ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

৪৫ হাজার সেনা, জঙ্গীবিমান ও মিসাইল সিস্টেম মজুদ দিল্লীর, শ’ শ’ ড্রোন ও বোমারুবিমান পাঠিয়েছে বেজিং

লাদাখজুড়ে রণসজ্জা

প্রকাশিত: ১৯:২০, ২৯ জুন ২০২০

লাদাখজুড়ে রণসজ্জা

লাদাখ নিয়ে ইন্দো-চীন উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। সীমান্তে লাল ফৌজের তৎপরতা বহুগুণ বেড়েছে। ওই অঞ্চলের আকাশে শ’ শ’ চীনা ড্রোন উড়ছে। লাদাখে অত্যাধুনিক বোমারুবিমান বসিয়েছে চীন। ভারতীয় শিবিরও বসে নেই। সীমান্তে অত্যাধুনিক মিসাইল সিস্টেম, জঙ্গীবিমান, ট্যাঙ্ক ও কামান মজুদ করেছে। দিল্লী লাদাখে অন্তত ৪৫ হাজার সেনা পাঠিয়েছে। দেশটির এক সূত্র বলছে, দু’পক্ষই বিপুল পরিমাণ সেনা মোতায়েন করেছে। একে অপরের ওপর কড়া নজর রাখছে। লাদাখের আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে ওড়া চীনা ড্রোন ভারতীয় বাহিনীর গতিবিধির ওপর নজর রাখছে। কখনও কখনও এসব ড্রোন সীমান্ত পেরিয়ে পূর্ব লাদাখের ভারতীয় অংশে ঢুকে যাচ্ছে। খবরে বলা হয়েছে, কয়েক সপ্তাহে ভারতের অন্তত চারটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকার ওপর উড়েছে এই ড্রোন। ড্রোন নজরদারিতে পিছিয়ে নেই ভারতও। লাইন অব এ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) বরাবর তারাও নজরদারি শুরু করেছে। ইসরাইলের তৈরি বিশেষ ড্রোন ‘হেরন’ মোতায়েন করেছে। প্রায় দেড় মাসের বেশি সময় ধরে চলছে ভারত-চীন সংঘাত। এখনও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় এলওসিজুড়ে ক্রমশ উদ্বেগ বাড়ছে। ভারত জানিয়েছে, এবার চীনের যে কোন পদক্ষেপের সমুচিত জবাব দেয়া হবে। খবর পিটিআই, আনন্দবাজার ও জিনিউজের। সীমান্তের বিতর্কিত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর কালো তাঁবু টানিয়ে আরও সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি করেছে চীন। গত দুদিনে সীমান্তের ৯ কিলোমিটার এলাকায় চীনা সেনাবাহিনীর অন্তত ১৬টি শিবির স্থাপনের দৃশ্য ধরা পড়েছে স্যাটেলাইট চিত্রে। দুদিন আগে এক বৈঠকে উভয় দেশই বিতর্কিত ওই সীমান্ত থেকে ে সৈন্য সরিয়ে নিতে রাজি হলেও উল্টো পথে হেঁটেছে চীন। সৈন্য সরানোর পরিবর্তে ঘাঁটির পাশাপাশি সামরিক সরঞ্জামও বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি দিল্লীর সমর বিশ্লেষকদের। প্লানেট ল্যাবের কাছ থেকে সংগৃহীত স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলেছে, চীন ওই এলাকা থেকে এখনও সরে যায়নি এবং সেখানে ব্যাপক সামরিক শক্তি বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে, যা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারতীয় সামরিক বাহিনীর জন্য একটি প্রত্যক্ষ হুমকি। ২২ জুন লাদাখে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে উভয় দেশ উত্তেজনা প্রশমনে সীমান্ত থেকে অতিরিক্ত সৈন্য প্রত্যাহারে সম্মত হয়। গত ১৫ জুন এই এলাকায় দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষে ভারতের এক কর্নেল পদমর্যাদার কর্মকর্তাসহ অন্তত ২০ ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়। স্যাটেলাইট চিত্রে আরও দেখা গেছে, ১৬টি সামরিক শিবিরের পাশাপাশি ওই এলাকায় শ’ শ’ ট্রাক, বুলডোজার ও অন্যান্য ভারি যানবাহন নিয়ে এসেছে চীন। এসব যানবাহন ও ভারি নির্মাণ সরঞ্জামের মধ্যে দ্রতগতিতে সেতু ও সড়ক নির্মাণের যন্ত্রপাতিও রয়েছে। চীনে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত বিক্রম মিশ্র বলেন, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে তা আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার একমাত্র উপায় সেখানে চীনের নতুন নির্মাণ বন্ধ করা। গালওয়ান উপত্যকায় চীনের সার্বভৌমত্বের দাবি একেবারে অযৌক্তিক। এর মাধ্যমে কেবল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি এবং তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। গালওয়ানে ভারত ও চীনের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে সৈন্য নিহতের ঘটনা ১৯৭৫ সালের পর সম্ভবত প্রথম। ভারতের দিকে একজন কর্নেল পদমর্যাদার কর্মকর্তাসহ অন্তত ২০ সেনা নিহত ও বহু সেনা আহত হয়। বেজিং অভিযোগ করে, সীমান্ত অতিক্রম করে চীনা বাহিনীর সদস্যদের ওপর আক্রমণ চালায় ভারত। ভারতীয় সেনা সূত্র জানায়, গালওয়ান ভ্যালিতে যখন ‘ডি-এসক্যালেশন’ বা উত্তেজনা প্রশমনের প্রক্রিয়া চলছিল তখনই দু’পক্ষের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
×