ॥ সেপ্টেম্বরেই স্কুলে ফিরতে পারবে ইতালির শিক্ষার্থীরা। দেশটিতে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে সব স্কুল পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই সেখানকার সব স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। স্কুল খুলে দেয়া হলেও সামাজিক দূরত্ব অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
×