ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় কৃষিঋণ বিতরণ অর্ধেক

প্রকাশিত: ২০:৫৪, ২৯ জুন ২০২০

করোনায় কৃষিঋণ বিতরণ অর্ধেক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রাণঘাতী করোনার প্রভাব সরাসরি পড়েছে কৃষিঋণে। যার কারণে এ খাতে ঋণ বিতরণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লকডাউন ঘোষণার পর বন্ধ হয়ে যায় বেশিরভাগ ব্যাংকের শাখা। কিছু খোলা থাকলেও শুধু লেনদেন চলে সীমিত আকারে। এতে কৃষক ঋণ আবেদনই করতে পারেনি। আবার ব্যাংকগুলো আগ্রহ করে তেমন কোন উদ্যোগও নেয়নি। যার কারণে কৃষিঋণ বিতরণ হয়নি। এখন করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জন্য সরকার ঋণ প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। সাধারণ ঋণের পাশাপাশি প্রণোদনার ঋণকেও বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কৃষিকে চাঙ্গা করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। জানা গেছে, করোনার বিস্তার রোধে সাধারণ ছুটির পুরোটা সময় সচল ছিল কৃষিখাত। সরকারের পক্ষ থেকে সঙ্কটের সময় কৃষিখাতকে সর্বাত্মকভাবে এগিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। কৃষিতে উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। কৃষিখাতে স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণ বৃদ্ধির জন্য আগামী ১ বছর সুদভর্তুকি দেবে সরকার। কৃষকরা ১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন। আর ৫ শতাংশ সুদ ভর্তুকি হিসেবে ব্যাংকগুলোকে পরিশোধ করবে সরকার। এছাড়া কৃষিঋণের অন্তত ৬০ শতাংশ শস্য খাতে দিতে হবে। কিন্তু সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী কৃষকদের সেবা দিতে এগিয়ে আসেনি ব্যাংকগুলো। সীমিত আকারে ব্যাংক খোলা ছিল শুধু শহরাঞ্চলে। উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ের সব শাখা বন্ধ ছিল। নতুন ফসল আবাদে ঋণের জন্য আবেদনই করতে পারেননি কৃষক। ফলে মহমারীর সময় ঋণও পাচ্ছে না তারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের মার্চে কৃষিখাতে তিন হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা ঋণ দেয় ব্যাংকগুলো, যা আগের বছরের মার্চের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। গত বছরের এই মাসে ছয় হাজার ২২২ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়। পরের মাস এপ্রিলে কৃষিঋণ বিতরণে ধস নামে। এপ্রিলে মাত্র ৪৯৬ কোটি টাকা ঋণ দেয় ব্যাংকগুলো। আগের বছর একই সময় ঋণ দেয় দুই হাজার ২৬১ কোটি টাকা। এপ্রিলে ঋণ বিতরণ কমে প্রায় ৭৯ শতাংশ। এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে ঋণ বিতরণ বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ১৩২ কোটি টাকা। তবে তা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ঋণ বিতরণ কমেছে ৩৭ শতাংশ। আগের বছরে মে মাসে ব্যাংকগুলো কৃষি খাতে এক হাজার ৮১০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে। সব মিলে লকডাউনের তিনমাসে কৃষিখাতে ব্যাংকগুলো পাঁচ হাজার ৮৬ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। যা আগের বছরের একই সময়ে চেয়ে ৫০ দশমিক ৫৮ শতাংশ কম। আগের বছরের এ তিনমাসে ঋণ দেয় ১০ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে কৃষিখাতে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২৪ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। কিন্তু ১১ মাসে (জুলাই-মে) পর্যন্ত বিতরণ করেছে ১৮ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে এক মাসে পাঁচ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করতে হবে। এছাড়া আগের বছরের আলোচ্য ১১ মাসে ব্যাংকগুলো কৃষিখাতে ঋণ দেয় ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এ হিসেবে ঋণ বিতরণ কমেছে প্রায় ৯ শতাংশ। এদিকে লকডাউনে শাখা বন্ধ থাকায় কৃষি ঋণের আদায়ও অনেক কমেছে। এপ্রিলে আদায় হয়েছে মাত্র ৭৬৭ কোটি টাকা। আগের বছরে এ মাসে আদায় হয় এক হাজার ৯১৬ কোটি টাকা। মে মাসে আদায় আরও কমে মাত্র ৫৬১ কোটি টাকায় নেমে আসে। আগের বছরের মে মাসে আদায় হয় এক হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। এগারো মাসে আদায় ২০ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা থেকে কমে ১৮ হাজার ২৭১ কোটি টাকা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে আদায় কার্যক্রম কমেছে সাড়ে ১১ শতাংশ। তবে এপ্রিল ও মে মাসে আদায় অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কৃষিখাতে ঋণ বিতরণ ও আদায় কার্যক্রম স্বাভাবিক ধারায় ছিল। জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি এ ৯ মাসে কৃষিখাতে ঋণ বিতরণ হয় ১৫ হাজার ৯২ কোটি। আগেরবছর ছিল ১৪ হাজার ১১৩ কোটি টাকা। কৃষিঋণ বৃদ্ধি পায় ৭ শতাংশ। অন্যদিকে আদায়ের পরিমাণ ১৫ হাজার ৩২১ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয় ১৫ হাজার ৫০৮ কোটি।
×