ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

হাসপাতালের পর হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যু ঘটছে সীমিত সংখ্যক জুনিয়র ডাক্তার দিয়ে চলছে হাসপাতাল করোনামুক্ত সনদ ছাড়া কোন রোগী ভর্তি করা হয় না

বেহাল চিকিৎসা ব্যবস্থা ॥ কোন নির্দেশনাই কাজে আসছে না

প্রকাশিত: ২১:৫৭, ২৮ জুন ২০২০

বেহাল চিকিৎসা ব্যবস্থা ॥ কোন নির্দেশনাই কাজে আসছে না

নিখিল মানখিন ॥ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক নির্দেশনার পরও সরকারী- বেসরকারী হাসপাতালে নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা সেবায় বেহাল দশা। পুরো চিকিৎসা সেক্টর ভুগছে করোনা আতঙ্কে। হাসপাতালের পর হাসপাতাল ঘুরেও রোগীদের চিকিৎসা সেবা না পেয়ে মৃত্যুর ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। প্রাইভেট চেম্বারগুলোতে চিকিৎসকের দেখা নেই। নিয়মিত কর্মস্থলে যাচ্ছেন না অধিকাংশ সিনিয়র চিকিৎসক। সীমিত সংখ্যক জুনিয়র চিকিৎসক দিয়ে নামমাত্র চালু রাখা হয়েছে হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কোভিড-১৯ এবং অন্য সব ধরনের রোগীকে পৃথক পৃথক ইউনিটে চিকিৎসা দেয়ার প্রস্তুতি নেই অনেক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের। আবার ‘করোনামুক্ত সনদ’ ছাড়া হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা গ্রহণ ও নতুন রোগী ভর্তি নেয়া হচ্ছে না। এই সনদ পাওয়াও এখন ভাগ্যের বিষয়। সব মিলিয়ে অনেকটা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে দেশের চিকিৎসা সেক্টর। গাইনি সমস্যা নিয়ে চারটি হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসকের সিরিয়াল পাননি মগবাজারবাসী সুফিয়া খাতুন। শেষ পর্যন্ত পরিচিত লোকজন ধরে মগবাজারের ইনসাফ বারাকা কিডনি এ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালে রবিবার (২৮ জুন) দুপুরে এক চিকিৎসকের সিরিয়াল নিশ্চিত করেছেন। শনিবার সকালে ইনসাফ বারাকা জেনারেল হাসপাতালের সামনে সুফিয়া খাতুনের স্বামী মোঃ ইয়াকুব আলী জনকণ্ঠকে জানান, দেড় সপ্তাহ ধরে এ পর্যন্ত চারটি হাসপাতালে গাইনি চিকিৎসক খুঁজেছি, পাইনি। দু’টি হাসপাতালে সপ্তাহে একদিন করে চিকিৎসক বসেন বলে সিরিয়াল মিলেনি। করোনা সনদ ছাড়া সিরিয়াল দিতে চায়নি। শেষ পর্যন্ত পরিচিত লোকের মাধ্যমে ইনসাফ বারাকা হাসপাতালে সিরিয়াল নিশ্চিত করেছি। এই হাসপাতালেও সপ্তাহে একদিনই চেম্বারে চিকিৎসক বসেন বলে জানান মোঃ ইয়াকুব আলী। ফলোআপ করাতে জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে গিয়েছিলেন ধানম-ি সাত মসজিদ রোডের বাসিন্দা মোঃ বেলাল হোসেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের দেখা পাননি। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, দু’বছর আগে তার হার্টে একটি রিং বসানো হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে সেই জায়গায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। যে চিকিৎসকের মাধ্যমে রিং বসানো হয়েছে, সেই চিকিৎসক নিয়মিত হাসপাতালে যান না বলে তিনি হাসপাতালের কর্মচারীদের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন। মোবাইলে কল দিয়েও চিকিৎসকের সাড়া মিলেনি বলে জানান মোঃ বেলাল হোসেন। রামপুরা বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা মোঃ সাইফুল (৪৫) গত বছরের মাঝামাঝিতে এক সড়ক দুর্ঘটনায় হাঁটুতে মারাত্মক আঘাত পেয়েছিলেন। চিকিৎসার পর তা ভাল হয়ে যায়। কিন্তু গত মাসের শেষ দিকে হাঁটুতে ব্যথা অনুভূত হয়। সেই সঙ্গে শরীরে ছিল সামান্য জ্বর। সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট কোনটাই ছিল না। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে (পঙ্গু হাসপাতাল) তিনি ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলেন। জ্বর থাকার কথা শুনতেই চিকিৎসক আমাকে করোনা রোগীদের জন্য নির্বাচিত হাসপাতালে যেতে বলেন। বারবার বলার পরও অনেক আগের সড়ক দুর্ঘটনায় আঘাত পাওয়ার বিষয়টি শুনতেই চাননি চিকিৎসক। এক পর্যায়ে জরুরী বিভাগের ওই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা কাটাকাটি করে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসেন। পরবর্তীতে এলাকার একটি ক্লিনিকে সাময়িক চিকিৎসা গ্রহণ করে হাঁটুর ব্যথা কমানো হয়েছে বলে জানান মোঃ সাইফুল। সর্দি, জ্বর, কাশি নিয়ে রাজধানীর ধানমন্ডির সেন্ট্রাল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে গিয়েছিলেন পশ্চিম রাজাবাজারের বাসিন্দা জুবায়ের আহমেদ (৩৭)। সর্দি, জ্বর ও কাশির কথা শোনার পর তাকে চিকিৎসক দেখানোর সুযোগ দেয়া হয়নি। মোঃ জুবায়ের জানান, পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালেও আমি একই পরিস্থিতির শিকার হয়েছি। আশপাশে সরকারী হাসপাতাল না থাকায় শমরিতা হাসপাতাল থেকে বিতাড়িত হয়ে সেন্ট্রাল হাসপাতালে গিয়েছিলাম। ডাক্তার দেখানোর সুযোগ না দিয়ে আমাকে সরকারী হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে জানান মোঃ জুবায়ের আহমেদ। এভাবে প্রতিদিন চিকিৎসা সেবা না পেয়েই শত শত রোগীর বিভিন্ন সরকারী- বেসরকারী হাসপাতাল থেকে বিদায় নেয়ার ঘটনা ঘটছে। চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা। কার্যকর হয়নি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ॥ দেশে করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত করোনা আতঙ্কে ভুগছে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা সেক্টর। একের পর এক রোগী ফিরিয়ে দেয়ার প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকদের জন্য বেশ কয়েকটি নির্দেশনা প্রদান করেছে। কিন্তু নির্দেশনাসমূহ কার্যকর হয়নি। গত ২৪ মে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের করোনা প্রতিরোধ স্বাস্থ্য মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব মোঃ মাইদুল ইসলাম প্রধান স্বাক্ষরিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় বলা হয়, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে নন কোভিড রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে দেশের সকল হাসপাতালে কোভিড-১৯ চিকিৎসার পাশাপাশি নন-কোভিড রোগীদেরও চিকিৎসা প্রদানের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৩টি জোরালো নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনাগুলো হচ্ছে- সকল বেসরকারী হাসপাতাল/ ক্লিনিকসমূহে সন্দেহভাজন কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য পৃথক ব্যবস্থা থাকতে হবে। এর আগে গত ১১ মে সরকারী হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার বিষয়ে একটি নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। ওই চিঠিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা পেতে সাধারণ রোগীরা সমস্যায় পড়ছেন। দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সার এবং অন্য জটিল রোগের চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বাধা পাচ্ছেন। ওই চিঠিতে সব সরকারী হাসপাতালে কোভিড-১৯ সন্দেহে আসা রোগীদের চিকিৎসায় আলাদা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, কোনভাবেই রোগীদের ফেরত না পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। এছাড়া যারা দীর্ঘদিন ধরে ডায়ালাইসিস করছেন, কোভিড-১৯ হাসপাতাল থেকে ডায়ালাইসিসের জন্য স্থানান্তর করা হয়েছে এবং হৃদরোগ ও অন্যান্য জটিল রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত না হলে তাদের চিকিৎসা অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল ওই চিঠিতে। এভাবে গত ৩০ এপ্রিল পাঠানো স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, সরকারী হোক বা বেসরকারি- যে কোন হাসপাতালে করোনা সন্দেহভাজন রোগী এলে তা স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষে জানাতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডাঃ নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনায় বলা হয়, সরকারী বা বেসরকারী হাসপাতালে কোন মুমূর্ষু রোগী কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত বলে যদি সন্দেহ হয়, কোন কারণে ওই হাসপাতালে ভর্তি করানো যদি সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে রোগীকে অপেক্ষমাণ রেখে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষের চারটি নম্বরের যে কোনটিতে ফোন করে ওই রোগীর চিকিৎসা বা ভর্তি-সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ নিতে হবে বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এপ্রিলের শুরুতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে আরেকটি এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন নির্দেশনা আমলে নিচ্ছে না হাসপাতালগুলো। করোনামুক্ত সনদ ॥ হাসপাতালগুলোতে ভর্তি চিকিৎসাগ্রহণ ও ভর্তি হতে যাওয়া রোগীদের কাছে আতঙ্কের নাম ‘করোনামুক্ত সনদ’। বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত এবং মুমূর্ষু রোগীদের কাছে আতঙ্কের মাত্রা যেন কয়েক গুণ বেশি। ‘করোনামুক্ত সনদ’ ছাড়া সরকারী ও বেসরকারী বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা মিলছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। করোনার নমুনা টেস্ট করেই এই করোনামুক্ত সনদ পাওয়া সম্ভব। এমন শর্ত পূরণ করতে কিডনি, লিভার, ক্যান্সার, হৃদরোগসহ জটিল জটিল অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করার লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। ল্যাবরেটরিতে গেলেই মিলছে না করোনার নমুনা পরীক্ষা। নানা বিড়ম্বনা পেরিয়ে পরীক্ষা করার সুযোগ পেলেও রিপোর্ট পেতে কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা না পেয়ে রোগীদের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। নমুনা পরীক্ষার অপেক্ষাধীন অবস্থায় ইতোমধ্যে বেশ কিছু সংখ্যক জটিল ও মুর্মূষু রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। একের পর এক নির্দেশনা দিয়েও হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে পারছে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিদের্শনা দিলেই হবে না, মনিটরিং করতে হবে ॥ আইইডিসিআর’র উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাঃ মুশতাক হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, চিকিৎসক-নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা যারা দিচ্ছেন তাদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারলেই কেবল এ সমস্যার সমাধান হবে। একইসঙ্গে যারা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ রয়েছে তাদের উচিত হবে প্রতিটি সেকশনের সবার কাজ সুনির্দিষ্টভাবে ভাগ করে দেয়া। দরকার হলে যেসব হাসপাতালে টেস্ট হচ্ছে সেখানে পাঠাবে অথবা সেসব সেন্টার থেকে এসে স্যাম্পল নিয়ে যেতে হবে। এভাবে করলে চিকিৎসা নিয়ে যে অনিশ্চয়তা হচ্ছে সেটা কেটে যাবে। কিন্তু এ অবস্থার শেষ হতে হবে এর কোন বিকল্প নেই। তিনি আরও বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও রোগীদের আস্থা অর্জন করতে হবে। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ বলেন, ঝুঁকি নিয়েও দায়িত্ব পালন করছেন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। সন্দেহজনক করোনা রোগীদের তাদের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে পাঠিয়ে দেয়া হয়ে থাকে। এখন রোগীদের মধ্যেই করোনা আতঙ্ক বেশি কাজ করছে। হাসপাতালগুলোতে যাওয়া রোগীর সংখ্যা অনেক হ্রাস পেয়েছে। অতি প্রয়োজন বা জটিল কোন সমস্যা না হলে হাসপাতালমুখী হচ্ছেন না অনেক সাধারণ রোগী। আর করোনা আক্রান্ত হয়ে একের পর এক হাসপাতালের সার্বিক কার্যক্রম হুমকিতে পড়ার কারণেও রোগী ভর্তি নেয়ার ক্ষেত্রে একটু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছে। এক সময় এটা দূর হয়ে যাবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগী ভর্তি সংক্রান্ত নির্দেশনা বাস্তবসম্মত নয় উল্লেখ করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ জাফর আহমেদ লতিফ বলেন, শুধু নির্দেশনা দিলেই তো হয় না, সেটি কার্যকরের বিষয়ও এর সঙ্গে জড়িত থাকে। হাসপাতাল থেকে রোগী ফিরিয়ে দেয়া যাবে না- এই নির্দেশনা দেয়ার আগে সব হাসপাতালে মানসম্মত পিপিই ও মাস্ক সরবরাহ করা প্রয়োজন । আবার রোগীর লক্ষণ-উপসর্গ দেখে চিকিৎসক স্বাস্থ্য অধিদফতরের হটলাইনে ফোন করে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা নেবেন, এটিই বা কেমন কথা? এমবিবিএস পাস করা একজন চিকিৎসক কি বুঝবেন না রোগীর জন্য কী করতে হবে? বেসরকারী হাসপাতাল কেন, কোন সরকারী হাসপাতাল কি ওই নির্দেশনা মানছে? কারণ, করোনা পজিটিভ রোগীরাও তথ্য লুকিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এটি সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ওপর ঝুঁকি তৈরি করছে। সুতরাং বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে বলে মনে করেন ডাঃ জাফর আহমেদ লতিফ। সরকারী হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি না নেয়া বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগত রোগীদের ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সম্প্রতি সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। হাসপাতালে আগত রোগীকে করোনা আক্রান্ত বলে সন্দেহ হলেও তাকে তাৎক্ষণিক বিদায় করে দেয়া যাবে না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে রোগী কোন হাসপাতাল যদি কাউকে সন্দেহজনক মনে করে তখন সে হাসপাতাল থেকেই নমুনা সংগ্রহ করবে। যদি রোগী পজিটিভ হন তাহলে তাকে ‘করোনা হাসপাতালে’ পাঠানো হবে, আর যদি না হয় তাহলে সেখানেই তাকে চিকিৎসা সেবা দিতে হবে। সাসপেক্টেড কিনা প্রথমেই বুঝবে কী করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাইন-সিম্পটম দেখে বুঝবে। দেখার পর যদি ঢাকায় হয় তো তারা (সেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ) করোনা রোগীদের জন্য নির্বাচিত হাসপাতালগুলোতে পাঠাবে। সেখানকার চিকিৎসকরা যদি মনে করেন তাকে ভর্তি নিতে হবে নেবে। যতক্ষণ না রোগীর পরীক্ষার ফল না আসে, ততক্ষণ রোগীকে তারা সেখানে এমন সাবধানতার সঙ্গে রাখবে যেন এক রোগী থেকে আরেক রোগী সংক্রমিত না হয়। কিন্তু সর্দি, কাশি দেখলেই হাসপাতালগুলো রোগী ফেরত দিচ্ছে, চিকিৎসা না পেয়ে রোগীরা মারা যাচ্ছেন এমন অভিযোগ জানালে তিনি বলেন, এখন থেকে নেবে- সে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ঢাকার বাইরে কী ব্যবস্থা জানতে চাইলে অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, সেখানে কিছু হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হয়েছে, আমরা আরও সংখ্যা বাড়াচ্ছি। বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে রোগী ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে এ বিষয়ে আপনাদের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেউ কিছু সাসপেক্ট করলে স্বাস্থ্য অধিদফতর, আইইডিসিআরসহ অন্য হটলাইনগুলোতে কল করবে, আমরা প্রতিকার করব। কিন্তু একটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে, তা হচ্ছে, এই মুহূর্তে চিকিৎসকদের শাস্তি দিয়ে যদি তাকে কাজ থেকে বিরত করা হয় তাহলে ডাক্তারের সংখ্যা কমে যাবে। কাজেই তাদের মোটিভেট করাটাই প্রধান অস্ত্র, তবে একদিনে এটা পরিবর্তন হবে তা নয়, সবাইকে সচেতন হতে হবে।
×