ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মৌসুম বয়ে যায়

রসসিক্ত উর্বর মাটি, বৃক্ষরোপণের এখনই সময়

প্রকাশিত: ২১:১৮, ২৯ জুন ২০২০

রসসিক্ত উর্বর মাটি, বৃক্ষরোপণের এখনই সময়

মোরসালিন মিজান ॥ গাছ লাগান। অহ্বানটা সব সময়ের। আর এ আহ্বানে সাড়া দেয়ার উপযুক্ত সময়ের কথা যদি বলা হয়, তবে তা এখন- এই বর্ষায়। অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় এ সময় বেশি বৃক্ষরোপণ করা হয়। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। করোনায় গিলে খাচ্ছে সব। এর পরও গাছ লাগানোয় তেমন বাধা নেই। বর্ষা শুরু হতে না হতেই বৃক্ষপ্রেমীরা কাজে নেমে পড়েছেন। শহুরে মানুষও বসে নেই। শখের ছাদবাগান পরিচর্যা করছেন তারা। ব্যক্তি ও সমষ্টির উদ্যোগে চলছে নানা কর্মসূচী। সরকারের পক্ষ থেকেও এ সংক্রান্ত নির্দেশনা রয়েছে। উৎসাহিত করা হচ্ছে বৃক্ষরোপণে। বর্ষা মানেই বৃষ্টি। নিয়মিত বর্ষণে ধরণী সিক্ত হয়। আর এবার তো আষাঢ়ের শুরুতেই বৃষ্টি। টানা বর্ষণ। ফলে আগেভাগেই অতি প্রয়োজনীয় রস গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে মাটি। উর্বর মাটিতে কোনরকমে চারা পুঁতে দিলেই হলো। শিকড় ছড়িয়ে পড়ছে। সোজা হয়ে উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে চারা। গায়েগতরে দ্রুত বাড়ছে। বীজও খুব সহজলভ্য এখন। কয়েকদিন আগে মধুমাস জৈষ্ঠ বিদায় নিয়েছে। মাস বিদায় নিলেও মধুমাসের প্রায় সব ফল পাওয়া যাচ্ছে। পাকা আম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস, জাম-জামরুল আরও কত কী! সুমিষ্ট ফলের স্বাদ নেয়ার পাশাপাশি পাওয়া যাচ্ছে বীজ। আম খেয়ে আঁটিটি কোথাও ছুড়ে ফেললেও মাটি তা যতেœ গ্রহণ করছে। অযতেœ পড়ে থাকা আঁটি থেকে গজাচ্ছে চারা। কাঁঠালের বীচি তো মাটিতে পড়ার আগেই চারা দিচ্ছে। এমনকি আনারসের উপরিভাগ পাতাসুদ্ধ ফেলে দিলে সেখান থেকে জন্ম নিচ্ছে নতুন প্রাণ। এসবের বাইরে একটু পরিকল্পনা নিয়ে গাছ লাগানো গেলে তো কথাই নেই। সবুজে ভরে উঠবে চারপাশ। বর্ষায় তাই যেখানে খুশি, যত খুশি গাছের চারা রোপণ করার পরামর্শ দেন উদ্ভিদবিদরা। ফলের জন্য, ফুলের জন্য, কাঠের জন্য গাছ লাগানো চাই। অক্সিজেনের কথা তো বলাই বাহুল্য। এভাবে সব বিবেচনায় আদি অকৃত্রিম বন্ধুটির নাম বৃক্ষ। যাদের সবুজের প্রতি প্রেম, গাছের উপকারিতা যারা জানেন তারা তাই বৃক্ষরোপণে ব্যস্ত। সাধারণত জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে বৃক্ষরোপণ শুরু হয়। একে আনুষ্ঠানিক শুরু বলা যেতে পারে। প্রতিবছর এ সময় জাতীয়ভাবে বৃক্ষমেলার আয়োজন করা হয়। ঢাকায় আয়োজিত বিশাল মেলা থেকে পছন্দমতো চারা সংগ্রহ করেন বৃক্ষপ্রেমীরা। এবার মেলা আয়োজন সম্ভব হয়নি। তবে মৌসুমের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের হাতে চারা লাগিয়ে সবাইকে বৃক্ষরোপণের আহ্বান জানিয়েছেন। নিসর্গবিদরা বলছেন, বাড়ির চারপাশে, পুকুরপাড়ে, রাস্তার ধারে জায়গা খুঁজে নিয়ে বৃক্ষরোপণ করুন। শহরে, বিশেষ করে রাজধানী শহর ঢাকায় জায়গা কম। তাতে কী? বাড়ির ছাদে, বারান্দায়, টবে গাছ লাগান। ফুল নয় শুধু, ফলসহ বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগানোর পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। বলছেন, ছাদেই হতে পারে আম, আঙ্গুর, ডালিম, জাম্বুরা, মালটা, করমচা, জামরুল, লিচু, আমলকী। চাইলে কাঁচামরিচও করতে পারেন। বৃক্ষরোপণের জন্য জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেছেন কেএম সবুজ। তিনি বলেন, গাছ সারা বছরই লাগানো যায়। তবে বর্ষা সেরা সময়। আষাঢ়-শ্রাবণে প্রচুর বৃষ্টি হয়। এ সময় গাছ লাগালে সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। আমি মৌসুম শুরুর পর আলাদা করে প্রায় ৫০০ গাছ লাগিয়েছি। সামনের দিনগুলোতে কয়েক হাজার গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। গাছকে ভালবাসার বস্তু হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গাছের কাছে গেলে, স্পর্শ করলে ভালবাসাটা অনুভূত হয়। গৃহবন্দী সময়ে বৃক্ষপ্রেম বেড়েছে বলেই মনে করেন তিনি। একই কারণে বৃক্ষরোপণের মৌসুম উপলক্ষে প্রচুর চারা উৎপাদন করছে ঢাকার নার্সারিগুলো। আগারগাঁও ও হাইকোর্ট এলাকার কয়েকটি নার্সারি ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব ধরনের চারা মজুদ আছে। মেট্রোরেলের কাজ চলায় দোকানিরা কিছুটা সমস্যায় আছেন। তবে চারার কমতি নেই। বিক্রিও ভাল বলে জানা গেল। মাসুদ নামের এক দোকানি বলছিলেন, আমাদের গত কয়েক মাস খুব খারাপ গেছে। দোকান করতে পারিনি। আজ রাস্তার এপারে, কাল ওই পারে বসেছি। কিন্তু এখন যেখানেই বসি বিক্রি অনেক ভাল। অন্যান্য সময় নানা জাতের ফুল আর পাতাবাহার বেশি বিক্রি হয়। এখন ফলদ বৃক্ষের চারাও ভাল বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি। আগারগাঁওয়ের একটি নার্সারির সামনে কথা হচ্ছিল শফিকুল ইসলাম নামের এক চারা সংগ্রাহকের সঙ্গে। তিনি বলেন, গাছের সঙ্গে থাকা আমার অনেকদিনের পুরনো অভ্যাস। গ্রামের বাড়িতে প্রচুর গাছ লাগিয়েছি। ঢাকার বাসায়ও গাছ আছে। বর্ষা মৌসুমে ভাল চারা পাওয়া যায়। পরিচিত দোকানির সঙ্গে ফোনে কথা বলে চারা সংগ্রহ করতে এসেছেন বলে জানান তিনি। সব মিলিয়ে বৃক্ষপ্রেমীদের উৎসবটা মোটামুটি জমে উঠেছে। শ্রাবণ ও ভাদ্র মাস পর্যন্ত উৎসব একই চেহারায় থাকবে বলেই আশা।
×