ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্বব্যাপী করোনায় আক্রান্ত কোটি ছাড়াল

প্রকাশিত: ২২:০৭, ২৮ জুন ২০২০

বিশ্বব্যাপী করোনায় আক্রান্ত কোটি ছাড়াল

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বিশ্বব্যাপী করোনা আক্রান্তের সংখ্যা শনিবার কোটি ছাড়াল। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৪৫৩ জন। মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৯৫২ জন। সুস্থ হয়েছেন ৫৪ লাখ ১৪ হাজার ৬৪৮ জন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ফের একদিনে রেকর্ড ৪০ হাজার মানুষ সংক্রমিত হলেন। শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলে ২৪ ঘণ্টায় প্রায় এক লাখের মতো আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। ব্রাজিলে পর পর তিনদিন ৪০ হাজারের বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। আর মেক্সিকোয় একদিনে আক্রান্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার। নতুন করে নিউজিল্যান্ড সংক্রমণের কবলে পড়েছে। চীনেও বাড়ছে করোনার প্রকোপ। ভারতে আবারও রেকর্ড আক্রান্ত হয়েছেন। লকডাউন দেয়া সত্ত্বেও পেরুর অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিবিসি, সিএনএন, গার্ডিয়ান, এনডিটিভি, রয়টার্স ও ওয়ার্ল্ডোমিটার ডট ইনফোর। বিশ্বব্যাপী করোনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে যাওয়া ওয়ার্ল্ডোমিটার ডট ইনফোর মতে, শনিবার পর্যন্ত সারাবিশ্বে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে এক কোটি ৪৫৩ জন। মারা গেছেন চার লাখ ৯৮ হাজার ৯৫২ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৫৪ লাখ ১৪ হাজার ৬৪৮ জন। চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও ৪০ লাখ ৫৪ হাজার ৮৫ জন। যাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন ৫৭ হাজার ৬৯৬ জন। একদিনে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৯৪ হাজার ১৯০ জন। মারা গেছেন চার হাজার ৮৯৩ জন। আগেরদিন আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৮০ হাজার ৬০১ জন। সেদিন মারা গেছেন পাঁচ হাজার ১৮৩ জন। ভারতে শনাক্ত ৫ লাখ ছাড়াল ॥ চীন ফেরত একজনের দেহে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়ার ১১০ দিন পর ভারতে শনাক্ত রোগী লাখ ছাড়িয়েছিল; আর বাকি ৪ লাখ যোগ হতে সময় লাগল মাত্র ৩৯ দিন। শতকোটিরও বেশি মানুষের দেশটিতে এভাবেই হু হু করে বাড়ছে কোভিড-১৯ রোগী। মৃত্যুর মিছিলও দীর্ঘ হচ্ছে। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ১৮ হাজার ৫৫২ জনের দেহে ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আগের ২৪ ঘণ্টাতে এ সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ২৯৬। লকডাউন শিথিলের পর থেকে দেশটিতে প্রতিদিনই শনাক্ত রোগী আগের দিনের রেকর্ড টপকাচ্ছে। সব মিলিয়ে দেশটিতে এখন সরকারী হিসাবেই কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা পাঁচ লাখ ১১ হাজার ৪৭৮ জনে দাঁড়িয়েছে। নতুন আরও ৩৮৪ জনের মৃত্যু নিয়ে মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ১৫ হাজার ৭৩১ তে। যুক্তরাষ্ট্রে ফের রেকর্ড সংক্রমণ ॥ যুক্তরাষ্ট্রে করোনা সংক্রমণ প্রতিদিনই আগের রেকর্ড ছাপিয়ে যাচ্ছে। নতুন ৪০ হাজার জনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে দৈনিক হিসাবে এ যাবতকালের মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ সংক্রমণ। এর আগেরদিন শনাক্ত হওয়া আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪০ হাজার ২১২ জন। সংক্রমণ বাড়তে থাকায় টেক্সাস, ফ্লোরিডা ও এ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্য বিধিনিষেধ শিথিলের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে। সংক্রমণ বেশি রাজ্যগুলোর মধ্যে টেক্সাসে লকডাউন শিথিলের পরিকল্পনায় সামনের সারিতে ছিল। এখন সেখানেই হাজার হাজার মানুষ নতুন করে সংক্রমিত হচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় গবর্নর গ্রেগ এ্যাবোট আপাতত লকডাউন শিথিল না করে বরং সবকিছু বন্ধ রাখারই ঘোষণা দিয়েছেন। টেক্সাসে রেকর্ড পাঁচ হাজার ৯৯৬ জনের ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন আরও ৪৭ জন। একমাসের মধ্যে দৈনিক হিসাবে এ সংখ্যা সর্বোচ্চ। ফ্লোরিডাও দৈনিক হিসাবে রেকর্ড সংক্রমণের পরিসংখ্যান জানিয়েছে। নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েছে আট হাজার ৯৪২ জনের। আগেরদিন সে সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার ৫০৮ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখন এক লাখ ২২ হাজার ৯৬০ এবং মারা গেছে তিন হাজার ৩৬৬ জন। ধীরে ধীরে সবকিছু চালু করার কোন পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন ফ্লোরিডার গবর্নর। এ্যারিজোনা এখন করোনা সঙ্কটের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। অঙ্গরাজ্যের রোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ্যারিজোনায় মহামারী নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। ক্যালিফোর্নিয়ায় নতুন শনাক্ত হয়েছিল রেকর্ড সাত হাজার ১৪৯ জন। এছাড়া, সংক্রমণে বিপর্যস্ত অন্যান্য অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে আছে, এ্যালাবামা, মিসিসিপি, মিসৌরি, নেভাডা, ওকলাহোমা, সাউথ ক্যারোলাইনা, আইডাহো ও ওয়াইওমিং। সব অঙ্গরাজ্যেই দৈনিক হিসাবে রেকর্ড সংক্রমণ ঘটেছে। একদিনে প্রায় এক লাখ আক্রান্ত ॥ নতুন করে করোনা সংক্রমণে ফের শীর্ষ দেশের তালিকায় চলে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে আরও ৪৭ হাজার ৯৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট সংক্রমণ দাঁড়াল ২৫ লাখ ৫২ হাজার ৭০৮ জন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৬৫৮ জন। এ নিয়ে দেশটিতে করোনা আক্রান্ত হয়ে মোট মারা গেলেন এক লাখ ২৭ হাজার ৬৩৫ জন। এর আগে গত কয়েকদিন ধরে প্রতিদিনই ৪০ হাজারের বেশি নতুন সংক্রমণ দেখেছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। গতকালও দেশটিতে প্রায় যুক্তরাষ্ট্রের সমপরিমাণ ৪৬ হাজার ৯০৭ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে ব্রাজিলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখন ১২ লাখ ৮০ হাজার ৫৪ জনে (যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেক) পৌঁছেছে। মোট মারা গেছে ৫৬ হাজার ১০৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে হাজারেরও বেশি মানুষ। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা ধারণা করছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত দুই কোটি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। দেশটির সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) বলছে, প্রকৃত তথ্য হলো প্রকাশিত সংখ্যার অন্তত ১০ গুণ বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ব্রাজিলে রেকর্র্ড সংক্রমণ ॥ লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে কোভিড-১৯ আক্রান্ত বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই এখন ৪০ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। এর ধারাবাহিকতায় নতুন করে ৪৬ হাজার ৯০৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন এক হাজার ৫৫ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৫৬ হাজার ১০৯ জনে। লাতিন আমেরিকার দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১২ লাখ ৮০ হাজার ৯২ জন। নতুন সংক্রমণের কবলে নিউজিল্যান্ড ॥ নিউজিল্যান্ডে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও দু’জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। সে দেশের স্বাস্থ্য দফতরের মহাপরিচালক এ্যাশলে ব্লুমফিল্ড জানিয়েছেন, আক্রান্ত দুইজনই ভারত থেকে সেখানে গেছেন। নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, দেশকে করোনামুক্ত ঘোষণার পর সেখানে ১৬ জন আক্রান্ত শনাক্ত হলো। নিউজিল্যান্ডে প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে। প্রথম ধাপে শনাক্ত হয় এক হাজার ১৫৪ জন করোনা রোগী। মৃত্যু হয় ২২ জনের। লকডাউন সত্ত্বেও ভয়াবহ অবস্থা পেরুর ॥ লাতিন আমেরিকায় সবার আগে ও সবচেয়ে কঠোর লকডাউন দেয়া দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম পেরু। তারপরও বর্তমানে আক্রান্তের হিসাবে বিশ্বের মধ্যে ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে তারা। দেশটির প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভিজকারার স্বীকার করেছেন, তাদের দেয়া লকডাউন ঠিকমতো কাজ করেনি। ব্রিটেনসহ বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশের অনেক আগেই গত ১৬ মার্চ লকডাউন জারি করে পেরু। বন্ধ করে দেয়া হয় দেশটির সীমান্ত, জারি করা হয় কার্ফু, অত্যাবশ্যক নিত্যপণ্য কেনা ছাড়া ঘরের বাইরেও যেতে পারেনি জনগণ। সম্প্রতি পেরুতে লকডাউনের সময়সীমা বাড়িয়ে জুনের শেষ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম দীর্ঘস্থায়ী লকডাউন চলছে সেখানে। এরপরও পেরুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ মৃত্যুর হার সেখানে। সরকারী হিসাবে, দেশটিতে সাড়ে আট হাজার মানুষ করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন, আক্রান্ত অন্তত দুই লাখ ৭২ হাজার। ব্রিটেন ছাড়া ইউরোপের বাকি সব দেশের চেয়ে পেরুতে করোনায় আক্রান্ত বেশি। প্রতি হাজারে মাত্র ছয়জনের করোনা টেস্ট করালেও লাতিন আমেরিকার অনেক দেশের তুলনায় বেশি টেস্ট করেছে পেরু। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা মোকাবেলায় দেশটির স্বাস্থ্যখাত প্রস্তুত ছিল না, যার কারণে অতিরিক্ত মৃত্যু ও সংক্রমণ দেখতে হচ্ছে। এর পাশাপাশি সেখানকার সামাজিক ও অর্থনৈতিক আরও কয়েকটি কারণ দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। যার মধ্যে একটি হচ্ছে বাজার। সরকারী হিসাবে, পেরুর ৪০ শতাংশ জনগণের বাড়িতে খাবার সংরক্ষণের জন্য রেফ্রিজারেটর নেই। যে জন্য খাবার কিনতে তাদের বারবার বাজারে যেতে হয়। পেরুর প্রেসিডেন্টের মতে, দেশটিতে করোনা বিস্তারের প্রধান উৎস কাঁচাবাজার। রাজধানী লিমার লা ভিক্টোরিয়া ফল বাজারের প্রায় ৮৬ শতাংশ বিক্রেতা মে মাসে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট বলেছেন, আমাদের ৪০ থেকে ৮০ শতাংশ বিক্রেতা আক্রান্ত রয়েছে। আপনি খাবার কিনতে গিয়ে আক্রান্ত হলেন, বাসায় সেই ভাইরাস নিয়ে ফিরলেন এবং সেখান থেকে পুরো পরিবারের সেটি ছড়িয়ে পড়ল। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশটিতে বাজার খোলা রাখার সময় সীমিত করে দেয়ায় ভিড় আরও বেড়েছে। ফলে সংক্রমণও ছড়িয়েছে দ্রুত। দেশটির সরকার এখন করোনা মোকাবেলা ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনার কথা ভাবছে। এছাড়া প্রায় ৭০ শতাংশ কর্মজীবী অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। স্বাভাবিকভাবেই তাদের কাজের ধরন অনিশ্চিত এবং অনেক সময় এতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাও সম্ভব হয় না। এ ধরনের কর্মীদের গণপরিবহনে যাতায়াত এবং অনেক সময় ভিড়ের মধ্যেই পণ্য বিক্রি করতে হয়। এতেও তাদের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাস। ব্যাংকগুলোকে করোনা সংক্রমণের অন্যতম উৎস হিসেবে উল্লেখ করেছেন স্বয়ং দেশটির প্রেসিডেন্ট। তাদের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ১২ শতাংশ করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষদের সহায়তার জন্য বরাদ্দ দিয়েছে দেশটির সরকার। উদ্যোগ প্রশংসিত হলেও সমস্যা বেধেছে ওই অর্থ পৌঁছানো নিয়ে। দেশটির মাত্র ৩৮ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্কদের ব্যাংকে এ্যাকাউন্ট রয়েছে। ডিজিটাল পেমেন্ট এক প্রকার অসম্ভব। এ কারণে বহু মানুষকে প্রণোদনার অর্থ নিতে স্বশরীরে ব্যাংকে যেতে হচ্ছে। ভিড় নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যাংকের কর্মঘণ্টা বাড়ালেও তাতে কমেনি সংক্রমণের হার। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, পেরুর ১১ দশমিক ৮ শতাংশ দরিদ্র মানুষ ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে বসবাস করে। এসব জায়গায় সামাজিক দূরত্ব রাখা অনেকটাই অসম্ভব। এর কারণেও দেশটিতে দ্রুত ছড়িয়েছে প্রাণঘাতী করোনা।
×