ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চকরিয়ায় সওজ কর্মচারীকে হুমকি

উন্নয়ন কাজে অনিয়ম

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ২৮ জুন ২০২০

উন্নয়ন কাজে অনিয়ম

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন ৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে চলতি অর্থবছরে চকরিয়ার বরইতলী শান্তিবাজার থেকে কৈয়ারবিল হয়ে লক্ষ্যারচর- কাকারা- সুরাজপুর মানিকপুর থেকে লামার ইয়াংছা পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণকাজে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের দেখভালে নিয়োজিত সড়ক বিভাগের লোকজন খোদ এই অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন। সম্প্রতি উন্নয়ন কাজে কার্যাদেশ লঙ্ঘনের ঘটনায় বাধা দিতে গেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রকল্প ব্যবস্থাপক হত্যার হুমকি দিয়েছে সড়ক বিভাগের এক কর্মচারীকে। এ ঘটনায় সড়ক বিভাগের চকরিয়া উপ-বিভাগের অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে চরম ক্ষোভের পাশাপাশি উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চলতি অর্থবছর কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন ৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ১৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজটি পেয়েছেন আরএবি আরসি প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কার্যাদেশ প্রাপ্তির পর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নির্মাণ কাজ শুরু করে ওই প্রতিষ্ঠানটি। শুরুতে ভালমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নয়নকাজের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা দেখালেও সম্প্রতি করোনায় লকডাউনের সুযোগে কয়েকমাস ধরে উন্নয়নকাজে ব্যাপক অনিয়মের আশ্রয় নিতে শুরু করে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রকল্প ব্যবস্থাপক আবীর চৌধুরী প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা এবং সড়ক বিভাগের বেশ ক’জন সিনিয়র কর্মকর্তার সঙ্গে আঁতাত করে নির্মাণ কাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করছেন। এ অবস্থায় সড়কের কিছু অংশে সমাপ্ত হওয়া কাজ বুঝিয়ে দেয়ার আগেই গাইড ওয়াল ভেঙ্গে একাকার হয়ে পড়েছে। এসব ঘটনায় নির্মাণ কাজে স্থানীয়ভাবে দেখভালে নিয়োজিত সড়ক বিভাগের ছোট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিবাদ করলেও তিনি কোন ধরনের তোয়াক্কা করছেন না। সওজ কর্মচারীরা বলেন, নির্মাণাধীন সড়কের গাইড ওয়াল নির্মাণকাজে সিডিউল অনুযায়ী কাজ না করে অনিয়মের মাধ্যমে নিম্নমানের ইট-বালি ব্যবহার করায় কাজে তদারকিতে নিয়োজিত সওজের কর্মচারী দীন মোহাম্মদ বাধা দেন। তিনি বিষয়টি সওজের চকরিয়াস্থ উপ-সহকারী প্রকৌশলীকেও জানান। পরবর্তীতে ঘটনাটি কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলীকে লিখিতভাবে অবহিত করেন। নিম্নমানের ইট বালি ব্যবহার বন্ধে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প এলাকার অফিস কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে বিষয়টি জানিয়ে দেন। এরপরও করোনা সংক্রমণের সুযোগে গোপনে নির্মাণকাজ অব্যাহত রাখার বিষয়টি জানতে পেরে গত মাসে চকরিয়া সওজের উপ-সহকারী প্রকৌশলীসহ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ সরেজমিনে গিয়ে গাইড ওয়াল নির্মাণকাজে নিম্নমানের ইট ব্যবহার না করার জন্য বলায় সাময়িকভাবে কাজ বন্ধ রাখা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে স্থানীয় প্রকল্প ব্যবস্থাপক আবীর চৌধুরী। বাধাদানকারী সওজের কর্মচারীকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। হুমকির বিষয়টি অবান্তর দাবি করে আবীর চৌধুরী বলেন, চকরিয়া সড়ক বিভাগের কিছু কর্মচারীর পছন্দের ইটভাঁটি থেকে ইট কেনা হয়নি বলে ভালমানের ইট ব্যবহার করলেও তা নিম্নমানের বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু কুমার চাকমা বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক এবং আমার অফিসের লোকজনের সঙ্গে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির ঘটনা ঘটেছে এটি সত্য। অবশ্য ঘটনাটি উভয়পক্ষকে ডেকে সমাধান করা হয়েছে। চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, সড়ক নির্মাণ কাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের কারণে ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় সমাপ্ত হওয়া কাজের অংশ ভেঙ্গে যাচ্ছে।
×