ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তবু ফিটনেস ট্রেনিং চালিয়ে যাচ্ছেন ইব্রাহিম

প্রকাশিত: ২২:৩২, ২৮ জুন ২০২০

তবু ফিটনেস ট্রেনিং চালিয়ে যাচ্ছেন ইব্রাহিম

রুমেল খান ॥ দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। ফুটবল ক্যারিয়ান শুরুর সময় পরিবার থেকে (বাবা বন বিভাগের কর্মচারী মোহাম্মদ ইয়াসিন, গৃহিণী মা রোকেয়া বেগম) প্রবল বাধা পেয়েছিলেন। পরে ভাল খেলে সুনাম ও অর্থ উপার্জন করার সুবাদে পরিবার সেটা মেনে নেয়। যার কথা বলছি তার জন্ম ১৯৯৭ সালের ৭ আগস্ট। উচ্চতা ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি। কক্সবাজারের চকরিয়ার সন্তান। নামটি বলেই দিই। জাতীয় ফুটবল দলের প্রতিভাবান ও বসুন্ধরা কিংসের অপরিহার্য ফুটবলার। বিশ্বখ্যাত ফুটবলার ইব্রাহিমোভিচের সঙ্গে তার নামের অনেকটাই মিল আছে। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন। মোহাম্মদ ইব্রাহিমের কথাই বলছি। করোনাভাইরাসের কারণে দেশের খেলাধুলা তথা ফুটবল বন্ধ চার মাসেরও বেশি সময়। এই সময়টাই ফুটবলকে প্রচন্ড মিস করছেন সুদর্শন ইব্রাহিম। ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে এসেছেন মার্চের মাঝামাঝিতে। কিভাবে কাটছে তার করোনা-দিনলিপি? জনকণ্ঠকে জানান, ‘জরুরী না হলে বাইরে যাই না। ব্যাংকে যেতে হয় মাঝে মধ্যে। তখন মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরি। হাতে স্যানিটাইজার মাখি। বাইকে করে একা বাইরে যাই। কখনই ভিড়ের মাঝে যাই না। বাসায় ফিরে সাবান দিয়ে ভালমতো গোছল করি।’ ইব্রাহিম যে পাড়ায় থাকেন সেখানে এখনও কোন করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ এমনিতেই জনবহুল দেশ। তার ওপর অসচেতন হলে নিজের করোনা হবে, তখন অন্যদেরও হবে। এভাবে গোটা দেশের মানুষেরই হবে। নিজেরা সচেতন না হলে আর্মি-পুলিশ দিয়েও কিছু হবে না। আর নিজেরা সচেতন থাকলে পরিবার, পাড়া-প্রতিবেশী, জেলা তথা দেশ সুরক্ষিত থাকবে।’ প্রবাসী বাংলাদেশীরা বিমানযোগে দেশে ফেরার মাধ্যমে করোনার আমদানি করেছেন। তবে তাদের বিমানবন্দরে ঠিকমতো মনিটরিং না করাতেই এমনটা হয়েছে বলে মনে করেন ইব্রাহিম, ‘এয়ারপোর্টের কর্মীরা তাহলে কি করেছে? এত মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, এত মারা গেছে, তাও আমরা এখনও সচেতন হইনি। জাতি হিসেবে আমরা আসলে নিয়ম বা আইন-কানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নই।’ বসুন্ধরা কিংস এবং জাতীয় দলের টিম ম্যানেজমেন্টর নিদের্শমতো ফিটনেস ট্রেনিং চালিয়ে যাচ্ছেন ইব্রাহিম। স্থানীয় একটি স্কুল মাঠে (মালমঘাট আইডিয়াল স্কুল, এই স্কুলে শৈশবে পড়েছেন ইব্রাহিম) পড়ন্ত বিকেলে অনুশীলন করেন সপ্তাহে ৫/৬ দিন। তখন লোকজন থাকে না। লকডাউনের শুরুতে ওজন কিছুটা বেড়ে গিয়েছিল তার। এখন আবার নিয়ন্ত্রণে এনেছেন। তার ওজন এখন ৬৬ কেজি। ওজন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ডায়েন্ট মেইনটেনের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। জাতীয় দলের কোচ জেমি ডে ও বসুন্ধরা কিংসের কোচ অস্কার ব্রুজোন হোয়াটসএ্যাপে নিয়মিত ইব্রাহিমের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। ‘শুধু ফিটনেস নয়, আমার পরিবারের, আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার, সুখ-দুঃখ ... এসবেরও খোঁজ নিচ্ছেন।’ করোনাকালে ইব্রাহিম অবসর সময় কাটাচ্ছেন মোবাইলে বাবজি গেমস খেলে এবং অনলাইনে নিউজ পড়ে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক নাহলে কবে যে আবারও ফুটবল মৌসুম শুরু হবে তা বলা মুশকিল। কেননা দিন দিন অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। তারপরও ইব্রাহিম আশা করেন বাফুফে হয়তো শীঘ্রই মৌসুম শুরুর ঘোষণা দেবে। অক্টোবর-নবেম্বরে বাংলাদেশ দলের ৪টি বাছাইপর্বের ম্যাচ আছে। কোচ জেমি বলেছেন কিছু পয়েন্ট পেতে চান। তার সঙ্গে একমত ইব্রাহিমও। ইব্রাহিমের ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু ২০০৯ সালে, পাইওনিয়ার ফুটবল লীগের দল মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবীর হয়ে। তারপর তৃতীয় বিভাগ ফুটবলে সিটি ইউনাইটেড, চ্যাম্পিয়নশিপ লীগে কক্স সিটি, জাতীয় অনুর্ধ-১৬ ফুটবলে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র (দলের অধিনায়ক এবং ৫ গোল করে আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা), সুপার লীগে মুক্তিযোদ্ধা সিনিয়র দল, প্রিমিয়ার লীগে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, চট্টগ্রাম আবাহনী, সাইফ স্পোর্টিং হয়ে গত দুই মৌসুম ধরে বসুন্ধরা কিংসে। প্রিমিয়ার লীগে এ পর্যন্ত তার গোলসংখ্যা ১৬, আর জাতীয় দলে ১টি। গোল করার চেয়ে গোল করানোতেই তার বেশি আনন্দ-আগ্রহ। ঘরোয়া পর্যায়ে শিরোপা জিতেছেন ৪টি। এর তিনটিই কিংসের হয়ে (লীগ, স্বাধীনতা কাপ ও ফেডারেশন কাপ)। অপরটি চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে স্বাধীনতা কাপ। ক্লাব পর্যায়ে লেফটব্যাক পজিশনে খেললেও জাতীয় দলে খেলেন লেফট উইঙ্গার হিসেবে। জাতীয় দলে তার জার্সি নম্বর ১৯, বসুন্ধরা কিংসে ১৬। জাতীয় দলে কোচ হিসেবে জেমির মেয়াদ দুই বছরের জন্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ইব্রাহিমের অভিমত, ‘এটা দলের জন্য খুবই ভাল হয়েছে। একজন কোচকে সফল হতে গেলে তাকে অবশ্যই আরও বেশি সময় দেয়া উচিত। এতে কোচের সঙ্গে খেলোয়াড়দের বোঝাপড়া আরও ভাল হয়, তাতে দলের খেলার মানের উন্নতি ঘটে।’ উচ্চ মাধ্যমিকের পর আর লেখাপড়া করেননি লিওনেল মেসি, জাহিদ হোসেন, মামুনুল ইসলাম এবং জাহিদ হাসান এমিলির ভক্ত ইব্রাহিম। কারণটা অবশ্যই ফুটবল। লক্ষ্য- একবারের জন্য হলেও সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা। এমনভাবে ফুটবল খেলতে চান যেন অবসর নেয়ার সময় সবাই তাকে চেনে ও প্রশংসা করবে।
×