ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেটে জলবায়ু অর্থায়নে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি

প্রকাশিত: ২০:১৪, ২৮ জুন ২০২০

বাজেটে জলবায়ু অর্থায়নে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি অর্থবছরের মোট বরাদ্দের তুলনায় জলবায়ু খাতে প্রস্তাবিত মোট বরাদ্দ কিছুটা বাড়লেও আনুপাতিক হারে এ বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। চলতি অর্থবছরের তুলনায় মোট বরাদ্দ ১ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং জলবায়ু সংশ্লিষ্ট বরাদ্দ শুণ্য দশমিক ২৯ শতাংশ কমেছে। এ খাতে বরাদ্দ আরো বাড়াতে হবে। পাশাপাশি জলবায়ু অর্থায়নে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও কার্যকারিতা বাড়াতে অবিলম্বে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইন, ২০১০ পরিবর্তন করে জলবায়ু কমিশন গঠনের উদ্যোগসহ পাঁচ দাবি করে নেটওয়ার্ক অন ক্লাইমেট চেঞ্জ ইন বাংলাদেশ (এনসিসি’বি)। রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে নেটওয়ার্ক অন ক্লাইমেট চেঞ্জ ইন বাংলাদেশ (এনসিসি’বি) এর উদ্যোগে “জলবায়ু বাজেট ২০২০-২১-আকাক্সক্ষা: স¦চ্ছতা ও ন্যায্যতা” শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য তুলে ধরা হয়। মূলত আগামী অর্থবছরের বাজেটে জলবায়ু অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পরিত্রাণ এবং জলবায়ু অভিঘাত মোকাবেলায় যথাযথ বরাদ্দের দাবিতে নাগরিক সমাজের আকাক্সক্ষা তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এনসিসিবির কর্মী সরকার আল ইমরানের উপস্থাপনায় সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন উন্নয়ন ধারার ট্রাষ্টের সদস্য সচিব আমিনুর রসূল বাবুল। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিআরাইউর সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ এবং কালেরকন্ঠের সিনিয়র সাংবাদিক নিখীল চন্দ্র ভদ্র। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য পাঠ করেন “এনসিসি’বি”র রিসার্চ এন্ড অ্যাডভোকেসি অফিসার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। লিখিত বক্তব্যে মাহবুবুর রহমান বলেন, এ বছর ২৫টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের মোট বরাদ্দ জাতীয় বাজেটের ৫৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ (৩ লাখ ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা), যার মধ্যে ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ (২৪ হাজার ২২৫ কোটি ৭ লাখ টাকা) জলবায়ু অর্থায়ন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গত অর্থবছরে মোট বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৫৮ দশমিক ১১ শতাংশ (৩ লাখ ৪ হাজার ৩৮ কোটি ২২ লাখ টাকা) এবং জলবায়ু সংশ্লিষ্ট বরাদ্দ ছিল ৭ দমমিক ৮১ শতাংশ (২৩ হাজার ৭৪৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা)। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় এ বছর মোট বরাদ্দ ১৭ হাজার ৯৪৬ কোটি ৮ লাখ টাকা এবং জলবায়ু সংশ্লিষ্ট বরাদ্দ ৪৭৭ কোটি ২ লাখ টাকা। অর্থাৎ কিছুটা বরাদ্দ বাড়লেও আনুপাতিক হারে এ বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের তুলনায় মোট বরাদ্দ ১ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং জলবায়ু সংশ্লিষ্ট বরাদ্দ শুণ্য দশমিক ২৯ শতাংশ কমেছে। মাহবুবুর রহমান বলেন, এ বাজেট বরাদ্দের উল্লেখযোগ্য অংশ যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে আবার অব্যয়িত থেকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এবারের জলবায়ু সংশ্লিষ্ট বাজেট বরাদ্দে খাদ্য নিরাপত্তা, প্রাকৃতিক দূর্যোগ, কৃষি, বন ও পরিবেশের উপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়নি। তদুপরি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলোর মধ্যে বাজেট বরাদ্দ ভারসাম্যপূর্ণ নয়। আবার জলবায়ূ ট্রাষ্ট ফান্ডের অর্থ বরাদ্দ অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে বেশি দেয়া হয় কিন্তু দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণ, প্রশমন ও অভিযোজন এবং গবেষণা ও জ্ঞানের সমন্বয় ইত্যাদি খাতে বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তিনি বলেন, বরাদ্দের ক্ষেত্রে অনেক সময় স্থানীয় ঝুঁকি ও দুর্যোগের মাত্রা বিবেচনা না করে অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প বরাদ্দ দেয়া হয়। ফলে জলবায়ু অর্থায়নে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। তিনি তার বক্তব্যে জলবায়ূ অভিঘাতপূর্ণ ও দারিদ্র পীড়িত অঞ্চলের ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে বাজেট বরাদ্দের দাবী করেন। রফিকুল ইসলাম আজাদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এখন কোন তত্ত্বগত বিষয়ে সীমাবদ্ধ নেই, এটি এখন একটি বাস্তবতা। আমাদেরকে আ¤পান, সিডরের মতন প্রাকৃতিক দূর্যোগকে মেকাবেলা করতে হচ্ছে। ফলে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে জাতীয় বাজেটে মোট জিডিপি’র ১% বরাদ্দ করা এখন সময়ের দাবি। নিখিল চন্দ্র ভদ্র বলেন, বাজেট নিয়ে সারাদেশের মানুষেরই প্রত্যাশা তৈরি হয় এবং এবারও তাই হয়েছে। এনসিসি’বি জলবায়ু বাজেট নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষনমূলক এবং সময় উপযোগী বক্তব্য হাজির করেছেন। আমরা নাগরিক সমাজের পক্ষে তাদের এই পাচঁ দফা দাবীর বাস্তবায়ন চাই। সভাপতির বক্তব্যে জনাব আমিনুর রসূল বাবুল বলেন, সরকার ডেল্টা প্ল্যানের মতো একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেবার পরেও সেটিকে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে পারছেনা। নেটওয়ার্ক অন ক্লাইমেট চেঞ্জ ইন বাংলাদেশ (এনসিসি’বি) নিচের ৫ টি সুপারিশ ও দাবি জানিয়েছে। এগুলো হচ্ছে- প্রতিবছর জিডিপি’র কমপক্ষে এক শতাংশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বরাদ্দ, জলবায়ু বাজেটের পরিচালনা ব্যয় কমিয়ে উন্নয়ন খাতে প্রতিবছর কমপক্ষে ১০ শতাংশ ব্যয় বাড়ানো, জলবায়ু অর্থায়নকে একটি তহবিল থেকে পরিচালনার লক্ষ্যে এবং জলবায়ু অর্থায়নে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও কার্যকারিতা বাড়াতে অবিলম্বে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইন, ২০১০ পরিবর্তন করে জলবায়ু কমিশন গঠনের উদ্যোগ, জলবায়ু অর্থায়নে অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহে প্রয়োজনে বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, দূষণকারী যানবাহন, বিমান ভ্রমন ও বিমানে মালামাল পরিবহণের ওপর ‘গ্রিন ট্যাক্স’ ধার্য্য করা, বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি অবিলম্বে চালু করতে হবে।
×